You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.25 | যশােহর ও বরিশালের সাব জজ পাক সেনাদের হাতে খুন | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

যশােহর ও বরিশালের সাব জজ পাক সেনাদের হাতে খুন
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ২২ জুলাই-পাকসেনাবাহিনী ওপার বাঙলায় বেছে বেছে বাঙালী বিচারপতিদের খুন করতে শুরু করছে।
অতি সম্প্রতি যশােহর শহরের ফৌজী বেড়াজাল এড়িয়ে এপার বাঙলায় চলে আসা শরণার্থীদের কাছ থেকে এই খবর পাওয়া গেল।
এই সূত্রের সংবাদে প্রকাশ গত ১ মে ইয়াহিয়া ফৌজ যশােহরের সাব জজ সন্তোষ কুমার দাশগুপ্ত ও তার গৃহভৃত্য বাদল নন্দীকে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। তাঁর দশ বছরের ছেলে দেবাশীষকেও একই সঙ্গে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হয়েছিল; কিন্তু গুলি তার মাথা ঘেঁসে বেরিয়ে যায় এবং সে মরার ভাণ করে পড়ে থাকার ফলে প্রাণে বেচে যায়।
বরিশালের সাব জজ শ্রীনীতীন্দ্র নারায়ণ দাস ও তার ১৫ বছরের ছেলে অরবিন্দকেও পাকিস্তানী সৈন্যরা অনুরূপভাবে গুলি করে মেরেছে এবং তার স্ত্রী ও ১৭ বছরের মেয়েকে ধরে নিয়ে তার উপর উৎপীড়ন ও অত্যাচার করে।
ওপার বাঙলা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেল, সৈন্যদের প্রচণ্ড অত্যাচারের মুখে দাঁড়িয়েও শ্রীমতী দাস যখন প্রশ্ন করেন, কোন্ অপরাধে তার স্বামী ও পুত্রকে হত্যা করা হল, তখন সেনাবাহিনীর অফিসার কুৎসিৎ ভাষায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে গালাগাল দিয়ে জবাব দেয়ঃ “ও প্রশ্ন ইন্দিরা গান্ধীকে কর।”
যশােহরের সাব জজ শ্রীসন্তোষ দাশগুপ্তকে হত্যা করার আগে কর্ণেল তােফাইল তাকে ২৭-২৯ এপ্রিল ক্যান্টনমেন্টে” জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে রাখে। সেই সময়ে উক্ত অফিসার বলেন যে “হিন্দুস্থান মুক্তি ফৌজকে সাহায্য করছে” সুতরাং “হিন্দুরা কী করে পাকিস্তানে বাচবে বলে আশা করে।”
শ্রী দাশগুপ্তকে হত্যা করার পর যখন সেনাবাহিনী জানতে পারে যে, তাঁর ছেলেটি মারা যায় নি, তখন তারা রাতে আবার তাঁর বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু ইতােমধ্যে শ্রী দাশগুপ্তের পরিবারের লােকেরা দু’জন বৃদ্ধ মুসলমানের সহায়তায় নিরাপদ জায়গায় চলে গিয়েছিলেন। প্রায় দু’মাস লুকিয়ে থাকার পর তারা সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে চলে আসতে সক্ষম হয়েছেন।

সূত্র: কালান্তর, ২৫.৭.১৯৭১