ভারতীয় ভূখণ্ডে গুলিবর্ষণ বন্ধের দাবিতে পাকিস্তানের কাছে ভারতের কড়া নােট
কার্যকর না হলে ফলাফলের জন্য পাক সরকার দায়ী হবে
নয়াদিল্লী, ২৪ এপ্রিল-পশ্চিম বঙ্গ সীমান্তে ভারতীয় ভূখণ্ডে পাক-বাহিনীর যথেচ্ছ ও অপ্ররােচিত গুলিবর্ষণের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে ভারত সরকার আজ পাকিস্তানের কাছে কড়া প্রতিবাদ নোেট পাঠিয়েছে। ভারত সরকার দাবি জানিয়েছেন যে, অবিলম্বে পাক বাহিনীর এই যথেচ্ছাচার বন্ধের সুস্পষ্ট আহ্বান দিতে হবে।
আজ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে পাকিস্তান হাইকমিশনকে প্রদত্ত এই নােটে বলা হয়েছে “এ ধরনের সুস্পষ্ট আশ্বাস না দেওয়া হলে এবং তা কার্যকর করা না হলে, এর সমস্ত ফলাফলের জন্য পাকিস্তান সরকার সম্পূর্ণ দায়ী হবে।’
এদিকে ইউ, এন, আই এর এক সংবাদে প্রকাশ যে, সীমান্ত বিধি লঙ্ন করে আজ পাক বাহিনী বনগাঁ অঞ্চলে ভারত সীমান্তের এপারে গ্রামগুলির ওপর গুলিবর্ষণ করেছে।
পররাষ্ট্র দপ্তর আজ পাক-হাই কমিশনকে যে নােট পাঠান তা ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানের পাঠাননা নােটের জবাবে। এই নিয়ে ভারত সরকার পাকিস্তান সরকারের কাছে দুটি নােট পাঠান।
অপর নােটটিতে বলা হয় যে, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর লােকজন পাকিস্তান ভূখণ্ডে ঢুকেছিল বলে যে অভিযােগ পাকিস্তান গত ১৪ এপ্রিল করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” এই সঙ্গে ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত থেকে তিনজন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর লােককে পাক বাহিনী কর্তৃক ছিনতাই করে নিয়ে যাবার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন এবং দাবি করেছেন এজন্য দায়ী পাকফৌজের লােকদের উপযুক্ত শাস্তি বিধান করতে হবে।
ভারত সরকারের নােটে সীমান্তে ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর পাক ফৌজের অপ্ররােচিত গুলিবর্ষণের নিমােক্ত তথ্যগুলি দেওয়া হয়েছে :
১. ১২ এপ্রিল ত্রিপুরার ডেপুটি মন্ত্রী শ্রী মনসুর আলীর সােনামুরা সীমান্ত সন্নিকটস্থ ভবনে গুলি বর্ষণ করা হয়।
২. এপ্রিল ১৪ ও ১৫ রাত্রে সােনামুরা মহকুমার সীমান্তে মােতিননগরে কর্তব্যরত রক্ষী নায়েক মণিকুমারের উপর গুলি চালানাে হয়।
৩. ১৭ এপ্রিল, সােনামুরা থানা এলাকার নবদ্বীপচন্দ্র নগর গ্রামে ভারতীয় নাগরিক শ্রীইসমাইল
মইসীন ও শ্রীহবিবুর রহমানের বাড়িতে গুলিবর্ষণ করা হয়। নােটে বলা হয়েছে যে, ভারত সরকার পাক-বাহিনীর এইসব অপ্ররােচিত হামলার বিষয়ে গুরুতর মনােভাব নিয়েছেন। নােটে আরও বলা হয়েছে, ইতিপূর্বে অনুরূপ আরও ঘটনার বিষয় জানানাে সত্ত্বেও পাক সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
বনগা সীমান্তে গুলিবর্ষণ সীমান্তবিধি লঙ্ঘন করে আজ বনগাঁ অঞ্চলে ভারত পাক সীমান্তের পাঁচ কিলােমিটার এলাকার মধ্যে পাকফৌজের লােকেরা প্রবেশ করে।
পাক ফৌজের একটি কোম্পানি পেট্রাপােল রেল সড়কের কাছে অবস্থান নেয় ও ভারতীয় গ্রামের দিকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। বিকাল ৪ টা থেকে এক ঘণ্টা গুলি বর্ষণ চলে।
শেষ খবরে জানা যায় পাক-ফৌজ বেনাপােলে ফিরে গেছে।
খবরে জানা যায় যে, পাক-বাহিনী ভারী কামান ও মর্টার ব্যবহার করে। মুক্তিযােদ্ধাদের একটি শিবিরে তারা গােলা চালায় এবং সীমান্তের এপারে ভারতীয় গ্রামে তা এসে পড়তে থাকে। এতে যথেষ্ট আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। সীমান্তের ভারতের এই অঞ্চলের চেকপােস্ট বাংলাদেশ বাহিনীর হাতে রয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ২৫.৪.১৯৭১