You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.05 | আত্মভুক পশ্চিমবাংলা ও বৃহন্নলা ভারতীয় রাজনীতি | কম্পাস - সংগ্রামের নোটবুক

আত্মভুক পশ্চিমবাংলা ও বৃহন্নলা ভারতীয় রাজনীতি

পূর্ববাংলা বা বাংলাদেশের উপর আমরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এত বেশি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছিলাম যে আমাদের এই বাংলায় বা পশ্চিমবঙ্গে কী হচ্ছে সে বিষয়ে মনােযােগ দিইনি। এটাই অবশ্য স্বাভাবিক, কেননা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সগ্রামটা কী আকার নেয়, সহজে সমাপ্ত হয় কিনা অথবা দীর্ঘায়ত একটা সংগ্রামে দাঁড়ায় কী না, অথবা একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় কীনা, লক্ষ লক্ষ শরণার্থী কী জাতীয় সমস্যায় ফেলে ভারত ও সীমান্তবর্তী ভারতীয় রাজ্যগুলােকে, তা থেকে যুদ্ধ বিগ্রহ দাঁড়ায় কী না, এগুলােই বােধহয় জাতির কাছে এবং বিশেষ করে বাঙালিদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের যেগুলাে ঘরােয়া বিষয়, ঘরােয়া ঝগড়া যার উপরে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে একটা অর্থহীন রাজনৈতিক অন্ধসগ্রাম চলেছে— সেগুলাে এবং সে কোন্দলগুলাে পূর্ববাং নার এই দিগন্ত-উন্মােচনকারী সংগ্রামে অন্তত ঢাকা পড়ে যাবে, এটাই আমরা আশা করেছিলাম। আজ পূর্ববাংলায় যে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম চলেছে, তার সমর্থনে এপারের বাঙালিরাও একটা ঐক্যবদ্ধ মাের্চা সৃষ্টি করে তাদের সাহায্য করবে, বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি ও প্রয়ােজনীয় সাহায্য যথাযথ দেবার জন্য ভারত সরকারের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করবে, ভারতে অবস্থিত বিদেশী দূতাবাসগুলাের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করবে—এ সবই আশা করা গিয়েছিল।
কিন্তু দুঃখের বিষয় পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক দলগুলাে এ বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারলাে না। প্রতিটি দলই গুটি কয়েক লােক ভােলানাে প্রস্তাব পাস করেই, এবং খবরের কাগজে বিবৃতি দিয়েই তাদের কর্তব্য প্রায় শেষ করে ফেললাে। বিধানসভাতেও একটা ভালাে প্রস্তাবের বাহাদুরী অবশ্য তারা রাখেন। যে কয়দিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিফৌজের সশস্ত্র প্রতিরােধগুলাে সক্রিয় ছিল, ততদিন সেখানকার জনসাধারণের মনােবল খুবই দৃঢ় ছিল, তাদের দলে দলে ভারতে পালিয়ে আসতে হবে সাময়িক আশ্রয়ের জন্যও একথাও তারা ভাবেনি। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে এপার ওপার বাংলার লক্ষ লক্ষ নরনারী পারস্পরিক সহৃদয়তা ও বন্ধুত্বের বন্যা ছড়িয়ে দিয়েছিল। সে দিন ভারতীয় বিশেষ করে পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক দলগুলাের ভূমিকাও খুব সােচ্চার ছিল, কে কার আগে বিবৃতি দিতে পারেন তার জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে গিয়েছিল। আজ সেই উচ্ছাস ও উদ্বেলতার কণা মাত্র নিদর্শনও সীমান্তে নেই। আজ আর এপার বাংলা থেকে হাজারে হাজারে লােকের ওপার বাংলায় যাবার কোনাে আগ্রহ নেই, উল্টো লক্ষ লক্ষ নরনারী সর্বস্বান্ত হয়ে এক বস্ত্রে এদেশে আশ্রয়ের জন্য ছুটে আসছে। তাদের কী অবস্থা সেটা খোঁজ নেবার জন্য কোনাে পার্লামেন্টারি ডেলিগেশন বা পশ্চিমবাংলার বিধানসভার ডেলিগেশন উদ্বাস্তু ক্যাম্পগুলাে দেখতেও যায় না। রাজনৈতিক দলগুলােও এই উদ্বাস্তুদের সঙ্গে দেখা করতেও ভয় পায় বলে মনে হয়। যা ছিল একদিন উচ্ছল আশাবাদ ও আনন্দের কোলাহল, এখন তা দাঁড়িয়ে গেছে এক অকূল অশ্রু সমুদ্রে, অতি বেদনাময়, রক্তমাখা নির্যাতনের এক চাপা ক্রন্দন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্তনাদে।
ইতিমধ্যেই পশ্চিমবাংলার দলগুলাে তাদের আসল” বা “মূল” স্বভাবে ফিরে গিয়েছে। সেই অন্তর্দ্বন্দ্ব, সেই নিরর্থক দলবাজী, সেই অন্ধ সংগ্রাম। বাংলাদেশের চেয়ে তাদের কাছে পশ্চিমবাংলাই বড় কথা! বাংলাদেশে মুজিবর রহমানের কী হলাে না হলাে, তার চেয়েও কী বড় কথা নয় পশ্চিমবাংলার মন্ত্রীসভা টিকলাে কি টিকলাে না এই সমস্যা?! কী করে প্রতিপক্ষের কিছু লােক স্বপক্ষে ভাগিয়ে আনা যায়, এটাই হচ্ছে পশ্চিমবাংলার বর্তমান গণতান্ত্রিক রাজনীতির একমাত্র দিবসের চেষ্টা ও রাত্রির স্বপ্ন।
মন্ত্রীসভার পতন-উত্থানের মাের্চাগুলাের মধ্যেও অহর্নিশ ক্ষুদ্র দলাদলির অন্ত নেই। মুসলীম লীগকে কী করে রাখা যায় বা ভাঙা যায়, অধিকতর মন্ত্রীত্বের আসন দিয়ে, সেই ন্যক্কারজনক দরাদরিতাে ছিলই, এমন কি বর্তমানে বাংলা-কংগ্রেসেও চলেছে এক অদ্ভুত দল ভাঙাভাঙির লড়াই! এই পরিপ্রেক্ষিতে যে তিনটি উপনির্বাচন হতে চলেছে তার উপর সকল দলের দৃষ্টি আজ নিবদ্ধ। যদি এখন তেমন অবস্থা হয়, যাতে বর্তমান মন্ত্রীসভার বিপদ আসতে পারে, তবে নাকি বিধানসভা আবার বাতিল করে দেবার প্রস্তুতিও তৈরি হচ্ছে!
এদিকে খুন জখমের রাজনীতি বা খুননীতি চলছে, চলবে। এক অদ্ভুত সন্ত্রাস আজ পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিদিন কয়েকটি খুন হবেই, এটা ধরেই নেওয়া হয়েছে। আর এই খুনগুলাে নাকি রাজনীতি প্রেরণা সম্ভুত! যে রাজনীতি থেকেই খুনখারাপি ও গােপন হত্যাকাণ্ড এসে থাকুক, এর লক্ষ্য কিন্তু আজ সব রাজনীতি স্তব্ধ করে দেওয়া। কোনাে প্রকার প্রকাশ্য রাজনীতি কেউ করতে পারবে না, এই যেন এর লক্ষ্য। নির্বাচনে যােগ দেওয়া যাবে না, ইউনিয়ন, কৃষক সমিতি শ্রমিক কৃষক ছাত্র যুবক প্রভৃতি শ্রেণীর কোনাে সক্রিয় সভা সমিতি সংগঠন ধর্মঘট ঘেরাও কিছুই চলবে না, এমন কি প্রকাশ্য অফিস রাখাও নিরাপদ নয়, রাস্তায় চলাফেরা করা পর্যন্ত নিরাপদ নয় সশস্ত্র পাহারা ছাড়া নেতাদের চলাফেরা পর্যন্ত বন্ধ! তবে এই খুনী রাজনীতির উদ্দেশ্য কী? লক্ষ্য কী? রাজনীতিকে খুন করা এর উদ্দেশ্য। কেউ আর রাজনীতি করতে পারবে! এ রাজনীতি শেষ পর্যন্ত রাজনীতিকেই গলাটিপে মারবার জন্য উদ্যত। সর্বত্র একটা ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। জনসাধারণের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে বিপ্লব হবে? জনসাধারণের সব রকম সংগঠনগুলােকে বন্ধ করে দিলে বিপ্লব হবে? কোথায় জনসাধারণকে আরাে শক্তিমান, সাহসী এবং সঙ্ঘবদ্ধ করা হবে, না, তাদেরকে ভয় পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। যে গােপনচারী হত্যাকারীর দল মনে করছে যে জনসাধারণের সক্রিয় সহযােগিতার কোনাে প্রয়ােজন নেই, সকলকে ভয় পাইয়ে দিয়েই এই গােপনচারী হত্যাকারীরা বিপ্লব এনে ফেলবে তাদেরকে আর যে নামেই অভিহিত করা যাক না কেন, তারা যে বিপ্লবী নয় এ কথা বলা চলে। তারা সুবিধাবাদী রাজনীতিকে খতম করার নামে দেশ থেকে রাজনীতিই উঠিয়ে দিচ্ছে। তারা সত্যিই কার কাজ হাসিল করছে… এর দ্বারা?
এদিকে পুলিশ সি-আর-পি প্রভৃতি সরকারী যন্ত্র ক্রমশই এই হত্যাকাণ্ডকে রুখতে অসমর্থ হয়ে পড়ছে। পুলিশের গুপ্তবিভাগ সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে, কেননা ভীত সন্ত্রস্ত জনসাধারণ কোনাে সংবাদ পুলিশকে দিতে সাহস পায় না। উপরন্তু কাউকে কোনাে প্রকৃত দোষীকে ধরতে না পেরে, নিরাপরাধ ব্যক্তিদের ধরে নিয়ে গিয়ে তারা অকথ্য অত্যাচার করছে। তাতে জনসাধারণের অসহায়তা ও পুলিশ-বিরােধী মনােভাব যাচ্ছে আরও বেড়ে। ফলে উভয় পক্ষ থেকেই সন্ত্রাসের এক অদ্ভুত রাজত্বে তারা মুখ বুজে মার খাচ্ছে কোনাে প্রতিবাদ করার সাহস থাকছে না। অদ্ভুত “বিপ্লবী” অবস্থা বটে!
পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক ও সামাজিক বুনিয়াদ যাচ্ছে সমূলে ধ্বংস হয়ে। বেকার সমস্যা ও দারিদ্র হু হু করেই বেড়ে চলছে, অন্তঃসারশূন্য হয়ে যাচ্ছে আমাদের আর্থিক অবস্থা। আপাতত বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের উত্তেজনায় পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক অবক্ষয়ের ফলশ্রুতিটা যে বর্তমানে কী অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, তা হয়তাে কারাে খেয়াল নেই। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ পরিণামের প্রকৃত স্বরূপটা জনজীবনে বিশ্রীভাবে প্রকট হতে বাধ্য। আর ছড়িয়ে পড়ছে ঘনীভূত এক হতাশার সমুদ্র চারিদিকে অন্ধকার।
বলাবাহুল্য যদি পূর্ববাংলা বা বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতাে, তবে পশ্চিমবঙ্গের এই আত্মঘাতী রাজনীতির অধােগতিটাও বন্ধ হতে সন্দেহ নেই। পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের মনে ও চেতনায় আশাবাদ আবার ফিরে আসতাে। নৈরাশ্যবাদী বাতাবরণেই এই ক্ষুদ্রবুদ্ধির এমন আত্মঘাতী প্রকটতা দেখা দেয়। যে জাতির সামনে একটা ভবিষ্যৎ আছে, সে জাতি কখনাে এমন অন্ধসগ্রামে ও অন্ধদলাদলিতে লিপ্ত হয় না।
আজ পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা সত্যিই শােচনীয়। এবং ভয়াবহ। এর রাজনৈতিক দলগুলাে জানে না, কী করলে এ থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়, এর সরকার জানে না কী করলে কী হবে, এর পুলিশ জানে না কেমন করে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর শ্রমিক কৃষক মধ্যবিত্তরাও আজ কোনাে প্রােগ্রাম উপস্থিত করতে পারছে না। ভারত সরকারও জানে না কী করে এই অবস্থার সত্যিকার পরিবর্তন ঘটানাে যায়। নিরাপত্তা আইন, কেন্দ্রীয় পুলিশ পাঠিয়েও কিছু করা সম্ভব হলাে না, রাষ্ট্রপতির শাসন দিয়েও কিছু হলাে না, নির্বাচন দিয়েও কিছু হলাে না। অনেক সৈন্য পাঠালেও কিছু হবে না, সি-আর-পির পিছনে সৈন্যবাহিনী এসে দাঁড়ালেও কিছু হবে না। এ অবস্থার কোনাে তুলনা হয় না।
এদিকে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী (এক কোটি নতুন শরণার্থী শেষ পর্যন্ত এটা ধরে নেওয়া উচিত) এসে এ রাজ্যের অর্থনৈতিক সামাজিক ভারসাম্যের যতটুকু অবশিষ্ট আছে তাও অদূর ভবিষ্যতে নষ্ট করে দেবে। পৃথিবীর অপর কোনাে দেশ এসে এ বােঝা নেবে না। যতদিন যাবে, নেতৃত্বের বিহ্বলতা ও বিভ্রান্তি, অবস্থার জটিলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরাে বেড়ে যাবে। এদেশে যদি ঘাের সাম্প্রদায়িক একটা দাঙ্গা হাঙ্গামাও বেঁধে যায় তাতে আশ্চর্য হবার কারণ নেই, এবং সে দাঙ্গা ধর্ম সম্প্রদায়ের সীমা ছাড়িয়ে ভাষাগত জাতি-উপজাতিগত সংঘর্ষেও বিস্তৃত হয়ে যেতে পারে। এমন দুর্দিনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছাড়া, বেপরােয়া সাহস ছাড়া বােধহয় আর কোনাে পথ নেই। একটা যুদ্ধ অথবা সে জাতীয় কোনাে বৃহৎ সংকল্প ও কর্মপন্থাই হয়তাে জাতির সামগ্রিক দৃষ্টিকে ফিরিয়ে আনতে পারে। আসল perspective টা ফিরে আসতে পারে। গোঁজামিল ও পিছু হটার পথে এর কোনাে সমাধান নেই। আমরা বাঁচবাে কি মরবাে, ইতিহাসের ডাস ছাড়া আর কোথাও আমাদের কোনাে স্থান আছে কিনা সেটা দেখে নিয়ে মরাও ভালাে। তা অনেক শ্রেয় অসহ্য এই আত্মদাহ, আত্মহনন ও লজ্জাজনক অপমৃত্যুর বিলয় থেকে।
গায়ে পড়ে যুদ্ধ লাগিয়ে দেবার প্রস্তাব এটা নয়। গায়ে পড়ে যুদ্ধ লাগাতে চায় আজ পাকিস্তানই, কেননা পাকিস্তান তার নিজের প্রজাদের হাতে পরাজিত হওয়ার চেয়ে ভারতের হাতে পরাজিত হওয়া কম ক্ষতিকর মনে করে, কেননা তাদের দ্বিজাতিতত্ত্ব তাতে রক্ষা পায়, এবং নিজেদের পরাজয়ের কারণটা ভারতের উপর চাপিয়ে দিয়ে ভবিষ্যৎ কোনাে প্রতিশােধের ক্ষেত্র রচনা করার সম্ভাবনাও থেকে যায়। গায়ে পড়ে তাই আমাদের সীমান্তের ওপর গােলাবর্ষণ করতে তার দ্বিধা দেখা যাচ্ছে না। লক্ষ লক্ষ শরণার্থী এদেশে ঠেসে পাঠিয়ে দিয়ে প্রচুর প্ররােচনা দিতে কুণ্ঠিত নয়। এবং একথাও শােনা যায় যে, যে মুহূর্তে ভারত বাংলাদেশের সরকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং প্রকাশ্যে সামরিক সাহায্য দেবে, সেই মুহূর্তে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করবে। আবার আমাদের সরকার নাকি এই ভয়েই বাংলাদেশ দিচ্ছেন না। কিন্তু এই ভয় পুষতে গিয়ে কি আমাদের বিপদ কাটবে? বিপদ আরও কয়েক গুণ বাড়বে বই কমবে না। উপরন্তু ভারতের প্রতিবেশী এক রাজ্যে যদি এমনভাবে গণহত্যা চলে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়, কোটি কোটি নরনারী ভারতের সাহায্য চায় এমন দুর্দিনে, তবু ভারত যদি যুদ্ধের ভয়ে মুখ ফিরিয়ে থাকে, তবে কি বিশ্বমানবতার দুয়ারে ভারতের কোনাে মুখ থাকবে? এই লজ্জা ও অপরাধ নিয়ে কোনাে মুখে ভারতীয়দের মনােবলকেই রক্ষা করা যাবে? লক্ষ্যহীন আদর্শহীন স্বার্থবুদ্ধি সম্বল সত্তর কোটি মানুষের একটা দেশকে নিয়ে আমরা কী করব? প্রতিরক্ষা খাতে বছরে ১২৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কী আমরা রক্ষা করছি? আমাদের ভয়কে, লজ্জাকে, অপমানিত নির্লজ্জ পশুজীবনকে? এরই জন্য আমাদের অস্ত্রবল, এরই জন্য আমাদের রাষ্ট্র? ধিক সেই অস্ত্রবলে যে অস্ত্রবল কোনাে সকর্মে ব্যবহৃত হয় না, ধিক সেই রাষ্ট্রকে যার কোনাে লক্ষ্য নেই, কর্তব্য নেই, শক্তি নেই। এমন জঘন্য, ক্লিন্ন, নির্লজ্জ জীবন দিয়ে আমাদের কী লাভ, পৃথিবীরই বা কী লাভ?

সূত্র: কম্পাস, ৫ই জুন ১৯৭১