You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.15 | বাংলাদেশে পাকবাহিনীর নীতি ও কৌশল এবং তার প্রতিরােধ ব্যবস্থা | কম্পাস - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশে পাকবাহিনীর নীতি ও কৌশল এবং তার প্রতিরােধ ব্যবস্থা

পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী যথেষ্ট তৈরি হয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিরােধ আন্দোলনে একতাবদ্ধ কিন্তু সামরিক দিক দিয়ে অনভিজ্ঞ ও অপ্রস্তুত পূর্ববাংলার অধিবাসীদের উপর অভাবনীয় নৃশংস হামলা চালিয়ে তাদের দাবিয়ে দেওয়ার ব্যাপক চেষ্টা করছে। অনভিজ্ঞ আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবক দল এবং স্বল্প শিক্ষিত আনসার ও মুজাহিদেরা প্রধানত শহরাঞ্চলে সাধারণ বন্দুক, ও অল্পসংখ্যক রাইফেল দিয়ে আধুনিক মারণাস্ত্র সজ্জিত ও সুশিক্ষিত পাকবাহিনীকে কয়েকদিন প্রতিরােধের পর গ্রামে ও সীমান্ত এলাকায় হঠে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে জনসাধারণের সাহায্যে মুক্তিযযাদ্ধারা পাকা রাস্তা ও রেল লাইন বেশ সার্থকভাবেই ধ্বংস করতে পেরেছে। ইস্টপাকিস্তান রাইফেল ও বাঙালি রেজিমেন্টের সৈন্য এবং অফিসারেরা সংখ্যাল্পতা এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তাদের আংশিকভাবে নিরস্ত্র করে ফেলার জন্য বেশ কিছু দিন ধরে সম্মুখ যুদ্ধ চালিয়েও অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে সুশৃঙ্খল ভাবে পশ্চাদপসরণ (Tactical retreat) করেছে; তবু তারা অদ্ভুত সাহস ও রণকৌশল দেখিয়ে তাদের তুলনায় অনেক বেশি শক্ত সৈন্য খতম করতে পেরেছে এবং কিছুদিন শহরাঞ্চলে ও বর্তমানে প্রধানত গ্রাম ও সীমান্ত এলাকায় শত্রুর যােগাযােগ ব্যবস্থার উপর নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। বস্তুত পূর্ব বাংলার মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীকে আশাতিরিক্ত কাল ঠেকিয়ে রাখতে তাদের কৃতিত্ব ও অবদান অতুলনীয়।
যুদ্ধের প্রথম স্তরে পাক বাহিনী ঢাকা, যশাের, কুমিল্লা, সিলেট ও চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট এলাকা ও প্রধান সামরিক ঘাঁটিতেই সংকুচিত হয়ে পড়েছিল এবং মুক্তিযােদ্ধারা তাদের চারিদিক ঘিরে অবরােধ করে রেখেছিল। স্থল অঞ্চলের যােগাযােগ ও সরবরাহ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত হওয়ায় পাক সেনানী মণ্ডলী জলপথকেই প্রধান অভিযানসূত্র করার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং পদ্মাতীরস্থ একটি বন্দরকে মূল ঘাটি করে উপরােক্ত প্রধান সামরিক ঘাটি গুলাের সঙ্গে যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে; ওখানে রাশিয়ান উভচর ট্যাঙ্ক (যা জলে স্থলে চলতে পারে) গানবােট ও অন্যান্য জলযানের সমাবেশ এবং সম্প্রতি সর্ব প্রকার জলযান নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা এই পরিকল্পনার পরিচায়ক। ঐ ঘাটি এবং জল পথ সুরক্ষিত করার জন্য সাথে সাথে তারা প্যারাসুট ও হেলিকপ্টরের সাহায্যে সৈন্য নামিয়েছে; ঐ সব অঞ্চলে নদীপথ সরু হয়ে যাওয়ার ফলে তীরস্থ মুক্তিফৌজ কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার বিপদ আছে সেখানে সৈন্য নামানাে নিরাপদ করার জন্য পূর্ব মুহূর্তে বিমান থেকে বােমা ও মেশিনগান ছোড়া হচ্ছে। পথ প্রদর্শক ও গুপ্তচররূপে অবাঙালি, মুসলিম লীগ পন্থী বাঙালি ও ঘুষ ও প্রলােভনে বশীভূত সমাজ-বিরােধীদের নিয়ােজিত করা হয়েছে; তা ছাড়া সৈন্য বাহিনীর উপস্থিতিতে তাদের দিয়ে হিন্দু, আওয়ামী লীগ পন্থী মুসলমান এমন কি অন্যান্য অমুসলমানদেরও ব্যাপক ভাবে হত্যা, বাড়িঘর লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ ও নারী নির্যাতন করিয়েছে। সম্প্রতি তাদের বন্দুক ও রাইফেল দিয়ে বন পাহাড় এবং সীমান্ত অঞ্চলে গেরিলা মুক্তি ফৌজের অনুপ্রবেশ বন্ধ করার কাজেও নিযুক্ত করা হচ্ছে।
আগুনে পুড়িয়ে ও অন্য উপায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাটি ও অন্যান্য কেন্দ্রের চতুর্দিক এবং পাকা রাস্তার উভয় পাশে কয়েক মাইল ব্যাপী অঞ্চল পরিষ্কার করে ফেলা হচ্ছে, যাতে ঐ এলাকা থেকে গেরিলা বাহিনী গােপন আক্রমণ সংগঠিত না করতে পারে এবং নিজেদের গােলাগুলির পথ খােলা থাকে।
এতৎসত্ত্বেও পাকসৈন্যরা নিরাপদ মনে করতে পারছে না। তারা শুধু দিনের বেলায়ই স্থানীয় গুপ্তচর ও গাইডদের সামনে রেখে খুব সাবধানে অগ্রসর হয়; রাত্রে পরিত্যক্ত ঘরে যতদূর সম্ভব শােওয়া ও বসা কাজকর্ম করে এবং কোনাে ঘরে এক রাত্রির বেশি বাস করে না। বিমানের সাহায্যে সৈন্য ও সাজ সরঞ্জাম, খাদ্য ইত্যাদি নামানাের কাজও প্রধানত দিনের আলােতেই চলে।
উপরােক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্ণবর্ষার আগেই প্রধান ঘাঁটিগুলাে ও সরবরাহ পথ খােলা ও বিপদমুক্ত রাখাই তাদের উদ্দেশ্য। জনসাধারণের ক্ষেত্রে হিন্দু, আওয়ামী লীগ এবং বাঙালি কৃষ্টির বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালিয়ে, অন্য দিকে বন্দুক বাগিয়ে সন্ত্রাস ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কোনাে চেষ্টাই তারা বাদ দিচ্ছে না।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ এবং সর্বস্তরের মুক্তিযােদ্ধারা শহরাঞ্চল ছেড়ে গ্রাম ও সীমান্ত এলাকায় চলে আসছে এবং একদিকে সংগঠনের কাজ ও অন্যদিকে পূর্ণোদ্যমে গেরিলা যুদ্ধের ট্রেনিং ও প্রস্তুতি শুরু করেছে। শত্রুকে ব্ৰিত রাখার জন্য আক্রমণ অভিযান অব্যাহত ভাবেই জারি আছে। গ্রামাঞ্চল ও গুপ্তস্থানে তাদের যে ব্যাপক তৎপরতা চলছে তা বেতার বা খবরের কাগজ মারফত জানা সম্ভব নয় এবং স্বভাবতই প্রকাশ হওয়াও উচিত নয়। গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি সঙ্গত কারণেই সময় নেয়, কাজেই জনসাধারণের এতে বিচলিত বা অধৈৰ্য্য হওয়ার কারণ নেই।
গত ২রা মে হিন্দুস্থান স্টান্ডার্ডে পূর্ব বাংলার সামরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারতের প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ জেনারেল চৌধুরীর একটি বাস্তবধর্মী রচনা প্রকাশিত হয়েছে; এর বিচার বিশ্লেষণ তাঁর অনবদ্য প্রতিভা ও অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন সন্দেহ নেই। এতে একদিকে পাক সেনাধ্যক্ষদের সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও প্রাথমিক সাফল্যের স্বীকৃতি এবং অপর দিকে মুক্তিফৌজের দীর্ঘস্থায়ী গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই সমর বিজ্ঞান বিশারদ জেনারেল হিসাবে এবং সম্ভবত পূর্ব বাংলার মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে তার যথেষ্ট প্রত্যক্ষ পরিচয়ের অভাবে তিনি তাদের সম্ভাব্য গেরিলা যুদ্ধ অভিযানের আপেক্ষিকভাবে স্বল্পফলপ্রসু ও অতিদীর্ঘ স্থায়ী রূপ দিয়েছেন। সম্প্রতি আমেরিকা ও ইউরােপের যে সব জেনারেল ও নেতারা গেরিলা যুদ্ধের নীতি ও কলা কৌশলের উপর ভিত্তি করে গেরিলা বিরােধী বাহিনী (Counter Guerrilla force) গড়ে তুলছেন, তারা প্রচলিত সমর বিজ্ঞানী সেনাপতিদের গেরিলা যুদ্ধ সম্পর্কে উন্নাসিকতা ও উপেক্ষার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। এরা আধুনিক অস্ত্র শস্ত্র ও সাজ সরঞ্জামকেই জয়ের মূল উপাদান বলে জানেন; গেরিলা যুদ্ধের আসল আধার সক্রিয় জনসাধারণের শক্তি এবং এই আধারে পুষ্ট গেরিলা বাহিনী মারণাস্ত্রে বলীয়ান আপাত দানবরূপী গণবিরােধী শত্রুকে তরল এসিড কর্তৃক কঠিন ধাতুক্ষয়ের মতাে কীভাবে ধীর অথচ নিশ্চিতরূপে নিঃশেষ করে দিতে পারে,-জনসাধারণ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন জীবন যাপনে অভ্যস্ত জেনারেলদের পক্ষে এ অমােঘ সত্য উপলব্ধি করা সহজ নয়।
পূর্ব বাংলার গেরিলা ফৌজের সঙ্গে তার আধার জনগণের যােগ কতটা হতে পারে, গত নির্বাচনের ঐতিহাসিক ফলাফলই সাক্ষ্য দেবে। প্রচণ্ড সামরিক নৃশংসতা এবং তার ছত্রচ্ছায়ায় সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের প্রচার বিভ্রান্তি স্বভাবতঃই এ যােগসূত্রটাকে চোখের আড়াল করেছে ও করবে। অধিকৃত অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রকাশ্যে পাকিস্তানি পতাকা তুলে এবং পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে আপাতদৃষ্টিতে পাক আনুগত্য মেনে নেবে ও নিচ্ছে; কিন্তু হাওয়া পেলেই এ ছাই আবরণ উড়ে গিয়ে ধিকি ধিকি চাপা আগুন তার লেলিহান শিখা বিস্তার করে সকল মিথ্যার আবর্জনা অভাবনীয় দ্রুততায় নিঃশেষ করে দেবে। এটা নিছক ভাবাবেগ নয়; মানবেতিহাসের চিরন্তন বাস্তব সত্য।
শুধু সমর বিজ্ঞানের বিচারেও পূর্ব বাংলার তিন দিক ব্যাপী তিন হাজার মাইল নিচ্ছিদ্র বৈদেশিক সীমান্ত চতুর্থ দিকে সমুদ্র এবং মূল ভূখণ্ড থেকে স্থল বিচ্ছিন্ন হাজার হাজার মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে বিপদ সঙ্কুল জাহাজ ও বিমান পথে শত্রু পক্ষের সরবরাহ ও যােগাযােগ ব্যবস্থার প্রচণ্ড অসুবিধার সুযোেগ পৃথিবীর ইতিহাসে বােধ হয় কোনাে মুক্তিযােদ্ধারাই পায়নি। আধুনিক অস্ত্র শস্ত্র ও সাজসরঞ্জামের জন্য সম্পূর্ণ পরনির্ভরতা এবং পশ্চাৎপদ অর্থনৈতিক অবস্থাও পাকিস্তানের পক্ষে একটি বিশেষ প্রতিকূল উপাদান; এ কথা জেনারেল চৌধুরীও উল্লেখ করেছেন।
মুক্তিফৌজের সফলতার সম্ভাব্য অন্তরায় সম্পর্কে জেনারেল চৌধুরী একটি সময়ােচিত মূল্যবান কথা বলেছেন। মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বের শূন্যতা এবং বর্তমান রাজনৈতিক এমনকি সামরিক নেতৃবৃন্দ ও দলের নিবিড় ঐক্য, সমম্বয় ও সংযােগের অভাববােধ, একেবারে অলীক নাও হতে পারে; সংশ্লিষ্ট নেতাদের এ বিষয়ে যথেষ্ট অবহিত হওয়ার প্রয়ােজনীয়তা আছে।
বর্তমানে পাকবাহিনী যে শ্ৰেণীকে মুক্তিসংগ্রাম বিরােধী কাজে লাগাচ্ছে, তাদের সম্বন্ধেও কিছু বিচার বিবেচনা করা দরকার। নির্বাচনের ফল থেকে মনে হয়, পূর্ববাংলার সকল অবাঙালিই মুজিবর বিরােধী ছিল না। বেশ কিছু অবাঙালি মুসলমান বাঙালি মেয়ে বিয়ে করেছে, বাঙালি সমাজের সঙ্গে ভালােভাবে মেলামেশা করেছে এবং বলতে গেলে বাঙালি সত্ত্বার সঙ্গেই জড়িয়ে পড়েছে; আজ এদের অনেককে পরিস্থিতির তাড়নায় বাধ্য হয়েই পাকবাহিনীকে সমর্থন জানাতে হচ্ছে। পাকিস্তানি আনুগত্য যে শুধু শ্ৰেণীনির্ভর নয়, এমনকি পাকবাহিনী ক র্তৃক বর্তমানে গণ মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হিন্দুসমাজের মধ্যে এরূপ মনােবৃত্তি অস্বাভাবিক হলেও স্বার্থান্বেষীদের পক্ষে কিছুই যে অসম্ভব হতে পারে না, -কুখ্যাত সবুর খানের অনুচর বলাই ঘােষ তার উদাহরণ। সমর কৌশলগত বা সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণে যেখানেই পাকবাহিনী ও তাদের গুণ্ডাদল বিস্তৃত এলাকায় হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযােগ, নারী নির্যাতন চালিয়েছে, সেখানে হিন্দু এবং আওয়ামী পন্থীরাই লক্ষ্য হলেও ঐ অঞ্চলের বাসিন্দা বেশ কিছু অবাঙালি মুসলমানেরা ও অব্যাহতি পায়নি; হানাদারদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা ও বিরূপতা অবাস্তব নয়। তাছাড়া পূর্ববাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের উভয় স্থলেই অবাঙালি কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শােষিত হওয়ার জন্য বিক্ষুব্ধ। এমন কি খােদ পাকসেনাবাহিনীর মধ্যেই বাত, ; ও অন্যান্য অপাঞ্জাবী সৈন্যদের ক্ষোভ ও বিদ্রোহের খবর একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রেণী হিসেবে সকল অবাঙালি মুসলমানকেই শত্রু রূপে দেখা শুধু অনুচিত নয়, ক্ষতিকরও বটে।
শেখ মুজিবর তার ৭ই মার্চের বক্তৃতায় হিন্দু মুসলমান, বাঙালি অবাঙালি সকল অধিবাসীকে রক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং পরিষ্কার বলেছিলেন, আমাদের যেন বদনাম না হয় তার কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করা দরকার। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতাবাদই শত্রুর একমাত্র হাতিয়ার, নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক নীতিই তার প্রত্যুত্তর। হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি কোনাে সম্প্রদায়েরই একেবারে সকলের সক্রিয় সমর্থন পাওয়া খুব কম ক্ষেত্রেই সম্ভব; কিন্তু নিরপেক্ষ পথে চলতে পারলে অনেক সময়েই তাদের নিষ্ক্রিয় রাখা যায়। এ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে সেখানে এমনকি পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের কোনাে কোনাে স্থানে প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী স্বার্থবাদী নেতৃত্ব দ্বারা বিভ্রান্ত মুসলিম সমাজেও ব্যাপক প্রচার অভিযান দরকার।
পরিশেষে, যেসব আশ্রয়প্রার্থী কল্পনাতীত নির্যাতন সহ্য করে, নিঃশেষ হয়ে এবং অনেকে আত্মীয়স্বজন হারিয়ে এপারে চলে এসেছেন, তাদের প্রতি নিবেদন তারা যেন দমে না যান বা চুপ করে বসে না থাকেন। প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তিকে মুক্তিফৌজে যােগ দিতে হবে এবং বাকী সকলকে এদের জেতাবার জন্য সাধ্যমতাে কাজ করতে হবে। বর্তমান যুগের সর্বাত্মক যুদ্ধে একটি যােদ্ধাকে সক্রিয় ও সমর্থ রাখতে পেছনে ৩০/৪০ জনের পূর্ণ মদদ দরকার হয়; কাজেই প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু করার আছে। মুক্তি ফৌজ পরিণামে জয়ী হবেই, তাদের সংগ্রামে যােগ্য অংশ নিয়ে আবার ফিরে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করতে হবে এবং এ অধিকার অর্জনের জন্য রক্ত দেওয়ার ক্ষমতা বা সুযােগ না থাকলে ঘর্ম দিতেই হবে।
অসীম দুর্যোগের ভেতর দিয়ে ওপার এপার সকল বাঙালির পক্ষেই যেমন এক মহা সুযােগ এসেছে,এর বাস্তব তাৎপর্য উপলব্ধি করতে না পারলে তেমনি জাতি হিসেবে বাঙালির অস্তিত্ব বিলুপ্তির সম্ভাবনা।

সূত্র: কম্পাস, ১৫ই মে ১৯৭১