যুদ্ধবিরতি ও বাঙলাদেশ সমস্যার সমাধান একসঙ্গেই করতে হবে
ইজভেস্তিয়ার স্পষ্ট কথা
মস্কো, ১৩ ডিসেম্বর—গতকাল সােভিয়েত সরকারের মুখপত্র ইজভেস্তিয়া’ বলেছে, ভারতীয় উপমহাদেশ সামরিক কার্যকলাপের অবসান ঘটাতে হলে সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ববঙ্গ সমস্যারও সমাধান করতেই হবে।
পত্রিকার রাজনৈতিক ভাষ্যকার ভুলাদিমির কুদ্রিয়াৎসেভ বলেছেন উপমহাদেশের সংকটের সমাধান করতে হলে সামরিক কার্যকলাপের অবসানকে বাঙলাদেশের রাজনৈতিক মীমাংসাকে আলাদা করা যায় না। কারণ এ দুটো একই সমস্যার দুই দিক।
“দ্বিতীয় সমস্যাকে দূরে রেখে যারাই প্রথমটার সমাধান করার জেদ ধরেছে তারা ইচ্ছায় হােক আর অনিচ্ছায় হােক বর্তমান সংঘর্ষের কারণগুলিকেই স্থায়ী করতে চায়-যা আজই হােক আর কালই হােক আবার একটা সংঘর্ষের জন্ম দেবে। এই স্পষ্ট মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, এটাই হচ্ছে সােভিয়েত মনােভাব—এবং এই মনােভাবটা এশিয়ার জাতিসমূহের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা সেই বিশাল মহাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপনের সহায়ক হবে যেখানে মানবজাতির সর্বাধিক অংশ বসবাস করে।”
পশ্চিম পাকিস্তানী জুন্টাকে বাঙলাদেশের জনগণকে নিষ্ঠুরভাবে দমন-পীড়ন করতে চীন সাহায্য করছে বলে অভিযোেগ করে তিনি বলেছেন, চীনা সরকারের সামরিক সাহায্য পশ্চিম পাকিস্তানী জুন্টাকে কেবল ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমণের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে এমন নয়, বাঙ্গালী জাতিকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করতেও সাহায্য করছে।
চীনা সরকারের এই অবস্থানটায় একমাত্র প্রেরণা হল এশিয়াতে প্রভূত্ব স্থাপনের স্বার্থপর আগ্রহ, এই অভিযােগ করে তিনি যেসব পশ্চিমী দেশ গণতন্ত্রের বড়াই করে তাদের লক্ষ্য করে বলেছেন, তারা গণতন্ত্রকে উর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য যথাসময়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সন্ত্রাস ও ধ্বংসের হাত থেকে পূর্ববঙ্গের জনগণকে রক্ষা করার জন্য কিছুই করেনি।
“এটা স্পষ্ট ভাষায় বলতেই হবে যে, ভারতীয় উপমহাদেশের দুটি দেশের মধ্যে লড়াই বাধানাে সকল বর্ণের সাম্রাজ্যবাদী প্ররােচকদের পক্ষেই লাভজনক, কারণ তা এশিয়ার জনগণের সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী সংগ্রামকে দুর্বল করে।”
সূত্র: কালান্তর, ১৪.১২.১৯৭১