ইয়াহিয়ার নয়া ফন্দি
বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করার সমস্ত প্রকার প্রচার কৌশল অবলম্বন করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইয়াহিয়া সামরিক জুন্টা এক নূতন ফন্দি অবলম্বন করছে বলে বাংলাদেশের ভেতর থেকে পাওয়া এক খবরে জানা গেছে। কুষ্টিয়া, খুলনা, যশােহর প্রভৃতি জেলা থেকে গ্রামবাসীরা ভয়ে পালিয়ে এসে জানিয়েছে যে সামরিক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের ধরে নিয়ে নিজেদেরই বাড়ি ঘরে আগুন লাগাতে বলছে। যারা অস্বীকার করছে তাদের সঙ্গে সঙ্গেই গুলি করে মারা হচ্ছে—যারা প্রাণের ভয়ে রাজী হয়ে আগুন লাগাচ্ছে, তাদেরও সেই সময় গুলি করছে ও তার ফটো তুলে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্রও আমাকে বাংলাদেশের কোনাে এক জায়গায় বলেছেন যে চুয়াডাঙা ও কুষ্টিয়াতেও সামরিক কর্তৃপক্ষ সরকারি খাদ্য শস্যের গুদাম খুলে দিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের সেই খাদ্যশস্য নিয়ে যেতে হুকুম করেছে। গ্রামবাসীরা যখন সেই সব খাদ্য শস্য নিয়ে যেতে শুরু করে তখনই তাদের উপর গুলি চালানাে হয় এবং সেই সব দৃশ্যের ছবি তুলে রাখা হয়।
সামরিক কর্ত ক্ষের এই সবের মূল উদ্দেশ্য হ’ল কিছুদিনের মধ্যে ইয়াহিয়া সরকার যে সব বিদেশী সাংবাদিকদের ঢাকায় আমন্ত্রণ (?) জানাচ্ছে সেই সময় এই সব ছবি বিদেশী সাংবাদিকদের দেখানাে হবে এই বলে যে এই সব “সমাজ বিরােধী ও দুষ্কৃতিকারীরা” লুঠতরাজ চালালে আমরা গুলি চালাতে বাধ্য হই।
বাংলাদেশের সাধারণ লােকের উপর ইয়াহিয়ার সামরিক জুন্টা ও তার অনুচরদের বর্বর অত্যাচারে ভারতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দশ হাজার উদ্বাস্তু এ দেশে আসছেন। উদ্বাস্তু আগমন এদেশে নূতন ব্যাপার নয়। কিন্তু এবার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা ও বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবির পরিদর্শন কালে কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছি। অধিকাংশ পরিবারের জোয়ান সমর্থ পুরুষ এখন আর পুরােপুরি সরকারি “ডােলের উপর নির্ভরশীল হতে রাজী নয়। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই এপারে খেত মজুরি খাটতে শুরু করেছে কেউ বা পয়সা কড়ি জোগাড় করে কিছু কিছু জিনিসপত্র কিনে কোলকাতার ফুটপাথেই ব্যবসা শুরু করেছে।
সূত্র: মণি মৈত্র ১৫.৫.১৯৭১