মাতৃভূমি রক্ষার প্রশ্নে রাজনীতি বা রাজনৈতিক বিসংবাদের স্থান নেই
রাজ্যপাল সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ
নয়াদিল্লী, ২৬ নভেম্বর (ইউ এন আই)-পাকিস্তানের সামরিক শাসকগােষ্ঠী যদি উছুঙ্খল ও নির্দয় আরচন সংযত না করে তবে তাদের ভয়াবহ পরিণামের সম্মুখীন হতে হবে। রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি আজ রাজ্যপালদের সম্মেলন উদ্বোধন করার সময় এই মর্মে পাকিস্তানের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, মাতৃভূমি রক্ষার প্রশ্নে রাজনীতি অথবা রাজনৈতিক বিসংবাদের কোন স্থান নেই।
তিনটি পাকিস্তানী স্যাবার জেটকে গুলি করে নামানাের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন পাকিস্তানের এ ঘটনাই চোখ মেলে তাকাবার পক্ষে যথেষ্ট।
বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ হ’ল শেখ মুজিবসহ অন্যান্য নির্বাচিত নেতাদের মুক্তি দেওয়া এবং তাদের সঙ্গেই মীমাংসায় উপনীত হওয়া।” “আমরা এখনও আশা করি পাকিস্তানী শাসকচক্র তাদের ভুল পথ থেকে সরে আসবে কিন্তু সেই ভুল থেকে যে বিপদের আশংকা দেখা দিয়েছে তাকে যেন আমরা কোনমতেই ছােট বলে মনে না করি”।
ভারত সর্বদাই পাকিস্তানের মঙ্গল চেয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে আমাদের কোন বিবাদ নেই এবং আমরা মনে করি শান্তি ও বন্ধুত্বের মধ্যে আমাদের বসবাস করতেই হবে”। অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে তিনি শাসকবর্গ বিশেষ করে বর্তমান সামরিক চক্র বার বার আমাদের সঙ্গে বিপজ্জনক বৈরিত সৃষ্টি করছে।”
“গত কয়েক দিন ধরে পাকিস্তান যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গী গ্রহণ করেছে তার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “ভারত এক পরিণত জাতি এবং তা আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন না করা পর্যন্ত সে প্ররােচনার ফাদে পা দিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে না।” রাষ্ট্রপতি বলেন, “পূর্ববাঙলার মানুষের বৃহত্তম ট্র্যাজেডী হ’ল এই দুর্বিসহ ঘটনার প্রতি বিশ্বরাষ্ট্রগােষ্ঠীর উদাসীনতা এবং মানুষের অধিকার মানবিক মূল্যবােধগুলিকে রক্ষা কার স্বার্থে সুনিশ্চিত ভাবে তাদের এগিয়ে না আসা।”
এর আগে রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালদের কাজের পদ্ধতি ও দায়িত্ব সম্পর্কে পর্যালােচনা কমিটির প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ভারত নিজে থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে না তবে জাতিকে যে কোনও জরুরী অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাঙলাদেশ সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী সমস্ত রকম পরিস্থিতির মােকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।
জানা গেছে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যপালদের বলেছেন যে, বাঙলাদেশের ঘটনার কোন বৃহৎশক্তি পাকিস্তানের পক্ষে সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করবে না।
সূত্র: কালান্তর, ২৭.১১.১৯৭১