You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.27 | বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ শ্রমিকদল এম, পি-র দাবি | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশের সাহায্যে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক ব্রিগেড গঠিত হােক
বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ শ্রমিকদল এম, পি-র দাবি

কলকাতা, ২৬ এপ্রিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে শ্রমিকদলের সদস্য শ্রী বি, ডগলাস ম্যান আজ সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, বাঙলাদেশের সাহায্যার্থে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক ব্রিগেড গড়ে তােলা উচিত। এই প্রকার ব্রিগেড গঠিত হলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আনন্দিত হব।”
বাঙলাদেশ-সুহৃদদের নিয়ে ইংল্যাণ্ড গঠিত ‘জাস্টিস ফর ইস্ট বেঙ্গল’ (পূর্ববঙ্গের জন্য ন্যায়বিচার) নামক এক সংগঠনের বিশেষ উদ্যোক্তা হিসেবে শ্রী ম্যান এখানে বাঙলাদেশের পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার জন্য এসেছিলেন। গত শনিবার তিনি বাঙলাদেশের অভ্যন্তরে কোন এক স্থানে বাঙলা দেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আজ সন্ধ্যায় বােম্বাই হয়ে লণ্ডন যাত্রার প্রাক্কালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রী ম্যান জানান, জনাব তাজউদ্দীনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি নিউজিল্যাণ্ডের এম, পি শ্রী ট্রেভর জি, ইয়ংয়ের সঙ্গে আলােচনা করে স্থির করেছেন, তাঁরা উভয়ে পারস্পরিক দেশের সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি সম্বলিত প্রস্তাব রাখবেন। প্রস্তাব অনুযায়ী (ক) পশ্চিম পাকিস্তানে আর কোন অস্ত্র প্রেরণ করা চলবে না; (খ) পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিতে হবে; (গ) আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা রােধ করে পাকিস্তানে আর ঋণ দেওয়া চলবে না; (ঘ) রাষ্ট্রসঙ্ঘের কাছে অনুরােধ জানাতে হবে যাতে সামরিক রক্ষাকবচ সহ পর্যবেক্ষক দল এবং অসামরিক সাধারণ মানুষের প্রতিরক্ষায় সম্ভাব্য সামরিক শক্তি বাঙলাদেশে পাঠানাে যায়; (ঙ) রাষ্ট্রসঙ্ঘের শক্তির সহায়তায় আন্তর্জাতিক রিলিফ সংগঠন কর্তৃক বিমানযােগে বাঙলাদেশের খাদ্য ও ঔষধাদি অবতরণের ধ্বনি তুলতে হবে; (চ) আপনাপন সরকারের কছে এই মর্মে দাবি জানাতে যে, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারকে অস্থায়ীভাবে এবং পরে অবস্থা পরিবর্তিত হলে পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি দিতে হবে।

পরিস্থিতি সৈনিক হয়ে উঠতে বাধ্য করেছে
মিঃ ম্যান বলেন, জনাব তাজউদ্দিন তাঁকে বলেছেন—যদিও তারা শান্তি ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী পরিস্থিতি তাঁদের সৈনিক হয়ে উঠতে বাধ্য করেছে। তারা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর। অবশ্য তারা অস্ত্রের প্রয়ােজনীয়তা ব্যক্ত করতে ভােলেন নি। তবে ভারতবর্ষ বাঙলা দেশের পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করছে, এই অভিযােগ যে ভ্রান্ত তা মিঃ ম্যান দু ঘণ্টাকাল বাঙলাদেশে অতিবাহিত করে, মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে উপলব্ধি করেছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমার মনে হয়েছে, এখানকার সংবাদপত্রগুলি বাঙলাদেশ প্রসঙ্গে অত্যধিক আশাবাদী চিত্র প্রকাশ করলেও বাঙলাদেশ সরকার তাদের সংগ্রাম সম্পর্কে যথেষ্ট বাস্তববাদী।”

বাঙলাদেশের জনগণ জয়ী হবেনই
প্রত্যয়ের সঙ্গে মিঃ ম্যান জানান, বাঙলাদেশের জনগণ জয়ী হবেনই। “সাড়ে সাত কোটির সর্বাঙ্গীন ভাবে শত্রু মনােভাবাপন্ন জনগণকে দাবিয়ে রাখা অসম্ভব। আমি এ ব্যাপারে নিঃসন্দিহান, পাকিস্তান সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড এবং খাদ্যশস্য ধ্বংস সংঘটিত করছে। যুদ্ধ অবশ্যই দীর্ঘস্থায়ী হবে। কিন্তু ভূখণ্ড এবং আসন্ন বর্ষা পাক সেনাবাহিনীর বিপক্ষে। তাছাড়া যত দিন যাবে যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ পাক সৈন্যরা ঘৃণা ছাড়া আর কিছু পাবে না। এবং শেষ পর্যন্ত বাঙলাদেশের জনগণ জিতবেনই।”
তিনি আরও বলেন, পাক সরকারের কার্যকরী কর্তৃত্ব কেবল পাঁচটি বিশেষ শহরে সীমাবদ্ধ।
স্বদেশ যাত্রার প্রাক্কালে মিঃ ম্যান ও মিঃ ইয়ং বাঙলাদেশ কৃটনৈতিক মিশনের প্রধান জনাব হােসেন আলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাঙলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার জন্য বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

সূত্র: কালান্তর, ২৭.৪.১৯৭১