পক্ষকালের মধ্যেই বাঙলাদেশের স্বীকৃতির সম্ভাবনা
আজ কংগ্রেস সংসদীয় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা
(বিশেষ প্রতিনিধি)
নয়াদিল্লী, ৪ জুলাই-আগামী পক্ষকালের মধ্যেই বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দান সম্পর্কে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এখানের বিশ্বস্ত মহল এই সংবাদ উল্লেখ করে বলেন, মােটামুটি ঘটনা যেভাবে গড়াচ্ছে তাতে বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের পক্ষে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে।
ঐ সূত্রের সংবাদ এই যে, এই সিদ্ধান্ত নেবার আগে ভারত সরকার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা সমস্ত বৃহৎ রাষ্ট্রকে এবং বাংলাদেশ প্রশ্নে যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ রক্ষা করা হচ্ছে তাদের জানিয়ে দেবে।
এও জানা গেছে, কেন্দ্রের দায়িত্বশীল মহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে মনােভাবের লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। অবশ্য কয়েকটি ঘটনা এই পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। এর সর্বপ্রধান হলাে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণ। অতি নগ্নভাবে ঐ বক্তৃতা বাংলাদেশ ও ইসলামাবাদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে সমস্ত আলােচনার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একথাও চিন্তা করেছেন যে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক উপাদানগুলির ২৫ মার্চের সংকটের সূচনার কালের তুলনায় এখন অনেক অনুকূলে। তাছাড়া জানা গেছে, সােভিয়েত সরকার প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন যে, ইসলামাবাদ বাঙলাদেশ নেতাদের সঙ্গে কোনরূপ রাজনৈতিক সমাধানের কথা চিন্তাও করছে না। কেন্দ্রীয় সরকার আরও লক্ষ্য করছে যে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃবৃন্দ ও ইসলামাবাদের সঙ্গে কোনরূপ জোড়াতালি দেওয়া সমাধানে যেতে রাজী নন। এঁরা এখন স্বাধীন বাংলার জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে বদ্ধ পরিকর।
এই প্রসঙ্গে উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা হলাে বাঙলাদেশে মুক্তিফৌজের অভিযান করার ক্ষমতা বৃদ্ধি। বিশেষ করে পাক-হানাদাররাও এর ধাক্কা ভালই টের পাচ্ছে। পাক-হানাদাররা আবার ধীরে ধীরে তাদের শিবিরে আবদ্ধ থাকছে। কিংবা বড় বড় দলে ঘুরছে অথবা অতি প্রয়ােজনীয় হামলা ছাড়া ছােট খাট হামলা বন্ধ করছে এসবই এক নতুন পর্যায়ের সূচনা করছে। মুক্তিফৌজ এখন সংখ্যাতেও বাড়ছে। এই সময়ে বাঙলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি এবং ঐ সঙ্গে বিপুল সাহায্য পেলে শক্তির ভারসাম্য মুক্তি ফৌজের অনুকূল পাল্টে যাবে।
কাল সংসদীয় দলের জরুরী সভা
ইউ, এন, আই জানাচ্ছে আগামীকাল কংগ্রেস সংসদীয় দলের কার্যনির্বাহী কমিটির যে বিশেষ সভা ডাকা হয়েছে তার একমাত্র আলােচনাসূচী হলে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার আলােচনা।
সূত্র: কালান্তর, ৫.৭.১৯৭১