You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.19 | পশ্চিম সীমান্তে টিক্কা খা আচমকা আক্রমণ হানার জন্য প্রস্তুত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পশ্চিম সীমান্তে টিক্কা খা আচমকা আক্রমণ হানার জন্য প্রস্তুত
(বিশেষ সংবাদদাতা)

নয়াদিল্লী, ১৮ নভেম্বর-ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তানের আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা বেশ এগিয়ে গিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা অবস্থাকে আচমকা আঘাত দেবার জন্য জেনারেল টিক্কা খানের নেতৃত্বে তিনজনের একটি কমাণ্ড গঠিত হয়েছে। সীমান্ত পারে যুদ্ধ বিরতি সীমারেখা অঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্যাভিজ্ঞ মহলের এক সংবাদে একথা জানা গেল।
একই সংবাদে প্রকাশ, কত তাড়াতাড়ি জম্মু সীমান্তের কোনাে অঞ্চলে কখন আঘাত দেওয়া হবে তা স্থির করার ভারও ঐ কমাণ্ডের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। কমাণ্ডের অপর দুজন সদস্য হচ্ছেন যথাক্রমে জেনারেল ঈশান এবং জেনারেল আকবর খান। যুদ্ধ বিরতি সীমারেখার উরিকারগিল সেক্টর বরাবর পাকিস্তানের দ্বাদশ ডিভিশন মােতায়েন রয়েছে-তারই পরিচালনাভার এই দুই কমাণ্ডারের ওপর রয়েছে।
পাকিস্তানের প্রথম আর্মিকোরের দায়িত্বে আছেন জেনারেল টিক্কা খান স্বয়ং। তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনী।
শিয়ালকোট থেকে পুঞ্চে আক্রমণ চালাবার জন্য একেবারে তৈরী আছে বলে জানা গেল। বর্তমানে ঝিলাম জেলার মাঙ্গলার কাছে টিক্কা খানের সদর দপ্তর স্থাপিত হয়েছে।
টিক্কা খানের সদর দপ্তরের কাছেই খরিয়ান-ভীমবার এলাকা। একই সংবাদ সূত্রে প্রকাশ, এই এলাকায় আণ্ডার গ্রাউণ্ড বাঙ্কার নির্মিত হয়েছে। মার্কিন সাহায্যে বিমান অবতরণ ক্ষেত্র তৈরী হয়েছে। ভারতীয় ছাম্ব এলাকা খরিয়ান থেকে মাত্র ২৫ কিলােমিটার দূরে। উল্লেখযােগ্য, ছাম্ব ভারতের জারিয়ান সেক্টরে অবস্থিত এবং ১৯৬৫ সালে এই অঞ্চলেই পাক বাহিনী প্যাটার্ন আক্রমণ হেনেছিল।
ঐ সংবাদে আরাে জানা গেল, বেশ কয়েকটি নতুন সশস্ত্র ডিভিশন ছা-জরিয়ান থেকে সুচেতগড় পর্যন্ত ২৪০ কিলােমিটার দীর্ঘ সীমান্তে জমায়েত করা হয়েছে। এছাড়া সপ্তম ক্রাক ডিভিশনকেও একই এলাকায় আনা হয়েছে। এতকাল এই ডিভিশনটিকে পেশােয়ারে রিজার্ভ রাখা হয়েছিল।
এদিকে পুঞ্চ অঞ্চলে নতুন করে পাকিস্তানী সমরসজ্জা শুরু হয়েছে। সীমান্তের খুব কাছে নতুন সৈন্যদল ও সাঁজোয়া বাহিনী তাে আনা হয়েছেই, এছাড়া থানা ব্রিগেডের শক্তি অনেক বাড়ানাে হয়েছে। থানা ব্রিগেডের সদস্যরা কমাণ্ডো অর্থাৎ গেরিলা ট্রেনিং প্রাপ্ত। থানা ব্রিগেডের কাজ অনুপ্রবেশ, অগ্রগমণ ও সংযােগ রক্ষা।
প্রচণ্ড আচমকা আক্রমণ চালিয়ে কাথ বরাবর অঞ্চল দখল করে পাকিস্তানের রণকৌশলের অংশ। এর লক্ষ্য একটাই পাঠান কোটের রইলবাদের সঙ্গে এই দখল করা অংশকে যুক্ত করে মূল সরবরাহে অঞ্চল থেকে জম্মুর উপর সাঁড়াশী আক্রমণ চালানাে।
আর এই পরিকল্পনা একবার সফল হলেই পাকিস্তানী কমাণ্ডোরা স্থলপথে এবং আকাশ পথে কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করবে। একদিকে অনুপ্রবেশ অন্যদিকে নিয়মিত সৈন্য বাহিনী ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ বিরতি সীমানা বরাবর লড়াই চালিয়ে যাবে। পাকিস্তান এই ধরনের পরিকল্পনাই ভারতের বিরুদ্ধে রচনা করেছে। সম্প্রতি জম্মু কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানী বিমানের যে অনুপ্রবেশ ঘটছে তা এই যুদ্ধ পরিকল্পনা অংশ বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
তবে পাকিস্তানের এই বিপুল সমর সজ্জার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত জম্মু-কাশ্মীর ও পাঞ্জাব সীমান্তে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে পাক বাহিনীর গুলি বর্ষণ
গতকাল বিকালে রাজার সেক্টরে যুদ্ধ বিরতি-সীমারেখার উপর থেকে পাক গুলি বর্ষণের দুটি ঘটনা ঘটে। হাল্কা এবং মাঝারি পাঞ্জাব মেশিনগানের সাহায্যে পাকিস্তানী সৈন্যরা জিম্মলপুর থেকে পাঁচঘার জিগল-পূর্ব ও সুথুনাভিন থেকে ৩০ বার গুলি ছোড়ে। ঘটনা দুটি রাষ্ট্রসংঘ পর্যবেক্ষকদের গােচরে আনা হয়েছে।
১৬ নভেম্বর পাঞ্জাবের সীমান্ত অঞ্চলে আটজন সশস্ত্র পাক টহলদার ভারতীয় এলাকায় অনুপ্রবেশ করে। আমাদের টহলদার বাহিনী তৎক্ষণাৎ সেখানে উপস্থিত হয়। পাক সেনারা লম্বা ঘাসের আড়াল দিয়ে পালিয়ে যায়। ঐ দিনই কারগিলের উত্তর পূর্ব পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ১৪ জন সশস্ত্র সৈন্যকে যুদ্ধ বিরতি সীমারেখার পাঁচশাে গজের মধ্যে চলাফেরা করতে দেখা যায়। যুদ্ধ বিরতি সীমারেখা লঙ্নের বিরুদ্ধে একটি অভিযোেগ দায়ের করা হয়েছে।
পূর্ব সীমান্ত গত তিনদিনে পাক সৈন্যরা ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেকগুলি অসামরিক এলাকায় বিনা প্ররােচনায় গুলি বর্ষণ করে। গতকাল তারা মেঘালয়ের তিনটি সীমান্ত এলাকায় গােলাবর্ষণ করে। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী গুলির জবাব দেয়। গত ১৬ নভেম্বর রাণাঘাটের পূর্ব সীমান্ত এলাকায় একদল পাক টহলদার সৈন্য অনুপ্রবেশ করে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের দিকে ছােট আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুঁড়লে তারা পালিয়ে যায়। ঐ দিনই পাক সৈন্যরা গঙ্গারামপুর সীমান্ত এলাকায় গুলিবর্ষণ করে।

সূত্র: কালান্তর, ১৯.১১.১৯৭১