You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.01 | পূর্ব বাঙলায় গণহত্যা বন্ধের জন্য সংসদে সর্বসম্মত দাবি গণতান্ত্রিক জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ব বাঙলায় গণহত্যা বন্ধের জন্য সংসদে সর্বসম্মত দাবি
গণতান্ত্রিক জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ

নয়াদিল্লী, ৩১ মার্চ (ইউ এন) – পূর্ব বাঙলার মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠার জন্য যে লড়াই চালাচ্ছেন, আজ ভারতের পার্লামেন্টের উভয় সভা তার প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সংহতি জানিয়ে পশ্চিম পাক সরকারের কাছে দাবি করেছেন যে, পূর্ব বাঙলার নিরস্ত্র অসহায় মানুষের উপর অস্ত্র প্রয়ােগ ও ব্যাপক গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করা হােক।
লােকসভা ও রাজ্যসভায় উপরােক্ত মর্মে প্রস্তাব উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী প্রবল হর্ষধ্বনির মধ্যে ভারতীয় পার্লামেন্টের এই গভীর প্রত্যয় ঘােষণা করেন যে পূর্ব বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের জয় অবশ্যম্ভাবী। তিনি বলেন পূর্ব বাংলার মানুষের সগ্রাম আত্মবলিদানের পিছনে সারা ভারতের জনসাধারণের সহানুভূতি ও সমর্থন রয়েছে।
উভয় সভায়ই সর্বসম্মতভাবে বিনা বিতর্কে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
এই প্রস্তাবে সমস্ত পৃথিবীর জনগণ; সরকারগুলির কাছে পূর্ববঙ্গের গণহত্যা বন্ধ করার জন্য পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে আশু গঠন মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী প্রথমে লােকসভায় ও তারপরে রাজ্যসভায় একই রকমের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। লােকসভায় গৃহীত প্রস্তাবের পূর্ণ পাঠ নিচে দেওয়া হলঃ
“পূর্ববঙ্গের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে এই সভা গভীর বেদনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাঠানাে সশস্ত্র বাহিনীর দ্বারা পূর্ববাংলার সমগ্র জনগণের বিরুদ্ধে বিপুল আক্রমণ শুরু করা হয়েছে। তাদের আশা আকাঙ্খা দমন করার উদ্দেশ্যে।
“১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে এমন নির্ভুলভাবে অভিব্যক্ত জনমতকে মর্যাদা দান করার বদলে পাকিস্তান সরকার জনতার দাবিকে লঙ্ঘন করার পথ বেছে নিয়েছে। বৈধভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পাকিস্তান সরকার শুধু যে অস্বীকার করেছেন তাই নয়, উপরন্ত স্বৈরাচারীভাবে জাতীয় পরিষদকে তার ন্যায্য ও সার্বভৌম ভূমিকা গ্রহণ করতে বাধা দিয়েছে। পূর্ব বাংলার মানুষকে নগ্ন বলপ্রয়ােগের দ্বারা, বেয়নেট, মেসিনগান, ট্যাঙ্ক, কামান ও বিমান দিয়ে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
“ভারতের সরকার ও জনগণ সব সময়েই পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, স্বাভাবিক ও সৌভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে চেয়েছে ও সেই সম্পর্ক গড়ে তুলবার জন্য চেষ্টা করেছে। ভারতের অবস্থানের কারণে এবং বহু শতাব্দীর ইতিহাস সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বন্ধনে যে হেতু এই উপমহাদেশের জাতিসমূহ পরস্পরের সঙ্গে আবদ্ধ, সেই হেতু আমাদের সীমান্তের এতাে কাছে সংঘটিত শােচনীয় ট্রাজেডী সম্পর্কে এই সভা উদাসীন থাকতে পারে না। নিরস্ত্র ও নির্দোষ মানুষের উপরে যে নজিরবিহীন অত্যাচার চালানাে হচ্ছে, আমাদের দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত মানুষ তাকে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দা করেছে।
“পূর্ব বাংলার মানুষ তাঁদের গণতান্ত্রিক জীবনযাত্রার জন্য যে লড়াই চালাচ্ছেন, এই সভা তার প্রতি গভীর সহানুভূতি ও একাত্মবােধ প্রকাশ করছে।
“শান্তির প্রতি ভারতের স্থায়ী আগ্রহের কথা মনে রেখে ও মানবিক অধিকার রক্ষায় যেহেতু আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেই হেতু এই সভা অবিলম্বে বলপ্রয়ােগ বন্ধ ও অসহায় মানুষদের ব্যাপক হত্যা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে। এই সভা সমস্ত পৃথিবীর জাতিসমূহ ও সরকারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, পাকিস্তান সরকার যাতে অবিলম্বে ধারাবাহিকভাবে মানুষ হত্যা যা কার্যত গণহত্যা, তা-বন্ধ করেন তার জন্য জরুরী, গঠনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
“এই সভা তার এই গভীর প্রত্যয় প্রকাশ কছে যে পূর্ববাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ঐতিহাসিক অভ্যুত্থান জয়ী হবেই। এই সভা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে, তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ ভারতের মানুষের আন্তরিক সহানুভূতি ও সমর্থন লাভ করবে।”

সূত্র: কালান্তর, ১. ৪. ১৯৭১