বেগম আলীর কাছ থেকে ঢাকায় গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ
কূটনৈতিক মিশনের প্রধান জনাব এম হােসেন আলীর পত্নী আজ ইউ এন আই-এর প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা শহরে পাকিস্তানী সৈন্যদলের নৃশংস গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ তুলে ধরেন। প্রত্যয়সিদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন “শহীদের রক্ত কখনও বৃথা যায় না। ঐ রক্তই বাঙলাদেশ’ এর জনগণকে জয় অর্জনে সাহায্য করবে।
বেগম আলী জানান, ঢাকা শহরের আজিমপুরে নিরস্ত্র জনগণের উপর পাক ফৌজ যখন মেশিনগান চালিয়ে হত্যার তাণ্ডবে মেতে উঠেছিল তখণ সেই দৃশ্য সহ্য না করতে পেরে তিনি দুহাতে মুখ ঢেকেছিলেন। ঐ সময় তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা বাড়ির ছাদে উঠে গুনে গুনে দেখলেন রাজপথে ২২টি মৃতদেহ পড়ে আছে।
“নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা করে জেনারেল ইয়াহিয়া বােধ হয় পশু শিকারের উদ্দীপনা অনুভব করেন।”
তিনি আরাে জানান, পাকিস্তানী জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসে অস্বীকৃতির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে ২৫০ জন। ডক শ্রমিককে একদিনে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান ঐ বন্দর ঘুরে এসে জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানালে ইয়াহিয়া বলেন, “সব ঠিক হয়ে যাবে। তােমাকে চিন্তা করতে হবে না।”
বেগম আলীর মতে, পাকিস্তানী সমর বাহিনী তরুণীদের রক্ষিতা এবং তরুণদের জুতােপালিসওয়ালারূপে ব্যবহার করছে। তারা বাঙলাদেশ’-কে ক্রীতদাসদের দেশে পরিণত করতে চায়। উত্তরসুরীকে নেতৃত্বহীন করার জন্য তারা বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রদের ব্যাপকহারে হত্যা করছে।
তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, মিশনের চারজন অফিসার বেশ কিছুদিন আগে এক মাসের ছুটিতে গিয়েছিলেন। ছুটি ফুরিয়ে যাওয়ার ছয় সপ্তাহ পরেও তারা ফেরেননি।
সূত্র: কালান্তর, ২০.৪.১৯৭১