ঢাকায় বাংলা ও উর্দু ভাষা সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
রাষ্ট্রভাষারূপে উর্দু দাবি করিয়া প্রচার করার জের
২০ জনেরও অধিক ব্যক্তি আহত
ঢাকা, ১২ই ডিসেম্বর। – বাঙ্গলা-উর্দু লইয়া যে বিরােধ চলিতেছিল তাহা লইয়া দুই দল মুছলমানের মধ্যে আজ একটী সংঘর্ষ হইয়া গিয়াছে। এই সঙ্ঘর্ষে কয়েক ব্যক্তি আহত হইয়াছে। | অদ্য রাতে বাসে করিয়া কতিপয় মুছলমান যুবক প্রচার করিতে থাকে যে, “উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হউক’ ‘এই প্রচারবাহিনী’ পলাশী ব্যারাকের নিকটে পৌছিলে এক সঙ্ঘর্ষ বাঁধিয়া যায় এবং লাঠি ও ইটপাটকেল ব্যবহৃত হয়। অন্যান্য কয়েকটি স্থানেও বাঙ্গলা ও উর্দু ভাষার সমর্থকদের মধ্যে কয়েকবার সঘর্ষ হয়।
বৈকাল ৩টা পর্যন্ত ২০ জনেরও অধিক লােক আহত হয়। ইহাদের মধ্যে ১৭ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়িয়া দেওয়া হয়।
ইহার পর বাঙালি মুছলমানের বিরাট একদল জনতা রমনা ও সেক্রেটারিয়েট অঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং অবিলম্বে বাঙ্গলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা রূপে গ্রহণের দাবি জানায়।
সরকারি এশতেহার : পূর্ববঙ্গ সরকার রাজধানীর অদ্যকার ঘটনা সম্পর্কে এক এশতেহারে জানাইয়াছেন যে, অদ্যকার একটি ঘটনায় প্রায় ২০ জন আহত হয়। ইহাদের মধ্যে ২ জনকে হাসপাতালে রাখিয়া বাকী সকলকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছাড়িয়া দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর শহরে প্রবল গুজব ছড়াইতে থাকে এবং প্রবল উত্তেজনার সঞ্চার হয়। | প্রকাশ যে, কতিপয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রাতে একটী বাসে করিয়া প্রচার করিতে থাকে যে, উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করিতে হইবে। পলাশী ব্যারাকের অধিবাসীগণ ও অন্যান্যরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র উক্ত ঘােষণাতে আপত্তি করিলে সংঘর্ষ বাঁধিয়া যায় এবং ইহার ফলে উক্ত ব্যক্তিগণ আহত হন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে এবং সাবধানতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উক্ত এলাকায় পিকেট বসানাে হয়। এই ঘটনার পরই শহরে ভীষণ গুজব ছড়াইতে থাকে এবং বলা হয় যে, দুই-তিন ব্যক্তি নিহত হইয়াছে। অপর একটি গুজবে বলা হয় যে, পুলিশ লাঠি অথবা গুলি চালাইয়া উক্ত ব্যক্তিদের হতাহত করিয়াছে।।
গুজবে ত্রাসের সঞ্চার করে এবং অপরাহ্নের দিকে একটি শােভাযাত্রা সরকারি দফতরের কাছে গিয়া বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। যাহা হউক বেশ ভালােভাবেই উত্তেজনা প্রশমিত করা হয়। মাননীয় কৃষিমন্ত্রী জনাব সৈয়দ আহমদ আফজল ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব আবদুল হামিদ শােভাযাত্রাকারীদের নিকট গিয়া তাহাদিগকে শান্ত হইবার অনুরােধ জানান। জনাব আবদুল হামিদ বলেন যে ভাষায় প্রশ্ন লইয়া এত বাকবিতণ্ডার প্রয়ােজন নাই। কারণ পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের ইচ্ছার উপর ইহা নির্ভর করিতেছে। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রধান সেক্রেটারি সমবেত জনগণকে বলেন যে, নতুন রাষ্ট্রের শাস্তি, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা একান্ত প্রয়ােজন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন যে, সকালের ঘটনার জন্য যাহারা দায়ী তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইবে। শােভাযাত্রাকারীরা বেশ শান্তভাবে তাঁহাদের কথা শােনেন এবং প্রতিশ্রুতি পাওয়ায় তাঁহারা ধীরে ধীরে চলিয়া যান। সকাল বেলার ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত চালাইতেছে। তাহারা বিশেষ করিয়া উস্কানিদাতাদের খুঁজিয়া বাহির করার চেষ্টা করিতেছে। এপর্যন্ত যেসব সংবাদ পাওয়া গিয়াছে তাহাতে ইহাই বুঝা যাইতেছে যে, রাষ্ট্রের শত্রুরাই উস্কানি দিয়াছে, কারণ, ইহারা এদেশের মুছলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য সচেষ্ট। —এ, পি
প্রতিবাদ সভা
অদ্য অপরাহ্নে পূর্ববঙ্গ সেক্রেটারিয়েট প্রাঙ্গণে সেক্রেটারিয়েট কর্মচারিদের এক সভায় এই হামলার নিন্দা। করা হয় এবং হাঙ্গামা সম্পর্কে তদন্তের দাবি করা হয়। বাংলাকে পূর্ববাংলার রাষ্ট্রভাষা করার দাবি করা হয়।
হাঙ্গামার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সরকারি কর্মচারীবৃন্দ হরতাল পালন করেন।
দৈনিক আজাদ, ১৩ই ডিসেম্বর, ১৯৪৭