You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.31 | বাঙলাদেশে নির্মিত কাহিনী চিত্র ভারতে মুক্তি প্রতিক্ষায় | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশে নির্মিত কাহিনী চিত্র ভারতে মুক্তি প্রতিক্ষায়
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ২৯ অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাঙলাদেশের খ্যাতনামা চিত্র পরিচালক জহীর রায়হান প্রযােজিত ও পরিচালিত এবং খাস বাঙলাদেশে নির্মিত বাঙলা কাহিনী চিত্র জীবন থেকে নেয়া ভারতে প্রথম মুক্তি পেতে চলেছে। আজ তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ মিশনে বাঙলাদেশের হাইকমিশনার জনাব এম, হােসেন আলী চিত্রটির ভারতীয় পরিবেশক বলাকা পিকচার্সের শ্রীহরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে যুক্তভাবে এক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের আগে এক ঘরােয়া অনুষ্ঠানে জনাব হােসেন বলেন, “বাঙলাদেশ এই প্রথম ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক দিক থেকে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। আমরা চাই, এই প্রয়াস পরিপূর্ণভাবে সফল হােক। কারণ এই সাফল্যের শীর্ষ দেশেই আমরা ব্যাপকতর বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিতে চাই।…এটাই ভারতে বাংলাদেশ থেকে আনা প্রথম চলচ্চিত্র। এই ছবি যেমন অত্যাচারী শাসকদের মানসিকতা তুলে ধরেছে তেমনি বাঙলাদেশের জনগণের মানসিকতারও দর্পণ ও চিত্র। এর সাহায্যে আমাদের দুদেশের জনগণের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক দৃঢ়তর হবে বলে আমি মনে করি।”
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জহীর রায়হান ও তাঁর স্ত্রী প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুচন্দা, যিনি এই ছবির মূল নায়িকা। প্রসঙ্গতঃ কাহিনীর লেখক এবং চিত্রনাট্যকারও জহীর রায়হান।
জহীর রায়হান জানান, ১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি চিত্র নির্মাণ শুরু করেন এবং তিন মাস অক্লান্ত খেটে ছবিটি প্রস্তুত করেন। “সবাই জানে, সামরিক শাসন চলাকালে সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে কোন ছবি তৈরি করা দুরূহ ব্যাপার। তাই কি ছবি তৈরী করছি তা প্রথম থেকেই গােপন রাখতে হয়েছিল। স্যুটিং প্রায় শেষ হয়ে এসেছে এমন সময় ছবিটি যথানির্দিষ্ট সময় মুক্তি পাবে না বলে জানানাে হল। কারণ জানতে চাইলে ওঁরা বললেন কারণ দর্শানাের প্রয়ােজন নেই। আমি জানালাম, তাহলে নতুন সামরিক আইন চালু কর। কারণ পুরনাে আইন অনুযায়ী সেন্সর বোের্ড ছবি দেখানাের অনুমতি দিলে সেটা মুক্তি পেতে বাধ্য। সেন্সর বাের্ডে বেসরকারী ৭ জন প্রতিনিধি এবং সরকার পক্ষের ৫ জন প্রতিনিধি ছিলেন। ফলে সেন্সর বাের্ড সংখ্যাধিক্যের ভােটে ছবিটি দেখানাের অনুমতি দিয়ে দিল। কিন্তু পরদিন, যেদিন ছবিটি মুক্তি পাবার কথা, সেদিন সামরিক কর্তৃপক্ষ ছবি দেখানাে নিষিদ্ধ করে দিলেন। এর প্রতিবাদে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপের পরে ছবিটি দিন পাঁচেকের জন্য বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানাে হয়।…ছবিটি এখন আমি বাঙলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছি এবং এর প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য ব্যয় করা হবে। প্রসঙ্গত; চুক্তিপত্র অনুসারে বলাকা পিকচার্সের পক্ষ থেকে আজ ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জনাব হােসেন আলির হাতে তুলে দেওয়া হয়। এটাও মুক্তিযােদ্ধাদের তহবিলে সংযােজিত হয়।

সূত্র: কালান্তর, ৩১.১০.১৯৭১