ভারতের হস্তক্ষেপেই পূর্ববঙ্গে শরণার্থী সমস্যা ঘটেছে
জাতিসংঘের একটি কমিটিতে চীনের প্রতিনিধির বক্তব্য
জাতিসংঘ, ২০ নভেম্বর (এ পি)—ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান উত্তেজনার জন্য ভারতকে পুরােপুরি দায়ী করে গতকাল জাতিসংঘের সামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক কমিটিতে চীনা প্রতিনিধি এক কড়া বক্তৃতা দিয়েছেন।
চীনা প্রতিনিধি ফু হাও তার বক্তৃতায় ভারতের নাম করেন নি তবে তার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট।
তিনি বলেছেন, “চীনা সরকার ও জনগণ সর্বদাই মনে করে, কোন দেশের আভ্যন্তরিন সমস্যাকে সেই দেশের জনগণেরই সমাধান করা উচিত।
“পূর্ব পাকিস্তানে যে প্রশ্ন উপস্থিত হয়েছে সেটা নিছক তাদেরই আভ্যন্তরিন ব্যাপার এবং কেবল পাকিস্তানী জনগণই তার সমাধান করতে পারে যে কোন অছিলাতেই অন্য কোন দেশের তাতে হস্তক্ষেপ করার কোন এক্তিয়ার নেই।
চীনের প্রতিনিধি ফু-হাও বলেছেন :
“পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা তথাকথিত শরণার্থীদের সমস্যার জন্ম এবং তার বর্তমান পর্যায়ে বিকাশের জন্ম হয়েছে কোন একটি দেশের পাকিস্তানের আভ্যন্তরিন প্রশ্নে হস্তক্ষেপেরই ফলে-যার ফলে দাঁড়িয়েছে উপ মহাদেশে বর্তমানের অশান্তি।
“আমরা মনে করি পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থী সমস্যার একটা ন্যায্য সমাধানের জন্য সবার আগে পাকিস্তানের আভ্যন্তরিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতেই হবে।”
তিনি বলেছেন, ভারতের সঙ্গে চীনেরও অনুরূপ সমস্যা রয়েছে।
তিনি বলেন : “কোন একটি দেশ চীনের তিব্বত অঞ্চলেও বিদ্রোহ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছিল এবং অন্তর্ঘাতমূলক কাজকর্ম করছিল। চীনা জনগণ যে বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র ধ্বংস করলে তারা হাজার হাজার চীনা নাগরিককে তাদের দেশে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। এক তথাকথিত তিব্বতী শরণার্থী সমস্যার সৃষ্টি করেছে।”
দিল্লী থেকে ইউ এন আই জানাচ্ছে, জাতিসংঘে ভারতের বিরুদ্ধে চীনের বিষােদগার এখানকার রাজনৈতিক মহলকে হতাশ করেছে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের ধারণা চীনের সঙ্গে উন্নত সম্পর্ক স্থাপনে ভারতের প্রয়াস অবশ্য কোনমতেই এই বিবৃতির দ্বারা ব্যাহত হবে না।
চীন অধিকৃত তিব্বত থেকে যেভাবে শরণার্থীরা পালিয়ে এসেছে তার সঙ্গে পূর্ববাঙলা থেকে শরণার্থীর স্রোতকে এক করে দিয়ে মূল সমস্যাটিকেই তালগােল পাকান হচ্ছে চীনের এই বিষােদগার মুখ্য উদ্দেশ্য। যে, কমিটিতে চীন এই বক্তব্য রেখেছে খুব শীঘই সেই কমিটিতেই তিব্বতের শরণার্থী প্রসঙ্গটি উঠবে। সম্ভবতঃ ঠিক এই কারণেই চীন এখন থেকে নিজের সাফাই গেয়ে রাখছে।
সূত্র: কালান্তর, ২১.১১.১৯৭১