একটি সুপরিকম্পিত গণহত্যার চাক্ষুস বিবরণ
নয়াদিল্লী, ১ নভেম্বর (ইউ-এন আই) – জেনারেল ইয়াহিয়ার সৈন্যরা যেরকম পরিকল্পিত ধরণে গােটা পূর্ববঙ্গে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে এসেছে, অভিধানের যথার্থ অর্থেই তা গণহত্যাভিযান।
এখানে সম্প্রতি প্রকাশিত “বাংলাদেশ ধর্ষণ” নামক যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে তাতে গ্রন্থাকার প্রখ্যাত সাংবাদিক শ্রীএন্টনি মাস কারেনহাস একথা লিখেছেন।
তিনি লিখেছেন : “কুমিল্লায় ১৪ তম ডিভিশনের সদর ঘাঁটিতে সফরে গিয়েই আমি জানতে পারলাম যে, কিরকম পাশবিকভাবে ও পুংখানুপুংখ ধরণে সেই হত্যাভিযানের পরিকল্পনা হয়েছিল এবং তাকে কার্যকর করা হয়েছিল।”
তিনি লিখেছেন হিটলারের পর এর চেয়ে নারকীয় কোনকিছুই কোথাও ঘটে নি। (পূর্ব পাকিস্তান) সফর কালে আমাকে স্বচক্ষেই হত্যা ও অগ্নিদগ্ধ করার সরব সন্ত্রাস দেখতে হয়েছে। হিন্দু এবং অন্যান্য যাদের চিহ্নিত করা ব্যক্তিদের নিয়মিতভাবে তাড়া করে হত্যা করা হয়েছে গ্রামের পর গ্রামে চড়াও করে।
তিনি লিখেছেন “আমি নিজে দেখেছি সামরিক আইনের প্রশাসকরা গােটা গ্রাম ধ্বংস করেছে এবং অবলীলাক্রমে হত্যাদেশ দিয়েছে। আমি দেখেছি, মােটের উপর সম্মানিত লােক, চমৎকার লােকগুলি দিনে কত হত্যা করেছে তা নিয়ে রসিকতা করছে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিযােগিতার সুরে সবচেয়ে হত্যা কে করেছে তার সন্ধান নিচ্ছে।” হত্যা করে ত্রিশ বছরের জন্য এ প্রদেশকে শাসন করা হবে।”
পূর্ববঙ্গ সফরের জন্য বাছাই করা সাংবাদিকদের যে টিমটিকে নিয়ন্ত্রিত ধরণে ঘােরানাে হয়েছিল তার মধ্যে মাসকারেনহাসও ছিলেন একজন। কুমিল্লা সার্কিট হাউস থেকেই তিনি এ ধরনের একটি হত্যাভিযান দেখেছেন। তিনজন হিন্দু এবং একজন খৃষ্টান অধিবাসীকে একটা দড়িতে বেঁধে রাস্তা দিয়ে এনে সার্কিট হাউসে পৌছানাে হল।
“কয়েক মিনিট পর আমি চীৎকার আর লাঠির আঘাতের উন্মত্ত আওয়াজ শুনতে পেলাম। তারপর চীৎকার স্তব্ধ হ’ল। যেন একটা সুইচ নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার কাতর কানে এই নিস্তব্ধতা যেন হঠাৎ সবচেয়ে সােচ্চার ধ্বনির মত শােনাল। লক্ষ লক্ষ বার তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে এবং এখনও আমার মনে তা ঘা মারছে।”
সূত্র: কালান্তর, ২.১১.১৯৭১