প্রকৃত বন্ধুর কাজ
বাঙলাদেশের ব্যাপারে সােভিয়েত সরকারও যে ভারত সরকারেরই মতাে উদ্বিগ্ন, তা প্রকাশ পেয়েছে মস্কোর এক ভােজসভায়। কেবল উদ্বিগ্নই নন, এ সমস্যার সমাধান প্রয়ােগে ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সহযােগিতা যে সােভিয়েত সরকারের রয়েছে, তাও ব্যক্ত করেছেন সােভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীগ্রামিকো। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং-এর সম্মানে আয়ােজিত এক ভােজসভায় তিনি বলেছেন : “আপনি যেজন্য এসেছেন, তার সবই যে পেয়ে যাবেন এ বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।” ভােজের পরে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে শ্রীসিং ও শ্রীগ্রোমিকোর মধ্যে নিভৃতে আলােচনা হয়। তাতে কোনাে পক্ষেরই উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন না। সরকারী মতে, সর্ব বিষয়ে উভয়ের মধ্যে মতৈক্য হয়।
লােকসভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শ্রী সুরেন্দ্রপাল সিং বলেছেন, সােভিয়েত ইউনিয়ন কূটনৈতিক উপায়ে পাক সরকারকে দৃঢ়ভাবেই জানিয়ে দিয়েছে যে, বাঙলাদেশের উপর পাক সরকারের বলপ্রয়ােগ মােটেই বাঞ্চনীয় নয়। গােড়ায়ই সােভিয়েত রাষ্ট্রপতি শ্রীপদগােনি এই মর্মে ইয়াহিয়া খানকে সমঝিয়ে দেন। তারপরেও সােভিয়েত ইউনিয়ন তার দৃঢ় অভিমত পাক সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে।
আমাদের দেশে বুর্জোয়া পত্রিকাগুলিতে অহরহ বলা হচ্ছে যে, বাঙলাদেশের ব্যাপারে পশ্চিম দুনিয়ার সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ শক্তিগুলিরই মতাে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সােভিয়েত ইউনিয়নও উদাসীন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন্ প্রত্যাশা নিয়ে সােভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছেন, তা অনুমান করতে পারা মােটেই কষ্টকর নয়। সােভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, তাঁর সমস্ত আশাই পূরণ হবে, তখনাে কি বলতে হবে যে, বাঙলাদেশ সম্পর্কে সােভিয়েত ইউনিয়ন উদাসীন? যারা কাজ করেন, তাঁদের বাগাড়ম্বর কম। সােভিয়েত নায়করা কাজ করেন বলেই ফাঁকা বুলি ঝাড়েন না। সােভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে যে আশ্বাস দিয়েছেন তাকে প্রায় সাদা চেক বললেও অত্যুক্তি হয় না। কোনাে সাম্রাজ্যবাদী বৃহৎ শক্তির কাছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি তা পাবেন?
সূত্র: কালান্তর, ৯.৬.১৯৭১