You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.25 | সিন্ধুপ্রদেশ কমিউনিস্ট পার্টি বাঙলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত করার জন্য ইয়াহিয়ার বিচার চায় | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

সিন্ধুপ্রদেশ কমিউনিস্ট পার্টি
বাঙলাদেশে গণহত্যা সংঘটিত করার জন্য ইয়াহিয়ার বিচার চায়
পাকিস্তানের ভারত-বিরােধিতাকে ধিক্কার
(বিশেষ প্রতিনিধি)

নয়াদিল্লী, ২৪ জুলাই- ইয়াহিয়া খান যখন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের রণহুঙ্কার দিচ্ছেন, ঠিক সে সময় সিন্ধু প্রদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সামরিক শাসকের ভারত-বিরােধী প্রচারকে তীব্র ভাষায় ধিক্কার জানিয়ে পাকিস্তানের জনগণের কাছে পূর্ববঙ্গে সংঘটিত গণহত্যা এবং সমগ্র পাকিস্তানের জণগণের বিরুদ্ধে বিবিধ অপরাধের শাস্তিরূপ ইয়াহিয়ার গ্রেপ্তার, বিচার এবং যথােপযুক্ত দণ্ড বিধানের দাবি জানিয়েছে।
‘নিউ এজ পত্রিকার সূত্রে প্রকাশ, গত ২৯ জুন পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সিন্ধু প্রাদেশিক কমিটি একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে গােপনে সেটি সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানে প্রচার করে। সাধারণভাবে পাকিস্তানের মেহনতী জনগণ ও দেশপ্রেমিক এবং বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণীর জন্য গৃহীত ঐ প্রস্তাবে বর্ণিত কর্তব্যগুলি নিম্নরূপঃ
“জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার, তাঁদের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে রাখা এবং সংগ্রামের আকাঙ্খকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য শাসকচক্র যে ভারত বিরােধিতা চালাচ্ছে তা উদঘাটিত করা;
“সামরিক আইন প্রত্যাহার, সামরিক বাহিনীকে ব্যারাকে পুনঃপ্রত্যাবর্তনে বাধ্য করা, পূর্ববঙ্গের জনগণের উপর সংঘটিত গণহত্যা বন্ধ, এই গণহত্যার জন্য দায়ী ইয়াহিয়া খান ও অন্যান্যদের গ্রেপ্তার ও প্রকাশ্য বিচার, শেখ মুজিবর রহমান সহ সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি, আওয়ামী লীগ ও পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি সহ সকল রাজনৈতিক দলের উপর আরােপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সংবাদপত্র ও তথ্য প্রচারের উপর আরােপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে নাগরিক স্বাধীনতা ও জাতীয় অধিকারসহ পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকারের পুনঃ প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক কার্যকলাপের উপর বিধিনিষেধ অপসারণ, পূর্ববঙ্গের জনগণের একমাত্র আইন-সঙ্গত সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারকে স্বীকৃতি দান এবং কেন্দ্রে জনগণ দ্বারা ইতােমধ্যেই নির্বাচিত পুরােপুরি সার্বভৌম এক জাতীয় পরিষদের কাছে একমাত্র দায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল, অর্থাৎ আওয়ামী লীগের একটি সরকার গঠনের দাবিসমূহের ভিত্তিতে জনগণকে সংগঠিত করা।”

পশ্চিম পাকিস্তান ন্যাপ সাধারণ সম্পাদক অন্তরীণ
বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র মুক্তিযুদ্ধে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা গেল, “বাঙলাদেশে ইয়াহিয়া গােষ্ঠীর গণহত্যার নীতির বিরােধিতা করার দরুন” পশ্চিম পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক, সংগ্রামী বেলুচ নেতা ও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য জনাব মীর গাউস বখশ বেজেঞ্জোকে পাক শাসকগােষ্ঠী গৃহান্তরীণ করে রেখেছে। এই সংবাদ করাচী থেকে বিলম্বে প্রাপ্ত বলে প্রকাশ। যথাসময়ে ব্যবস্থা না নিলে সিন্ধুতে ও বাঙলার গণহত্যা পুনরাবৃত্তি হবে।
ইউ এন আই-এর খবরে প্রকাশ, নয়াদিল্লীতে নিখিল ভারত সিন্ধী সেবা সংঘ সভাপতি মাণিকরাম ইসরাণ জয়সিন্ধু’ শীর্ষক মুক্তি সংগ্রাম দমনে সিন্ধু প্রদেশের জনগণের উপর পাক-সামরিক চক্রের অত্যাচারের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বিশ্বকে এই বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন, যথাসময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বাঙলাদেশের গণহত্যার করুণ কাহিনী সিন্ধুপ্রদেশে পুনরাবৃত্ত হতে পারে। তিনি বলেন, নেতৃস্থানীয় সিন্ধী লেখক, বুদ্ধিজীবী ও জননেতাদের গ্রেপ্তার করা ছাড়াও সম্প্রতি সামরিক প্রশাসকগণ ৩ লক্ষ সিন্ধু হিন্দুকেই প্রদেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রস্তুতি অধিক শক্তিশালী করে তুলেছে।

সূত্র: কালান্তর, ২৫.৭.১৯৭১