বাঙলাদেশের মুক্তাঞ্চলে পুনর্গঠনের কাজ চলেছে
[বিশেষ সংবাদদাতা]
বাঙলাদেশে মুক্তিবাহিনী একের পর এক এলাকা মুক্ত করার সাথে সাথে মুক্তঞ্চলে পুনর্গঠনের কাজেও হাত দিয়েছে। অনেক জায়গাতেই বাঙলাদেশ সরকারের প্রশাসন আবার চালু হয়েছে। কাজেই দেখা দিয়েছে ব্যাপক এলাকাতে পুনর্গনের কাজ।
দক্ষিণ পশ্চিম বাঙলাদেশের যশাের, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল আর পটুয়াখালীর ব্যাপক এলাকা এখন মুক্ত। এর মধ্যে আবার বরিশাল, বরিশাল, ফরিদপুর, পটুয়াখালী সহর সম্পূর্ণ মুক্ত। এসব এলাকাতে জেলা ভিত্তিতেই বাঙলাদেশ সরকারের প্রশাসন চালু হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ বসে কমিটিও তৈরি করেছে।
উত্তর পশ্চিম বাঙলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর জেলার মুক্তাঞ্চলেও ব্যাপক ভাবে চলছে এই পুনর্গঠনের কাজ। চলছে সিলেট ও চট্টগ্রাম অংশেও। ঢাকার অদূরবর্তী কয়েকটি থানাতেও মুক্তিবাহিনী নিজ শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। কুমিল্লা জেলার মুক্তাঞ্চল সম্পর্কে যে খবর পাওয়া গেছে তাতে জানা যায় সেখানেও পুনর্গঠনের কাজ অনেক এগিয়ে গেছে। এই জেলার একটি জায়গায় ৪৫ বর্গ কিলােমিটার এলাকা নিয়ে জেলা প্রশাসনিক কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। এই কেন্দ্রটিতে ৩০টি খানার বেশি গ্রাম রয়েছে। রয়েছে কসবা, মন্দভাগ, সালদা, নারায়ণপুর প্রভৃতি রেল স্টেশনগুলাে। এসব জায়গাতে আভ্যন্তরীন যােগাযােগ ব্যবস্থাও চলছে পূর্ণোদ্যমে ।
মুক্ত এলাকাতে মুক্তিবাহিনী এই পুনর্গঠনের প্রথম যে কাজ হাত দিয়েছে তা হলাে প্রতিরক্ষা। এই প্রতিরক্ষায় কাজও দু ধরনের। সামরিক ও বেসামরিক। সামরিক প্রতিরক্ষার দুই শাখার একদিক রয়েছে গেরিলা বাহিনী। যাদের কাজ হচ্ছে অতর্কিত আক্রমণ করে শত্রু সেনাদের ঘায়েল করা। আর রয়েছে। নিয়মিত বাহিনী। গেরিলা যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবেই প্রতিনিয়ত এই নিয়মিত বাহিনীর সৈন্য বেড়ে চলেছে।
বিভিন্ন মুক্তাঞ্চলের মধ্যে মুক্তিবাহিনী বেসামরিক প্রতিরক্ষার যে কাজে হাত দিয়েছে তা হলাে এলাকায় শান্তি রজায় রাখা। যে সমস্ত লােক শত্রু বাহিনীর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করছে তাদের প্রতিরােধ করা। আর কিছু কিছু লােক এই ডামাডােলের সুযােগ লুঠ বা চুরি ডাকাতির প্রচেষ্টা চালাতে পারে তাদের শাস্তি প্রদান। করা।
এর পরই মুক্তাঞ্চলের কাজ হচ্ছে অন্তত প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত স্কুলগুলােকে চালু করা। সঙ্গে সঙ্গে ডাক ও তার বিভাগ চালু করে এলাকার যােগাযােগ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা।
খানসেনাদের প্রতিরােধের সময় মুক্তিবাহিনী যে সব পুল ও বাধ ধ্বংস করে দিয়েছেল মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠার পর সেগুলােকে পুনর্নির্মাণের কাজেও মুক্তিবাহিনী হাত দিয়েছে।
ফরিদপুর ও বরিশালের জেলা শহরে যেসব পাকিফৌজ ছিল গেরিলা আক্রমণের ভয়ে তারা ঢাকার দিকে সরে গেছে। তাই শহর এলাকাতেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। জেলা-শহরে সাধারণ মােকদ্দমা বিচারের জন্য বিচারক নিযুক্ত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী তাদের সর্বশক্তি দিয়ে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলেছে। কিছু কিছু দুস্কৃতিকারীদের যথার্থ বিচারের পর কারাগারেও পাঠানাে হয়েছে। ডাক ও তার বিভাগও সাধারণভাবে কাজকর্ম চালু করেছে। জমি হস্তান্তরের জন্য সাবরেজিস্ট্রি অফিস, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন, শুল্ক বিভাগের কার্যাবলী পূর্বের ন্যায় স্বাভাবিকভাবেই চলছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে গেছে। প্রতি থানায় একটি করে চিকিৎসালয়ও স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে রােগী ও আহতদের চিকিৎসা চলছে। স্বাস্থ্য বিভাগের লােকেরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকের সহায়তায় জনসাধারণকে কলেরা প্রতিষেধক-টীকা দিচ্ছেন।
প্রশাসনিক ব্যবস্থা সুদৃঢ় করা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জনগণের মনােবল সুদৃঢ় করার জন্য বিভিন্ন স্থানে জনসভা করছেন। কয়েকটি জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র: সপ্তাহ, ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১