বাঙলাদেশের স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রস্তাব আসছে
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ২১ সেপ্টেম্বর—আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের যে অধিবেশন হবে, সেখানে বাঙলাদেশের স্বীকৃতি, শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি এবং পাক সরকারকে সমস্ত রকম সাহায্য দান বন্ধ করার দাবি জানিয়ে ২২০ জন পার্লামেন্ট সদস্য এক প্রস্তাব উত্থাপনের নােটিস দিয়েছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির সদস্য মিঃ ফ্রেড ইভান্স আজ এখানে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি জানান যে, ঐ প্রস্তাবে স্বাক্ষরকারী পার্লামেন্ট সদস্যদের অধিকাংশই লেবার পার্টির তবে কয়েকজন সরকারী রক্ষণশীল দলেরও আছেন।
মিঃ ইভান্সের মতে পৃথিবীর সমস্ত দেশের মনােভাব নির্ধারিত হয় দুই বৃহৎ শক্তি-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়নের মনােভাবের দ্বারা। সুতরাং বৃহৎ শক্তি মার্কিন দেশের সঙ্গে যদি ব্রিটেন একযােগে পাকিস্তানের ফ্যাসিবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট কর্মপন্থা অবলম্বন করে, তাহলে বাঙলাদেশে পাকিস্তানী ফ্যাসিবাদী আক্রমণ বন্ধ করা যায়।
তিনি বলেন যে, বাঙলাদেশের প্রশ্নটি আদৌ পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন নয়, এ প্রশ্ন হল মানবিক অধিকারের প্রশ্ন। বাঙলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের যে মতামত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছে, পাকিস্তানের শাসকরা তাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ফ্যাসিবাদী নিপীড়নের আশ্রয় নিয়েছে।
মিঃ ইভান্স আরাে বলেন যে, ব্রিটেনের মানুষ ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সুতরাং বাঙলাদেশ পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট অত্যাচারের বিরুদ্ধে সক্রিয় হবার নৈতিক দায়িত্ব ব্রিটিশ জনসাধারণের রয়েছে, তাঁরা এ ব্যাপারে চুপ করে থাকতে পারে না। তিনি জানান, ব্রিটিশ জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বাঙলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল। তিনি মনে করেন একটা জাতি গঠিত হবার জন্য যে স্বকীয় ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও নৃজাতিগত উপাদান থাকা দরকার তার সবই বাঙলাদেশের রয়েছে। সেই বাঙলাদেশের মানুষের রায়কে অস্বীকার করার অর্থ হল তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষ হিসাবে আমরা বুলেট নিয়ে ব্যালটের রায়ের জবাব দেবার ফ্যাসিবাদী পদ্ধতি সহ্য করতে পারি না।”
তিনি মনে করেন যে, বাঙলাদেশে পাক সেনাদের অত্যাচার ও শরণার্থী আগমন অব্যাহত থাকে তাহলে ভারত সামরিক ব্যবস্থা অবলম্বনে বাধ্য হতে পারে। সুতরাং খুব বেশি দেরী হয়ে যাবার আগেই পৃথিবীর সমস্ত দেশের সরকার ও জাতি সঙ্ঘের উচিত বাঙলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়া।
সূত্র: কালান্তর, ২২.৯.১৯৭১