You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.29 | স্বীকৃতিদানের সময় এখনও হয় নি লােকসভায় বাঙলাদেশ প্রসঙ্গে বিতর্কের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

স্বীকৃতিদানের সময় এখনও হয় নি
লােকসভায় বাঙলাদেশ প্রসঙ্গে বিতর্কের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নয়াদিল্লী, ২৮ জুন-বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকতিদানের উপযুক্ত সময় এখনও হয় নি। এই স্বীকৃতি দানের ফলে অবস্থার উন্নতি হবে—একথা যেদিন বােঝা যাবে, ভারত সরকার তৎক্ষণাৎ স্বীকৃতি দিতে ইতস্তত: করবে না।
বাঙলাদেশ সমস্যা নিয়ে লােকসভায় আজ পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী আলােচনার জবাবে কেন্দ্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং সদস্যদের কাছে ঐ প্রতিশ্রুতি দেন। ইউ, এন, আই জানিয়েছে, লােকসভার ইন্দিরা কংগ্রেস দলের সদস্য বাদে অন্য সমস্ত দলের সদস্যরাই অবিলম্বে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের জন্য প্রবল দাবি তােলেন।
আজ বিতর্কের বৈশিষ্ট্য হল, ইন্দিরা কংগ্রেসের সদস্যরা স্বীকৃতির প্রশ্ন নিয়ে কোন কথা বলেন নি। এরা মার্কিন সরকারের আচরণের উপরই আক্রমণ নিবদ্ধ রাখেন। অপরাদিকে অন্যান্য দলের সদস্যরা স্বীকৃতি, মার্কিন সরকারের অস্ত্র সাহায্য এবং মার্কিন সরকার সম্পর্কে ভারত সরকারের অপেক্ষাকৃত নরম মনােভাবের কঠোর সমালােচনা করেন।
বিতর্কের জবাবদানের সময় সর্দার শরণ সিং বাঙলাদেশে এক কুইসলিং সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে কোনরূপ রাজনৈতিক সমাধানের চিন্তাকে দৃঢ়ভাবে অগ্রাহ্য করেন। তিনি বলেন, ভারত সরকারের কাছে একমাত্র গ্রহণযােগ্য সমাধান হবে মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের দ্বারা গঠিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ। কারণ তিনি ও তাঁর দল বাঙলাদেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভােটে নির্বাচিত।
পাক সামরিক জুন্টাকে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহের প্রশ্নে সভায় যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় সর্দার সিং সে বিষয়ে ঐকমত্য ঘােষণা করেন। তিনি বলেন, মার্কিন সরকারের কাজ হল “অতীব নির্মম” এবং পাকিস্তানকে আরও অস্ত্র যে ঐ সরকার পাঠাবে না সে সম্পর্কে তিনি আদৌ নিশ্চিত নন।
তাঁর বিদেশ সফর ব্যর্থ হয়েছে এই মর্মে যে অভিযােগ সদস্যরা করেন তার জবাবে সর্দার সিং বলেন, এটা ঠিক নয়। ভারত সরকার আন্তর্জাতিক জনমতকে বিচলিত করতে সক্ষম হয়েছে এবং বাঙলাদেশে ইয়াহিয়ার সৈন্যদের নির্মম সামরিক অভিযান বন্ধ হলে শরণার্থীদের আগমন বন্ধ হতে পারে—ভারতের এই অভিমতের ব্যাপক সমর্থন পাওয়া গেছে।
ঐ সফরের ফলে ভারত এ কথাও বিদেশের রাষ্ট্রগুলিকে বােঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, শরণার্থীদের নিজেদের দেশে ফিরে যেতে হবে। বর্তমানে ভারত প্রথমত বাঙলাদেশের নাগরিকদের এবং দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক জাতিপুঞ্জের অছি স্বরূপ শরণার্থীদের দেখাশােনা করছে।
বাঙলাদেশ সদস্যকে জাতিসংঘে পেশ করার দাবির জবাবে শরণ সিং বলেন, এর আগে বিশ্ব জনমতকে সমস্যা সম্পর্কে পরিপূর্ণ অভিহিত করা উচিত।
যে সদস্যরা অভিযােগ করেছিলেন সর্দার সিং এর বিদেশ সফরের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সাহায্য সংগ্রহ তাদের জবাবে তিনি বলেন, “আমি কখনও সাহায্যের প্রশ্ন তুলিনি। যেখানে এই প্রশ্ন উঠেছে আমি জবাব দিয়েছি এটা সমস্যার সমাধান নয়।” তিনি বলেন, সাহায্য কেবল কারণের সমাধান করতে রোগ কে নয়। ভারতকে সমস্যার মূলে প্রবেশ করতে হবে এবং তার সমাধান করতে হবে।
ভারতের কাছে শরণার্থী সমস্যার সমাধান এত জরুরী কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শরণার্থীদের আগমনের ফলে ভারতে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা এর কারণ। যদি এদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে হয় তবে ওখানে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
২১ ও ২২ মে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিবৃতির পরও ২৫ লক্ষ শরণার্থী এদেশে এসেছেন বলে তিনি জানান। অতএব এর একমাত্র সমাধান হল মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠন বলে তিনি জানান।
বিতর্কে অংশগ্রহণ করে কমিউনিস্ট সদস্য হীরেন মুখার্জি অবিলম্বে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতির দাবি জানান। তিনি বলেন, এতে যদি কোন ঝুঁকি থাকে তবে সে ঝুঁকি কমানাের ব্যবস্থা করা হােক। তিনি বলেন, স্বীকৃতি দিলেই যুদ্ধ হবে না। কারণ আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না।”
আরও যারা বাঙলাদেশ সরকারের স্বীকৃতির দাবি করেন তাঁদের মধ্যে জনসংঘের অটল বিহারী বাজপেয়ী, সি পি এমের জ্যোতির্ময় বসু, ডি এম কে-র কে মনােহরণ, পি এস পি-র সমর গুহ প্রমুখ আছেন।
ইন্দিরা কংগ্রেস সদস্যরা মার্কিন সরকারের অস্ত্র সরবরাহের নিন্দায় তাদের বক্তৃতার বেশীর ভাগ সময় ব্যয় করেন।
সিণ্ডিকেট কংগ্রেস ও স্বতন্ত্র দলের সদস্যরা মার্কিন সরকারের পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহের প্রশ্নে ভারত সরকারের সমালােচনা করেন।

সূত্র: কালান্তর, ২৯.৬.১৯৭১