তিন মার্কিন সাংবাদিককে স্বদেশে ফেরৎ পাঠানাে হল
অনুমতি ছাড়াই সীমান্ত অতিক্রমের অভিযােগ
কলকাতা, ২৪ নভেম্বর-আজ তিন মার্কিন সাংবাদিককে সীমান্ত এলাকায় অনুমতি ছাড়াই ঘােরাফেরা করা ও তথ্যাদি সংগ্রহের দায়ে ধরে স্বদেশে ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই তিন মার্কিন সাংবাদিক কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের প্রতিনিধি হিসাবে কলকাতা এসেছিলেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দেশের নিরাপত্তার জন্য কতকগুলি এলাকা বিদেশীদের কাছে নিষিদ্ধ এবং সম্প্রতি সরকার এক আদেশবলে বিদেশীদের সীমান্ত এলাকায়ও গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত করেছেন। বিদেশীদের সীমান্ত এলাকায় ও উত্তরবঙ্গে যাবার জন্য সরকারের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়। উল্লিখিত সাংবাদিক ক্রয় বিনা অনুমতিতেই সীমান্ত এলাকায় চলে গিয়েছিলেন যদিও সমস্ত সাংবাদিকই এটা জানেন যে, বিনা অনুমতিতে সীমান্তে যাওয়া নিষেধ। বাঙলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম তীব্র হবার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা মহানগরীতে দলে দলে বিদেশী সাংবাদিকরা এসে ভীড় করতে শুরু করেছেন। এদের মধ্যে বেশীর ভাগই মার্কিন ও ব্রিটিশ এবং এঁদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন অখ্যাত অজ্ঞাত আঞ্চলিক পত্রিকার প্রতিনিধির পরিচয়ে এখানে এসে রয়েছেন।
কলকাতায় বর্তমানে এহেন নবাগত বিদেশী সাংবাদিকের সংখ্যা হল প্রায় সওয়াশ। এদের মতে সকলেই নিছক সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন, একথা কেউ পৃথক করে বলতে পারে না।
জানা গেল, একজন বিদেশী পশ্চিনী সাংবাদিক গাড়ি করে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি যাবার জন্য অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট অফিসারকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, “আপনারা যদি এই ব্যবহার করেন, তা হলে আমি লিখব, এই দেশটা রাশিয়ার চাইতেও খারাপ!
সাংবাদিক প্রবর অবশ্য অনুমতি পান নি।
নয়াদিল্লী থেকে ইউ এন তা জানাচ্ছে, ভারত সরকার প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরাে এক বিবৃতিতে আজ বলেছেন যে, অন্য সমস্ত দেশে | মতাে এদেশেও কতকগুলি এলাকা নিরাপত্তার কারণে বিদেশীদের কাছে উন্মুক্ত নয়। “আমাদের সীমান্তে পাকিস্তানের বৈরীতামূলক কার্যকলাপ ও মনােভাবের দরুন এবং গত কয়েক সপ্তাহ করে আমাদের সীমান্তে অবিরাম তারা গােলা বর্ষণ করার ফলে আমাদের সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকাগুলিতেও বাধা নিষেধের ক্ষেত্র প্রসারিত এইসব এলাকায় যাতে বিদেশীদের কায়িক নিরাপত্তা বিপন্ন না হয় এবং এই এলাকাগুলিতে যানবাহন, থাকা খাওয়ার অভাবে যাতে বিদেশীরা অসুবিধায় না পড়েন, সেজন্য এই সব অঞ্চলে পারমিট নিয়ে বিদেশীদের যাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
এমনকি সীমান্ত এলাকায়ও “সংবাদ সগ্রহের স্বাধীনতা যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য ভারত সরকার খুবই আগ্রহী এবং জনস্বার্থ, জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সামর্থ বিবেচনা করে তার ভিত্তিতেই প্রেসইনফরমেশান ব্যুরাে কর্তৃক পারমিট দেবার ব্যবস্থা রয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ২৫.১১.১৯৭১