You dont have javascript enabled! Please enable it! 1952.01.28 নাজিমউদ্দিনের ভাষা সংক্রান্ত বক্তৃতা | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

ভেদাভেদ ভুলিয়া ঐক্যবদ্ধভাবে
রাষ্ট্রের খেদমতে আত্মনিয়ােগ করুন

পল্টন ময়দানের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান।
প্রদেশের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা
‘আজও সীমান্তপারের হুমকির অবসান হয় নাই। পাকিস্তানকে নিরাপদ ও শক্তিশালী করিয়া গড়িয়া তুলিতে হইলে সর্বপ্রকার ভেদাভেদ ভুলিয়া ঐক্যবদ্ধভাবে পাকিস্তানের সেবায় আত্মনিয়ােগ করিতে হইবে।
গতকল্য অপরাহ্নে পুরানা পল্টন ময়দানে এক বিরাট জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন দেড়ঘণ্টাব্যাপী বক্তৃতায় জনসাধারণের প্রতি উপরােক্ত আহ্বান জানান।
খাজা নাজিমুদ্দিন মরহুম কায়েদে আযমের বাণী উদ্ধৃত করিয়া ঐক্য, বিশ্বাস ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়া সকলকে জাতি ও দেশ গঠনের আহ্বান জানান।
প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী জনাব নুরুল আমীন এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা বেতারে প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী জনাব খাজা নাজিমুদ্দিন তাহার বক্তৃতায় বলেন, কায়েদে মিল্লাত মরহুম লিয়াকত আলীর মৃত্যুর পর আমার স্কন্ধে যে গুরু দায়িত্ব আরােপিত হইয়াছে সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করিতে হইলে পাকিস্তানের জনসাধারণের সহযােগিতাই আমার একমাত্র কাম্য। যাঁহারা পূর্ব পাকিস্তানকে সুদৃঢ় করিতে আমাকে সাহায্য করিয়াছেন, যাঁহারা আমার সকল সময়ের সাথী হিসেবে আমার সহিত কাজ করিয়াছেন এবং যাহাদের উপদেশে আমি উপকৃত হইয়াছি আজও আমি তাঁহাদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযােগিতা কামনা করি। আমার সহিত তাহারাও যে জাতির ও দেশের খেদমতের জন্য সবসময় প্রস্তুত আছেন, এ বিশ্বাস আমার আছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক পাকিস্তানি যদি স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে থাকিয়া দেশ ও জাতির খেদমতে আত্মনিয়ােগ করেন আমার গুরু দায়িত্বভার অনেকখানি লাঘব হইবে।
পূর্ব পাকিস্তানে এ যাবৎ যে সমস্ত উন্নতি সাধিত হইয়ছে তাহার বিস্তারিত আলােচনা করিবার পূর্বে জনাব খাজা নাজিমুদ্দিন দৃঢ়তার সহিত বলেন, প্রাদেশিক সরকার প্রদেশে জমিদারী উচ্ছেদ আইন পাস করিয়া মােসলেম লীগের নির্বাচনী ওয়াদা পালন করিয়াছেন। পূর্ববংগ সরকারকে এজন্য আমি মােবারকবাদ জানাইতেছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “এযাবৎ পূর্ব পাকিস্তানের কোনােই উন্নতি সাধিত হয় নাই বলিয়া কেহ কেহ মত প্রকাশ করিয়া থাকেন, এমনকি কোনাে কোনাে সংবাদপত্রেও এইরূপ সমালােচনা হইয়া থাকে। কিন্তু নিরপেক্ষভাবে বিচার করিয়া দেখিলে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নতির কথা কেহই অস্বীকার করিতে পারিবে না। এমনকি সফরে আগত বিদেশী প্রতিনিধিরাও পূর্ববংগের সর্বাঙ্গীন উন্নতির প্রশংসা করিয়াছেন।

প্রদেশের উন্নতির জন্য সরকারি সাহায্য
অতঃপর প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, এই প্রদেশের উন্নতিকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমান বৎসরে বহু অর্থ সাহায্য করিয়াছেন। পূর্ববঙ্গের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কি পরিমাণ অথ সাহায্য করিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী তাহার সংক্ষিপ্ত আলােচনা করেন।

প্রাদেশিকতার বিরুদ্ধে
প্রাদেশিকতার বিরুদ্ধে জনাব খাজা নাজিমুদ্দিন বলেন, পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করিতে যাইতেছি এবং যে ইসলামে কোনরূপ কুসংস্কার বা ভেদাভেদ নাই সেই রাষ্ট্রে কেমন করিয়া প্রাদেশিকতার বীজ বপন করা চলিতে পারে? | তিনি বলেন যে, মরহুম কায়েদে আযম বলিয়াছেন যে প্রাদেশিকতাকে যে বা যাহারা প্রশ্রয় দেয় তাহারা পাকিস্তানের দুশমন।।
পাকিস্তানের ভাষা সম্পর্কে জনাব খাজা নাজিমুদ্দিন মরহুম কায়েদে আযমের বক্তৃতা উদ্ধৃত করিয়া বলেন যে, প্রদেশের ভাষা কি হইবে তাহা প্রদেশবাসীই স্থির করিবে কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে উর্দু। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকিলে কোন রাষ্ট্র শক্তিশালী হইতে পারে না। সভার প্রারম্ভে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী জনাব নূরুল আমীন পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে চার কোটি নর-নারীর পক্ষ হইতে প্রধানমন্ত্রী জনাব খাজা নাজিমুদ্দিনকে সম্বর্ধিত করেন।

সূত্র: দৈনিক আজাদ, ২৮শে জানুয়ারি,১৯৫২