চীনা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে মার্কিন রাষ্ট্রপতি নিক্সন পিকিং যাচ্ছেন
কিসিঙ্গারের সঙ্গে গােপন আলােচনার পরিণতি
সান ক্লিমেন্ট, ১৬ জুলাই (এ পি)-মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন ঘােষণা করেছেন, চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌএন-লাইয়ের আমন্ত্রণে আগামী দশ মাসের মধ্যে তিনি পিকিং যাচ্ছেন “ওয়াশিংটন-পিকিং” সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে নিক্সনের উপদেষ্টা কিসিঙ্গার এবং চীনা প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে তিনদিন ধরে গােপন আলােচনার পর এ ব্যবস্থাটি হয়েছে।
মনে থাকতে পারে ইসলামাবাদে পাকিস্তানী পক্ষের সঙ্গে আলােচনার পর গত ৯ জুলাই ঘােষণা করা হয়েছিল যে, কিসিঙ্গারের পাকস্থলীতে গােলযােগ হওয়ায় তিনি নাথিয়াগলিতে বিশ্রাম নিচ্ছেন, কিন্তু আসলে তখন তিনি গােপনে পিকিং গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ১১ জুলাই অবধি চীনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গােপন সলাপরামর্শ করছিলেন।
গতরাতে দেশব্যাপী এক টেলিভিশন সাক্ষাঙ্কারে নিক্সন উপরােক্ত ঘােষণা করেছেন। উক্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তাঁর চীন সফরের লক্ষ্য হচ্ছে “দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে স্বাভাবিক করা এবং দুই পক্ষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে মতামত বিনিময় করা।”
পিকিং এবং ওয়াশিংটনে এ সম্পর্কে একই সময়ে যে যুক্ত ঘােষণা প্রচারিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে; “রাষ্ট্রপতি নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ হেনরি কিসিংগার এবং প্রধানমন্ত্রী চৌ-এনলাইয়ের মধ্যে পিকিং-এ ১৯৭১ সালের ৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত আলােচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি নিক্সনের পিকিং সফরের সুস্পষ্ট ইচ্ছার কথা জেনে প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই জনগণতন্ত্রী চীনা প্রজাতন্ত্র সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি নিক্সনকে ১৯৭২ সালের মে মাসের আগে একটা উপযুক্ত সময়ে চীন সফর করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি নিক্সন সানন্দে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন।”
এ, পি’র ধারণা ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় এ ঘটনার প্রভাব পড়বে। তাছাড়া ভিয়েতনামে আলােচনার মাধ্যমে শান্তির সন্ধানের ক্ষেত্রেও কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। এই শরৎকালে চীনকে জাতিসংঘভুক্ত করার ব্যাপারে নিক্সন প্রশাসন আর ব্যাগড়া মারবে না বলেই মনে হয়।
টোকিও থেকে এ পি জানাচ্ছে ১৯৭২ এর মে মাসের আগে নিক্সনের পিকিং অভিমুখে “শান্তির যাত্রা সম্পর্কিত সংবাদ প্রচারিত হবার সঙ্গে সঙ্গেই তাইওয়ান সরকার তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাইওয়ান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী চৌ-শু-কাই ম্যানিলায় এ সংবাদ জেনে সঙ্গে সঙ্গেই বলেছেন, “চীন-যে মনস্তাত্বিক লড়াই চালাচ্ছে, এটা তারই ফল হতে পারে। ব্যাপারটা তার কাছে একটা সংবাদ।” জাপান সরকারের কর্মকর্তারা অবশ্যই বলেছেন, নিক্সনের এই সিদ্ধান্তের কথা আগেই তাদের জানানাে হয়েছিল। অন্যান্য মার্কিনভুক্ত এশীয় দেশগুলির কর্মকর্তাদের কাছে সংবাদটা বিস্ময়ের উদ্রেক করেছে।
নিক্সন মাও বৈঠক
হােয়াইট হাউস থেকে এক সংবাদে আজ জানানাে হয়েছে যে, আগামী বছর প্রস্তাবিত চীন সফরকালে প্রেসিডেন্ট নিকসন চীনের চেয়ারম্যান মাও সে-তুং এর সঙ্গে মুখােমুখী আলােচনা করবেন বলে স্বয়ং নিকসন আশা প্রকাশ করেছেন। ইউ এন আই অধিক রাতে এ সংবাদ দিয়েছে।
নিক্সনের পাকিস্তানকে সাহায্য দেবার পথে বাধানিষেধ
ওয়াশিংটন, ১৬ জুলাই-নিক্সন প্রশাসন তাদের বৈদেশিক সাহায্য বিলে পাকিস্তানকে ১৬৮ কোটি ৮২ লক্ষ টাকার মত সাহায্য দেবার যে প্রস্তাব করেছে, মার্কিন প্রতিনিধি সভার পররাষ্ট্র কমিটির ১৭-৬ ভােটে তা নাকচ করে বলেছে, পূর্ববঙ্গের শরণার্থী সমস্যার সমাধান করে স্বাভাবিক অবস্থা না-আনা পর্যন্ত পাকিস্তানকে এই অর্থ দেওয়া চলবে না।
তারা অবশ্য এই শর্ত দিয়েছে যে, যদি রাষ্ট্রপতি নিক্সন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই রিপাের্ট দিতে পারেন যে, পূর্ববঙ্গে শরণার্থী সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং ভারতে যে শরণার্থীরা গিয়েছে তাদের নিজ নিজ সম্পত্তি ফিরে পাবার যথাসম্ভব গ্যারান্টি সৃষ্টি হয়েছে যে তারা দেশে ফিরে যেতে পারবে তাহলে নিক্সন প্রশাসন এই অর্থ দেবার অধিকার ফিরে পাবে।
তার আগে পাকিস্তানের শরণার্থীদের রিলিফ ও পুনর্বাসনের জন্য আরও ৭৫ কোটি টাকা দেবার প্রস্তাব কমিটি পাশ করেছে।
কমিটির প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের সাবকমিটির চেয়ারম্যান কর্ণোলিয়াস গ্যালাখারের সংশােধনী গ্রহণ করার ফলেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে মার্কিন প্রশাসন এই ১৬৮ কোটি ৮২ লক্ষ টাকার কোন অর্থই কাজে লাগাতে পারবে না। একটি ধারা নাকচ হয়ে যাবার ফলে অন্য দেশে যে সব মার্কিন সরঞ্জামাদি সাহায্য বাবত গিয়েছে সেগুলিও পাকিস্তানে চালান দেওয়া যাবে না।
সূত্র: কালান্তর, ১৮.৭.১৯৭১