বাংলাদেশের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলােতে (৭)
শকুন্তল সেন
সন্ধ্যার পর আড্ডা বসল আমার এখানে। এলেন স্থানীয় ও, সি, ডাক্তার সাহেব আর আমি। এই ভদ্রলােক তাে আছেনই। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’-এর খবর। শােনবার জন্য সকলেই পাগল কেবলই নব ঘুরিয়ে চলেছেন এ মিটার থেকে সে মিটার। না, কোনাে সংবাদ নেই। ইন্ডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে ভারত সরকার স্বীকৃতির বিষয়ে বিবেচনা করছেন। খবর শেষ হলাে। ডাক্তার সাহেব বললেন “আর বিবেচনা। আমরা মরে শেষ হয়ে গেলে তারপর আসবে সাহায্য, তারপর স্বীকৃতি! ইন্দিরা এগিয়ে না এলে আর কয়েকদিন পরে আমাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।”
ও, সিঃ “এটা কি কথা বললেন। মাত্র তাে চারদিন হ’ল যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আর এই আক্রমণ ঠেকাতে পারলে স্বাধীনতা-স্বাধীনতা করে হাকাচ্ছিলেন কেন? আপনাদের খেয়াল ছিল না স্বাধীনতার কথা ঘােষণা করলেই তার ফলাফলের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। লােক মরবে না, কলকারখানা ধ্বংস হবে না, নারীর উপর অত্যাচার হবে না আর এমনি এমনিই আপনারা স্বাধীনতা পাবেন এত সহজ যদি হত!” “আমার মনে হয় শহরগুলাের উপর, অত্যাচার হবে, গ্রামে ওরা আসতেই সাহস করবে না!” চীপ ক্যাশিয়ার মন্তব্য করেন। “এটাও ভুল ধারণা। ওরা আগে শহরে দখল নেবে তারপর গ্রামে আসবে।” ডাক্তার সাহেব বললেন।
“আমরা শুনেছিলাম প্রয়ােজন হলেই অস্ত্র পাওয়া যাবে কোথায় সেসব। বরিশাল-এর অ্যাডজুটেন্ট খবর পাঠিয়েছেন ওয়ারলেসে আগামীকাল যত বেশি সম্ভব আনসার আর রাইফেল পাঠাতে! রাইফেল বলতে তাে আমার থানায় ক’টি, আর আর রয়েছে বন্দুক। আমি বলেছি রাইফেল বন্দুক এখানকার জনসাধারণ পাঠাতে দেবে না, তবে আনসার আমি পাঠাব। এতদিন ধরে যে কি হ’ল।” একটু হতাশার সুর শুনি ও, সি-র কণ্ঠে।
আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আর এলেন না, তার কাছে আমার ব্যাগটা রয়েছে। রাত গভীর হয়। ওরা বিদায় নিলেন। আমরা খাওয়া সেরে শুয়ে পড়লাম। কথা রইল কাল সকালে যে ছােট লঞ্চটা আনসারদের নিয়ে যাবে সেটাতে আমাকেই বরিশাল পাঠাবেন। বরিশালে মঙুর ভাই আছেন একটা ব্যবস্থা হবেই। আমার মনটা কেন জানি না আশঙ্কায় ভরে উঠছে। সারা রাত ঘুম হলাে না। দূর দূর গ্রাম থেকে চীৎকার ভেসে আসছে। জয় বাংলা’ এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম এইভাবে দূরান্তরে রিলে হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ জাগাে, জেগে থাকো, জেগে আছি। আধাে ঘুমে আধাে জাগরণে বুঝতে পারছি কারা যেন আমার ঘরের বাইরে পাহারা দিচ্ছে। আস্তে আস্তে উঠে বসি। জানালার ফাক দিয়ে দেখলাম, দুজন রাইফেল ধারী আমার ঘরটাই পাহারা দিচ্ছে। চমকে উঠলাম-কি ব্যাপার। কোনাে মতলব আছে নাকি। এর রকম তাে হবার কথা নয়। দ্রিাহীন রাত কেটে যায়। ভাের হতে না হতেই স্নান করে নিই। সকালেই লঞ্চ। সেই পাহারাদাররা নেই। ব্যাগটা আনতে গেলাম আমি আর চীফ ক্যাশিয়ার। অনেক ধাক্কার পর দরজা খুলল একটি ছেলে। ব্যাগটা এনে দিল কিন্তু শত অনুরােধও আওয়ামী লীগের সেই সেক্রেটারিকে ডেকে দিল না। বলল “এখন ঘুমাচ্ছেন উঠতে পারবেন না। আমার সঙ্গী বললেন “আশ্চৰ্য্য ব্যাপার! অথচ এই দ্রলােক আপনার জন্য কাল কি পরিশ্রম না করেছেন। চলুন। ওনার ঘরে এসে সব ব্যাপারটা বুঝা গেল! কাগজপত্রগুলাে ঠিক আছে কিন্তু এলােমেলাে। যা ভেবেছি তাই! এখন কি করা! যদি এদের অন্য কোনও উদ্দেশ্য থাকে! কাল রাতে আমাকে যে ভাবে পাহারা দিয়েছে তার কারণও বুঝলাম। হঠাৎ যদি ব্যাগ সার্চ করে। আমি ইন্ডিয়া থেকে এসেছি এই পরিচয় তত ক্ষতিকর হবে না, হয়ত ভালােই হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছে একজন কমিউনিস্ট (যদি আমাকে তাই ধরা হয়) অনেক বেশি অগ্রহণীয়। একটা কেলেঙ্কারী হওয়া বিচিত্র নয়। না আর মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। এত কষ্টে সংগৃহীত সব ছিড়ে ফেললাম। ঝুঁকি নেওয়া ঠিক হবে না।
লঞ্চ আর ছাড়ে না। পঁচিশ জন আনসার যাবে। এখন বেলা সাতটা, দশজন উপস্থিত। তার মধ্যে কেউ বিছানা আনেনি, কেউ বা অন্য কিছু। যেন বরযাত্রী যাবে সব। একজন আসেততা অন্য জন যায়। ও, সি প্রথমে বিরক্ত তারপর উত্তেজিত, তারপর বেরিয়ে আসল সেই স্বভাব সিদ্ধ পুলিশী মেজাজ। একে থানার দারােগা তার উপর জেলা বরিশাল। কি মধুর সব বুলি! যেন কর্ণ দিয়া মরমে পশিল। শেখ সাহেব থেকে শুরু করে স্বাধীনতা, ইন্ডিয়া, বরিশালের সেই এ্যাডজুটান্ট কেউ সেই অমৃত ভাষণ থেকে বাদ গেলেন না। বন্দর শুদ্ধ লােক ভিড় করেছে। শুনলাম দারােগা হিসেবে উঁদে। এখন মুক্তি বাহিনীর সেনাপতি (?) বলা যেতে পারে।
আনসারদের বাপান্ত করে ছাড়লেন।
ব্যাস, পাঁচ মিনিট এসব ঠিক! কোথায় ছিল এরা একেবারে অ্যাটেনশনের ভঙ্গিতে ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না!
সাড়ে আটটায় লঞ্চ ছাড়ল। হঠাৎ লক্ষ পড়ল দূরে কোনায় আওয়ামী লীগের সেই সেক্রেটারি এবং কয়েকজন অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
একজন বয়স্ক ব্যক্তি ৬০/৬৫ তাে হবেই তিনি তার বন্দুক নিয়ে যুদ্ধে যােগ দিতে চলছেন! মনে হলাে সম্পন্ন কৃষক। তাকে বিদায় দিতে এসেছে অনেক লােক, আত্মীয়-স্বজন। অনেকের চোখ সজল। তােমরা কাদছ কেন। আমার জন্য দুঃখ করাে না। আল্লার কাছে দোয়া কর আমরা যেন স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারি। আল্লার কাছে শেখ সাহেবের জন্য দোয়া কর। তিনি যেন ভালাে থাকেন। তােমরা শেখ সাহেবের উপর বিশ্বাস রাখ-স্বাধীনতা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। কোরানে আছে, বলে একটা বয়েৎ আওড়ালেন, পরে বাংলায় বললেন “এই সত্য সমাগত হইয়াছে তােমার প্রভুর তরফ হইতে, অতএব সংশয়ী লােকদিগের অন্তর্ভুক্ত হইও না।”
প্রায় একটা নাগাদ বরিশাল এলাম। আজ ১লা এপ্রিল! এই সেই বরিশাল। বুলেট শুধু রক্ত ঝরাতে পরে, প্রাণ অথবা তেমন কিছুই নয়, তােমরা ভেবেছ আমরা পেয়েছি ভয়।’ কোনাে এক কবির কথা। না ওরা ভয় পায় না, ভয় পেতে পারে না। রক্ত ঝরাবে, মরবে তবুও দাবী ছাড়বে না। আদায় করে নেবে অধিকার। বাঁচতে চায় শােষণহীনভাবে, স্বাধীনভাবে। ওরা ঘরে ফিরবে না_পণ করেছে স্বাধীন করবেই বাংলাকে। গত কদিন ধরে বরিশাল জেলার সর্বত্র যে সগ্রাম চলছে তা দেখে শুধু উপরােক্ত বিশ্বাস জন্মেছে। কদিন আগে বরিশালের উপর দিয়ে গিয়েছি। স্বাধীন বাংলার পতাকা সমানে উড়ছে।
বরিশাল পুণ্যে বিশাল। পণ্যেও বিশাল ছিল এক কালে। বার বার ঝড়ঝঞা, ঘূর্ণি এসে ছিন্নভিন্ন বিধ্বস্ত করেছে এ জেলাকে। কিন্তু মনােবল হারায়নি সে কোনাে কালে। অসংখ্য বার ভেসে গেছে ঘরের ভিটে পর্যন্ত কিন্তু নােনাজলের বানে ভেসে যায়নি পুণ্যময় স্বাধীনতা সগ্রামের গৌরব! ভুলে যায়নি স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশালের ইতিহাস। বরিশাল ভােলেনি মহাত্মা অশ্বিনী কুমারকে। ভােলেনি শেরে এ বাংলা এ, কে, ফজলুল হককে। অগ্নিযুগের বিপ্লবী বীর শহীদ তারকেশ্বরের পণ কি বরিশাল বাসী ভুলতে পারে? চারণ কবি মুকুন্দ দাসের বিপ্লবী কণ্ঠ আজো এ জেলার ঘরে ঘরে ঝংকারিত হচ্ছে।
তাইতাে, অশ্বিনী, শেরে বাংলা, তারকেশ্বর, মুকুন্দ দাসসহ অসংখ্য বীর দেশপ্রেমিকের পথ অনুসরণ করে বাংলাকে মুক্ত স্বাধীন করার মহান ব্রত নিয়ে পথে নেমেছে স্থানীয় কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, উকিল, মােক্তার, ডাক্তার, ব্যবসায়ী, অধ্যাপক, লেখক, কবি, চাকুরিজীবী, যুবকবৃন্দ, মহিলারা। ঐ জেলার চল্লিশ লাখ জনতার পদভারে কম্পিত হচ্ছে নগর জনপথ আজ কদিন ধরে। ধ্বনিত হচ্ছে বাংলার মুক্তিধ্বনি। আর সে মুক্তি অর্জনের পণ হিসাবে ওরা বেছে নিয়েছে সগ্রাম এবং বুঝতে পেয়েছে তারা শুধু শ্লোগানের সগ্রামে মাতৃভূমিকে দস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করা যাবে না। তাই তারা হাতে তুলে নিয়েছে বাংলার চিরন্তন হাতিয়ার বাঁশের লাঠি। জনতা মিছিলে মিছিলে সভা সমিতিতে, পথে প্রান্তরে লক্ষ কণ্ঠে দাবী জানাচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার।
১লা মার্চের প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের পর থেকে জঙ্গী মিছিল চলছে প্রতিদিন। মিছিল হচ্ছে সকালে দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায় ও রাতে। জনতা ক্রমান্বয়ে জঙ্গী থেকে জঙ্গীতর হচ্ছে। অপর দিকে ঘরে ঘরে শহীদের স্মৃতিবাহী কালাে পতাকা উড়িয়ে পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় গড়ে তুলছে প্রতিরােধ ব্যবস্থা। নিরস্ত্র জনতা বুলেট রােখার জন্য কেটে দিয়েছে রাস্তাঘাট। উড়িয়ে দিয়েছে পুল। ডুবিয়ে দিয়েছে খেয়া সেই বরিশালে এলাম!
বরিশালে আশ্রয় পেলাম হােটেল গুলবাগ-এ। বেশ, বড় হােটেল- অশ্বিনী দত্ত মেমােরিয়াল হল এর সঙ্গেই। স্নান করে কিছু খেয়ে নিলাম তারপর নিরবচ্ছিন্ন ঘুম। ঘুম যখন ভাঙল তখন রাত সাতটা। বেরিয়ে পড়লাম বন্দরের উদ্দেশ্যে। শহর জমজমাট। মাত্র সেদিন ২৬শে মার্চ বরিশাল শহরের উপর দিয়ে গিয়েছিতখন চিন্তা করিনি আবার এ পথে ফিরতে হবে আশ্রয় নিতে হবে এ বন্দরে। স্বাধীন বাংলার পতাকা একইভাবে উড়ছে। বন্দরের উপরেই রাস্তার উপর মুক্তিফৌজের ক্যাম্প চার্জে আছেন মেজর হােসেন। রাস্তার উপর পা ফেলবার এতটুকু জায়গা নেই—শরণার্থীর ভিড়। গাদা গাদা মানুষের ভিড়। খুলনা, যশাের, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কোথা থেকে না আসছে। অকুণ্ঠ প্রশংসা পাবার যােগ্য এখানকার আমলীগ কর্তৃপক্ষ।
এই হাজার হাজার শরণার্থী যাতে এখানে জ্যাম করতে না পারে তার জন্য দ্রুতগতিতে তাদের স্থানান্তরের ব্যবস্থা তারা করছেন। নৌপথ’ এরাই কন্ট্রোল করছেন। যারা সন্ধ্যার মুখে এসে পৌছচ্ছেন তারা রাতটুকু থেকে চলে যাচ্ছেন। এক বিরাট এলাহি কারবার অথচ অপূর্ব শৃঙ্খলা ও সংযমের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় শরণার্থীদের সঙ্গে আলাপ করলাম কোথাও বা তাদের কথা শুনবার জন্য ভিড়! কিন্তু লক্ষ করলাম এইসব শরণার্থীদের শেখ সাহেব, আম-লীগ সম্পর্কে এতটকু অভিযােগ নেই। সকলেই পাকফৌজের নিষ্ঠুর অত্যাচারের কাহিনী বর্ণনা করছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছেন। এখন যে যার গ্রামে ফিরতে চান। পরিষ্কারভাবে বললেন খুলনার একটি কারখানার হেড মিস্ত্রী আসিরুল্লা “কলকারখানার ওরা যা ক্ষতি করেছে আগামী পঞ্চাশ বছরেও সে ক্ষতি দূর হবে না। ওরা এদেশ থেকে যাবে ঠিকই কিন্তু যাবার আগে ওরা দেশটাকে শেষ করে দিয়ে যাবে। ওদের সঙ্গে আমাদের আর কোনাে দিনই মিল হবে না। মুসলমান হয়ে মুসলমানের উপর এই অত্যাচার আল্লাই এর বিচার করবেন।”
আর একজন মন্তব্য করলেন “হালারা, সব মানুষ তাে আর মারতে পারবে না। আমরা ডবল খেটে দেশ আবার গড়ে তুলব। আল্লার কাছে দোয়া করেন খালি শেখ সাহেব যেন বেঁচে থাকেন।” রাত হয়ে এসেছে হােটেলে ফিরলাম। বয় বিল নিয়ে এল বললাম কাল সকালে আনতে। আমার কাছে সামান্য কয়েক আনা পয়সা আর কিছু নেই। এখানে হয়ত খাবার জুটতে পারে কিন্তু সামান্য কিছু টাকা না পেলেই নয়। দেখা যাক কাল সকালে কি হয়।
সকাল হতেই স্নান করে বেরিয়ে পড়লাম। শহর দেখি, লােকজনের সঙ্গে কথা বলি। একটা চিন্তা, টাকার ব্যবস্থা। কেউ চেনে না। রেকর্ড দুটি বিক্রয় করলে হয়ত কিছু জুটতে পারে না সেটা হবে না। একমাত্র সম্বল ওই দামী ঘড়িটা। অনেক ভেবে চিন্তে আর কোনও পথ দেখতে পেলাম না। অনেক চেষ্টার পর প্রায় সাড়ে চারশ টাকার ঘড়িটা বিক্রয় করতে পারলাম পঞ্চাশ টাকায়। কেউ কিনতেই চায় না। প্রত্যেকের কথা “এখন কি ঘড়ি কেনবার সময়। আমাদেরই জিনিসপত্র বিক্রয় করতে হবে যা অবস্থা দেখছি। এই ঘড়ির দাম অনেক কিন্তু টাকা নেই তবে যদি আসেন টাকা দিয়ে এটা অবশ্যই ফেরৎ নিয়ে যাবেন। আপনি শিক্ষক মানুষ বিপদে পড়েছেন তাই ফেরাতে পারলাম না।” ফিরে গিয়ে কি জবাব দেব তাই ভাবতে ভাবতে ফিরলাম। আবার মনে মনে হাসি পেল, ফিরতে পারব কি? আকাশ কুসুম স্বপ্ন।
সূত্র: কম্পাস, ৫ই জুন ১৯৭১