বাঙলাদেশে পাক ফৌজী বর্বরতা অবিশ্বাস্য কিন্তু সন্দেহাতীত
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ৩১ মে-“ওআর অন ওয়ান্ট” এর সভাপতি মিঃ ডােনাল্ড চেসওঅর্থ এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য মিঃ এম বার্নেস বাঙলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের শিবির পরিদর্শনের পর আজ এখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পূর্ব-বাঙলার পাকিস্তানী ফৌজের বর্বরতা ও হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সন্দেহের কোনও কারণ নেই এবং পাকিস্তানকে যেসব দেশ অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য দিয়েছে, তাদের দায়িত্ব রয়েছে পাকিস্তানের উপর প্রয়ােজনীয় চাপ সৃষ্টি করার-যাতে পূর্ব বাঙলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহৃত হয় এবং সেখানকার প্রশ্নের একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক মীমাংসা সম্ভব হয়।
মিঃ বার্ণেস বলেন, যদি ধরা যাক ৬ মাস পরেও এই সমস্যা অসমাধিত থাকে মুক্তিফৌজের শরণার্থীদের আগমণ অব্যাহত থাকে, তা হলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়বে এবং তাতে একটা গুরুতর পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। বাঙলাদেশের বর্তমান ট্রাজেডির সমাধানের একটা উপায় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলিকে অবশ্যই বার করতে হবে।
যে সব দেশ পাকিস্তানকে অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য দিয়েছে, এই ব্যাপারে তাদের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে মিঃ বার্ণেস বলেন, পাকিস্তানের সমস্ত নাগরিকের উন্নয়ন ও প্রতিরক্ষার জন্য যে সাহায্য ও অস্ত্র দেওয়া। হয়েছিল; পাকিস্তান সরকার তাকে ঐদেশের অধিবাসীদের এক অংশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। কোনও দেশ এবং পাকিস্তান যাতে সাহয্যের এহেন অপব্যবহার না করতে পারে, তার জন্য পাকিস্তানের উন্নয়নমূলক সাহায্য ও অস্ত্র সাহায্যদানকারী দেশগুলির একত্রে বসে একটা উপায় বার করা উচিত। তিনি জানান।
‘এইড কনসাের্টিয়ম” (সাহায্য দানকারী রাষ্ট্রপুঞ্জ) আগামী জুলাই মাসে বৈঠকে মিলিত হয়ে এ বিষয়ে তাদের ইতিকর্তব্য স্থির করবে।
মিঃ ডােনাল্ড চেস ওয়ার্থ জানান যে, গত বছর পূর্ববঙ্গে ঘুর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষের সাহায্যের সাহায্যের জন্য তাদের বেসরকারী সাহায্য সংস্থা ১৫ লক্ষ পাউন্ড সগ্রহ করে যার অধিকাংশই ব্যয়িত হয় নি। তাঁরা এখন মনে করেন, ঐ টাকার একটা অংশ পূর্ববঙ্গ থেকে ভারতে আগত শরণার্থীদের জন্য ব্যয়িত হওয়া উচিত। কিন্তু ঐ টাকা যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গতের সাহায্যর্থে সংগৃহীত হয়ে ছিল সেই হেতু শরণার্থীদের জন্য ঐ টাকা ব্যয় করায় আইনগত জটিলতা আছে। তাদের এখানে আসবার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, শরণার্থীদের মধ্যে পূর্বাঙলার ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষ আছে কিনা তা নির্ধারণ করা। তারা পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে নিঃসন্দেহে হয়েছেন যে, ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত এলাকার-যেমন দক্ষিণ ত্রিপুরার মানুষও দলে দলে এপার বাঙলায় চলে এসেছেন। সুতরাং তারা এই সাহায্য পেতে পারেন।
তিনি বলেন, পূর্ববাঙলায় যা হচ্ছে, তা এমনি অবিশ্বাস্য ও অবর্ণনীয় যে, দেশে ফিরে গিয়ে ইংল্যান্ডের মানুষকে একথা বুঝানাে তাঁর পক্ষে কঠিন হবে যে, তিনি বাঙলাদেশের ঘটনা সম্পর্কে যা বলছেন, তা অতিরঞ্জিত নয়।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ওপার বাঙলায় এক ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে, যা হয়তাে আকারে ১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষের মতােই ভয়াবহ হবে। ওখানে যা ঘটছে, তা যে শান্তির পক্ষে বিপদজ্জনক তাই নয়, সমস্যার আকার এতাে বড়াে যে, বাইরে থেকে তা অনুমান করা কঠিন। সমস্যার এ সঠিকভাবে উপলব্ধি করার জন্য ব্রিটেনের বহির্দেশীয় উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রীকে তিনি এখানে এসে অবস্থা দেখে যাবার প্রস্তাব করবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ব্রিটেন বাঙলাদেশের ব্যাপারে ১০ লক্ষ পাউন্ড সাহায্য দেবার কথা ঘােষণা করেছে। কিন্তু সমস্যার ব্যাপ্তি এবং ব্রিটেনের মতাে একটী শিল্পোন্নত দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই সাহায্য কমপক্ষে এক কোটি পাউন্ড হওয়া উচিত।
সূত্র: কালান্তর, ১.৬.১৯৭১