১৫ দিনের জন্য পূর্ববঙ্গে প্রবেশ নিষিদ্ধ করিয়া সরকারের আদেশ জারী
ঢাকা, ১৫ই ডিসেম্বর। পূর্ববঙ্গ সরকার অদ্য হইতে পনর দিনের জন্য আনন্দবাজার, স্বাধীনতা ও ইত্তেহাদ এই তিনটি দৈনিক পত্রিকার পূর্ববঙ্গে প্রবেশ নিষিদ্ধ করিয়াছেন।
এই সম্পর্কে পূর্ববঙ্গ সরকারের এক প্রেসনােটে বলা হয়- ‘গত শুক্রবার ঢাকা শহরের অধিবাসীদের বাঙ্গলা ভাষার সমর্থক ও উর্দুর সমর্থক দুই শ্রেণীর মধ্যে একটি ছােটখাট দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে। পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারতের মুসলমানদের মধ্যে ভেদ সৃষ্টির নীতিরই অংশ হিসেবে অবাঙালি মুছলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্য কলিকাতার কতিপয় সংবাদপত্র উপরােক্ত ঘটনার সুযােগ গ্রহণ করিয়াছে। এই সংবাদপত্রগুলি হইতেছে আনন্দবাজার, ইত্তেহাদ ও স্বাধীনতা।
এই সকল পত্রিকা তাহাদের গতকল্যকার সংখ্যার সম্পাদকীয় মন্তব্যে এই প্রদেশের অবাঙ্গালী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযােগ করিয়াছে। এমনকি অবাঙালি মুসলমান অফিসাররা এই প্রদেশে উর্দু ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করিবার জন্য ষড়যন্ত্র করিতেছেন বলিয়াও অভিযােগ করা হইয়াছে। এই প্রদেশের অধিবাসীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হইতে পারে এরূপ বিষয় প্রকাশ করা সংবাদপত্রগুলির পক্ষে ইহা প্রথম নহে। এদেশের মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে এবং শান্তিভঙ্গে উস্কানি প্রদানের উদ্দেশ্যে পরিচালিত উক্তরূপ প্রচার কাৰ্য্য সরকার কিছুতেই বরদাস্ত করিতে পারে না। এইরূপ প্রচার কার্যে নিযুক্ত ভারতীয় ইউনিয়নের সংবাদপত্র ও ব্যক্তিকদের ইহা বুঝা উচিত যে পূৰ্ব্ব বঙ্গ সরকার ইহার কোন অঞ্চলে তাহাদের প্রচারের অনুমতি দিতে পারে না। সুতরাং সরকার অদ্য হইতে পনর দিনের জন্য উপরােক্ত তিনটি সংবাদপত্রের পূর্ববঙ্গে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। সরকার সঙ্গে সঙ্গে ইহাও বলিতে চান যে, ভাষা সম্পর্কিত বিরােধের সমগ্র বিষয়টিই অপ্রাসঙ্গিক এবং কোন দিক দিয়াই অবাঙালি মুসলমানের সহিত ইহার কোন সম্পর্ক নাই। এই প্রদেশের রাষ্ট্র ভাষা কি হইবে সেই প্রশ্ন সম্পর্কে এই প্রদেশবাসীর ইচ্ছানুযায়ী যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইবে।
দৈনিক আজাদ, ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৪৭