You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.27 | পাকবাহিনীর নারী নির্যাতনের উপর জাতিসঙ্ঘে তদন্ত কমিটি দাবি- মালেকা বেগমের বিবৃতি | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পাকবাহিনীর নারী নির্যাতনের উপর জাতিসঙ্ঘে তদন্ত কমিটি দাবি
মালেকা বেগমের বিবৃতি
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ২৬ সেপ্টেম্বর-বাঙলা দেশের অধিকৃত অঞ্চলে বর্বর পাক বাহিনী নারী সমাজের উপর যে পাশবিক অত্যাচার প্রতিদিন চালিয়ে যাচ্ছে তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরে আজ বাঙলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা মালেকা বেগম ‘বাঙলাদেশের নারীদের চরম নির্যাতিত অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের এবং পাক সেনাদের এই নারী অত্যাচারের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করার উদ্দেশ্যে। জাতিসঙ্ঘের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।
বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করার পাশাপাশি দস্য পাক-সেনাদের নির্যাতনের মৃত্যু বিভাষিকা থেকে নারীসমাজকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্য সব প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রীমতী বেগম বিশ্ব জনমত তথা বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক মহিলা সংগঠনসহ অপরাপর গণতন্ত্রকামী শান্তিকামী বিশ্ব-সংস্থার কাছেও সবিশেষ অনুরােধ জানিয়েছেন।

পৈশাচিক অত্যাচারের বিবরণ
এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন “যে সকল তথ্য ইতােমধ্যেই হস্তগত হয়েছে তাতে জানা জানা যায় যে পাক সেনাবাহিনী বাঙলাদেশ আক্রমণের প্রথম দিন থেকেই বর্বর পাশবিক উপায়ে শত-সহস্র নিঃসহায় নারীদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে…..। প্রতি ঘরে ঘরে হানাদাররা বয়সের সীমার ভেদাভেদ না করেই নাবালিকা, যুবতী, প্রৌঢ়রা, বৃদ্ধা নারীকে অনায়াসে আক্রমণ করে ভােগলালসা তৃপ্ত করছে। নাবালিকার অঙ্গপ্রত্যক্ষ ছেদ করে, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে বৃদ্ধাকে পাশবিক অত্যাচারে জর্জরিত করে এই খুনীদল সহস্র রমণী কে হত্যা করছে।
“বিভিন্ন জেলায়, গ্রামে শহরে সর্বত্র পাকসেনারা নিজ নিজ ঘাঁটির পাশে বিশেষ শিবিরে শত সহস্র নারীকে আটক করে তাদের নারকীয় ভােগলালসা চরিতার্থ করছে। ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের পাশে এমনই এক শিবিরে আজও দেড় হাজারের উপর নারী এক দুঃসহ অবস্থায় তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। বহু নারী দুরারােগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। আরও জানা গেছে, এই সমস্ত শিবির থেকে অন্তঃসত্ত্বা বহু রমণীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই সকল অত্যাচারের ফলস্বরূপ বাঙলাদেশের গত সহস্র নারী পাগল হচ্ছেন, আত্মহত্যা করছেন। পরিবারের লােকজন তাদেরকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন বিষের পাত্র। বাঙলাদেশের সর্বত্র আজ নারীগণ ভীত সন্ত্রস্ত। ভয়ে দিশেহারা রমণীর কাছে আজ খােলা আছে একটি মাত্র পথ-তা হচ্ছে। আত্মহনন।”

সূত্র: কালান্তর, ২৭.৯.১৯৭১