বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দান ভারতের আশু কাজ
-দিবাকর গুপ্ত
মুক্তির জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের সশস্ত্র বিপ্লবী সংগ্রাম ভারতের আত্মরক্ষা, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে রক্ষা এবং এদেশের সমাজ ও গণতন্ত্রকে রক্ষার কর্তব্যগুলির সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেল যে, ইয়াহিয়ার আক্রমণের ফলক কোনদিকে বেশী ধারালাে ছিল, কি না একই ঢিলে দু’পাখী মারাই ছিল ইয়াহিয়ার উদ্দেশ্য এই প্রশ্নের অবতারণা করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকদের উদ্দেশ্য এখন অতিশয় নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট। বাঙলাদেশ তার দায়িত্বও ইয়াহিয়া খাঁর বাঙলাদেশের মানুষকে বাঙলাদেশকে ফিরিয়ে পাবার জন্য তার প্রতিরােধের যা কিছু শক্তি, ভারতকে ভাঙ্গতে হবেই।
শত্রুদেরও পােয়াবারাে। ভারতের সীমান্ত ঘিরে শুধু পাকিস্তানী ফৌজ নয়, ভারতের ঐসব পরিচিত শক্রদেরও ঘাঁটি গড়ে উঠবে তখন। স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় বিশ্ব গণতন্ত্র ঠিক যে কারণে স্পেনের গণতন্ত্রীদের যুদ্ধের মধ্যে পৃথিবীর গণতন্ত্রকে কোন ঠাসা করেছিল এখানেও আজ সেই অবস্থা বিরাজমান গণতন্ত্র।
আজ যে প্রাণ নেই, তা কি সত্য নয়? বাঙলাদেশের এক লক্ষ শ্রমিককে হত্যা ও বিতাড়ন যেমন একটি সত্য, তেমনই সত্য বাকী ৩০ লক্ষ শ্রমিকের একটানা রাজনৈতিক ধর্মঘট-যার ফলে ধনিকদের লুণ্ঠন ও শশাষণের চাকাও আর সুচার ভাবে ঘুরতে পারছে না।
ভারত আজ অর্জুন
ভারতবর্ষকে আজ মহাভারতের অর্জুন হয়ে দাঁড়াতে হবে। শুধু ভারতের গণতান্ত্রিক দায়িত্ব বােধ জাগিয়ে তােলা নয়, বিশ্বের গণতন্ত্রকে সােচ্চার ও সক্রিয় করার দায়িত্ব মুখ্যত: ভারতের। ইতােমধ্যেই বিশ্বগণতন্ত্রের যে বাক্য ও বাণী শােনা গেছে তা কিছু কম নয়। মার্কিন সরকার ও বৃটিশ সরকার অবশ্যই দুমুখী আচরণে কালক্ষেপ করছে। কিন্তু আমেরিকা ও বৃটেনেও গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তিবর্গের সােচ্চার সহানুভূতি যে বাঙলাদেশ ও ভারতের পক্ষে তার বহু প্রকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
হাতে ধরে কণিষ্ঠকে প্রতিষ্ঠা করা আজ জ্যেষ্ঠেরই কর্তব্য। আর সেই কর্তব্য পালনের জন্য বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দানই ভারতের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে।
রক্তের সম্পর্ক
ভারত-উপমহাদেশের এক প্রান্ত বাঙলাদেশ। বাঙলাদেশ মুক্তি, গণতন্ত্র, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও অগ্রগতির যে বিপ্লবী নিশান তুলেছে, তার ধারা-উপধারায় সিঞ্চিত হবে গােটা ভারত। বাঙলাদেশ ও ভারতকে বাঁচতে হবে একসঙ্গে। দুরাষ্ট্রেই গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ এবং প্রতিবেশী দু’টি রাষ্ট্রের মধ্যে মৈত্রী।
সূত্র: কালান্তর, ৬.৬.১৯৭১