You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.17 | ভারত নয়, সামরিক অস্ত্রের যােগানদাররাই পাকিস্তানের বর্তমান দুর্দশার জন্য দায়ী - সংগ্রামের নোটবুক

ভারত নয়, সামরিক অস্ত্রের যােগানদাররাই পাকিস্তানের বর্তমান দুর্দশার জন্য দায়ী

পাকিস্তানের জনগণের প্রতি ভারত সহানুভূতিশীল।

 প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীর ঘােষণা 

পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী মনে করেছিলেন জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি কর্ণপাত করার কোনােই প্রয়ােজন নেই-তা সে জনগণ বাঙালিই হােন, বালুচিই হােন আর যেই হােন। পৃথিবীর ধনশালী রাষ্ট্রগুলি অস্ত্র যুগিয়ে পাকিস্তানকে এই রকম উদ্ধত করে তুলেছে এবং তারই পরিণতিতে আজ পাকিস্তানের এই হাল। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১২ ডিসেম্বর দিল্লীর রামলীলা ময়দানে ভাষণ দান প্রসঙ্গে এ কথা বলেন। সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠানের সংবাদে আরও প্রকাশ তিনি বলেন, পাকিস্তানের জনগণের প্রতি ভারত অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। কারণ পাকিস্তানের জনগণ বরাবর একটা মুষ্টিমেয় চক্রের দ্বারা শােষিত এবং নির্যাতিত হয়ে এসেছেন। পাকিস্তানের প্রকৃত অবস্থা যদি জনগণের সামনে তুলে ধরা হয় তাহলে তারা অবশ্যই দেশকে শশাষণ ও দারিদ্রমুক্ত করার জন্য গণতান্ত্রিক পথ বেছে নিবেন। তিনি ঘােষণা করেন, ভারত নয়, যারা কমিউনিজম ঠেকানাের নামে পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দিয়ে এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠরােধে মদত জুগিয়েছে তারাই পাকিস্তানের বর্তমান দুর্দশার জন্য দায়ী। কারণ এই সামরিক সাহায্যই পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকরা মদোন্মত্ত হয়ে মনে করেছিল যে বুলেটের জোরেই তারা জনগণের গণতান্ত্রিক অভিলাকে চিরদিন দমিয়ে রাখতে পারবে। তিনি বলেন বাংলাদেশ একটা বাস্তব সত্য।

পাকিস্তানী বাহিনীর উচিত এই সত্যি উপলব্ধি করে নিজেদেরই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। তাহলে পরবর্তীকালে সম্প্রীতি সম্পর্ক কিছুটা থাকতে পারে। বর্তমান লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন-এই লড়াইয়ে জাতি-ধর্ম ভাষা ও রাজনীতির পার্থক্য ভুলে সকলে এক জাতি, এক প্রাণ, এক প্রতিজ্ঞায় অটল। আজ সারা দেশের নর নারী কাঁধে কাঁধ মিলিয়া গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্যে সংগ্রাম করেছে। তিনি বলেছেন পৃথিবীতে এমন দেশ নেই যেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নেই। আমাদের সংগ্রাম একটি নীতির সংগ্রাম। সে নীতি হচ্ছে স্বাধীনতার অধিকার সকলেরই জন্মগত। দাবি ন্যায্য হলে সকলেরই তার জন্য আওয়াজ তােলার অধিকার আছে।

তিনি আরাে ঘােষণা করেন, পৃথিবীর কোনাে শক্তি স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য জনগণের সংগ্রামকে স্তব্ধ করতে পারবে না এবং যে জনসাধারণ বর্বরতা থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন করছেন ভারতবর্ষ তাদের সাহায্য করে যাবে। বিশ্বের কোনাে শক্তি ভারতকে এই সিদ্ধান্ত থেকে নিরস্ত করতে পারবে না। ভারত গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পথে ক্রমাগত এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা ভারতীয়রা এক মহান সভ্যতার উত্তরাধিকারী। বিপদ ও হুমকীর কি ভাবে মােকাবিলা করতে হয় তা আমরা জানি। শত্রুর মুখােমুখি কীভাবে দাঁড়াতে হয় তাও আমরা জানি। ব্রিটিশ শাসকরা কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা দমনের চেষ্টা করেছিলেন এবং কীভাবে সেই স্বাধীনতা আমরা আদায় করেছি তাও কারাে অজানা নয়। শ্রীমতি গান্ধি ভবিষ্যতে কঠিন দিনের কথা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ঐক্য ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে অবস্থার মােকাবিলা করতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমাদের জওয়ানরা সীমান্তরক্ষা করছেন। সারা দেশ তাদের কৃতিত্বে গর্বিত।

পশ্চিমবঙ্গ : ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

Reference:

গণমাধ্যমে-বাংলাদেশের-মুক্তিযুদ্ধ – মুনতাসীর মামুন