পশ্চিম রণাঙ্গনে কারগিলের কাছে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পাক-ঘাঁটি দখল
সিন্ধু অঞ্চলের নয়াচোরের কাছে তীব্র সংঘর্ষ
নয়াদিল্লী, ৯ ডিসেম্বর (ইউ এন আই)-আজ বেলা ১টায় কারগিলের উত্তর পূর্বে ১৩,৬২০ ফুট উঁচু জায়গায় , অবস্থিত ৫টি পাক ঘাটি আমাদের সৈন্যরা দখল করেছে। এই স্থান থেকে লাদাকের রাজধানী চলে যাবার পথটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনী এই ঘাঁটিগুলি দখল করেছিল তবে তাসখন্দ চুক্তি অনুসারে এগুলি তাদের ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
পশ্চিম রণাঙ্গনের সমস্ত অঞ্চলেই ভারতীয় বাহিনী শত্রুসৈন্যদের বেকায়দায় ফেলেছে।
ছাম্ব অঞ্চলে আমাদের বাহিনী মুন্নাওয়ারা তেওয়াইর পূর্ব পারে পাক অধিকৃত এক ঘাঁটি থেকে তাদের হটিয়ে দিয়েছে। এবং পাক বাহিনীকে নদীর পশ্চিম তীরেই প্রতিহত করে রেখেছে।
সিন্ধের অভ্যন্তরে ৮০০ বর্গ মাইল পাকিস্তানী অঞ্চলে আমাদের বাহিনী নিজেদের সুসংহত করে নয়াচোরে পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে একটি বড় রকমের যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে। নয়াচোরে একটি পাকিস্তান ব্রিগেডের সদর দপ্তর।
জয়সলমির রণাঙ্গনে লঙ্গেওয়ালার পশ্চিমে একটি অঞ্চলে ৪টি পাকিস্তানী সেরমান ট্যাঙ্কের ধ্বংসাবশেষ লক্ষ্য করা গেছে। এই অঞ্চলে শত্রুবাহিনী নির্মূল করার কাজ চলছে।
কচ্চ রণাঙ্গনে কেলােরের ১০৮ কিলােমিটার দক্ষিণে নগর পরিকর দখল করা হয়েছে।
ছাম্ব রণাঙ্গনে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। ভারতীয় বাহিনী পশ্চিম দিকে প্রায় ৬ কিলােমিটার পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে এবং শত্রুদের এক নতুন আক্রমণ প্রতিহত করেছে।
জম্মু-মাধােপুর (পাঞ্জাব) অঞ্চলে ভারতীয় বাহিনী অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানী গ্রাম দরমন, ধাহলারা ও বারির কাছে গিয়ে পৌঁছেছেন।
নৌশেরায় আমাদের বাহিনী কয়েকবার আক্রমণ চালিয়ে শত্রু ব্যুহ ভেদ করেছে এবং ২১ জন পাকসৈন্যকে খতম করেছে।
ডেরা-বাবা-নানক অঞ্চলে গতকাল শত্রুরা ভিন্দি বাউলকের ঘাঁটিতে হানা দেবার চেষ্টা করলে ভারতীয় গােলন্দাজবাহিনীর আক্রমণের মুখে তারা পলায়ন করে।
পুঞ্জ রণাঙ্গনেও শত্রুরা প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হওয়ার ফলে গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের পক্ষ হতে কোনাে গােলাগুলির শব্দ পাওয়া যায় নি।
সেনানায়ক লেঃ জেনারেল ক্যাণ্ডেথের বক্তব্য
পশ্চিম রণাঙ্গনের সেনানায়ক লেঃ জেনারেল ক্যাণ্ডেথ সাংবাদিকদের বলেন যে, ছাষে এখন অবস্থা অনেক স্থায়ী হয়েছে। প্রচণ্ড বিমান হানার ফলে বহু শত্রু সৈন্য হতাহত হয়েছে বলে তিনি জানান।
পাকবাহিনী মুন্নাওয়ার-ততাওয়াই অতিক্রম করে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে বলে শত্রুরা যে দাবি করছে, তা ভিত্তিহীন ও আজগুবি” বলে তিনি উল্লেখ করেন।
লেঃ জেনালের ক্যাণ্ডেথ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে শত্রুরা মাত্র ছাম্ব এলাকায় কিছুটা অগ্রসর হতে পেরেছে।
তিনি বলেন, ডেরা-বাবা নানকে পাক-বিমান আক্রমণ আমরা প্রতিহত করেছি। ব্রীজেরও বিশেষ ক্ষতি হয় নি।
অন্যান্য প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান যে, চীনা সৈন্য চলাচলের কোনাে চিহ্ন দেখা যায় নি। খেমকরণ এলাকায় সীমান্তবর্তী অঞ্চরে প্রচণ্ড গােলাবর্ষণ করা হয়েছে।
করাচী ত্যাগের হিড়িক
ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদে বলা হয়েছে যে, করাচী বন্দরের সংলগ্ন সুলতানবাগ রােড শহর ত্যাগকারী গাড়ির ভীড়ে প্রায় অবরুদ্ধ হয়ে গেছে। ভারতীয় বিমান বহরের প্রচণ্ড আক্রমণের ফলেই তা হয়েছে বলে উক্ত সংবাদে বলা হয়েছে।
সূত্র: কালান্তর, ১০.১২.১৯৭১