বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র অধ্যায়
বাংলাদেশের (পূর্ববাংলা) স্বাধীনতা সংগ্রামের সশস্ত্র অধ্যায় শুরু হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের দাম্ভিক সামরিক সরকার তার সামরিক পশুবল নিয়ােজিত করেছে। সংবাদপত্রের কণ্ঠরুদ্ধ। বিদেশী সাংবাদিকরা বিতাড়িত। যে সমস্ত খবর আসছে তার সত্যতা যাচাই করার উপায় নেই। তবুও পাক সরকার বেতার, স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার ও সীমান্ত থেকে ছিটকে আসা খবরের উপরই আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে।
২৫শে মার্চ একটি গােপন বেতার কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সাড়ে সাত কোটি অধিবাসী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ঘােষণা করেছেন। তিনি বলেছেনআমরা কুকুর বেড়ালের মতাে মরব না, বাংলামায়ের যােগ্য সন্তানের মতাে মৃত্যু বরণ করব। বেতার ঘােষণায় আরও বলা হয় যে পূর্ব বাংলা রেজিমেন্ট,পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এবং সমগ্র পুলিশ বাহিনী শেখ মুজিবরের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছে। তারা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, শ্রীহট্ট, যশাের, বরিশাল ও খুলনায় অবস্থিত পাকসৈন্য বাহিনীকে ঘেরাও করেছে, তুমুল লড়াই চলেছে। শেখ মুজিবরই স্বাধীন বাংলাদেশের একমাত্র নেতা, সকলে তার আদেশ মেনে চলব, বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করব। আফ্রোএশীয় দেশে যে ঔপনিবেশবাদ বিরােধী মুক্তি সংগ্রাম চলছে, এ সগ্রামও তারই অন্তর্ভুক্ত। এই বেতার ঘােষণায় সমস্ত আফ্রোএশীয় দেশ ও ইউ.এন. ওর কাছে সাহায্য চাওয়া হয়েছে এবং যােগাযােগের জন্য দূত পাঠানাে হয়েছে বলে ঘােষণা করা হয়েছে।
এই ঘােষণার কিছু পরেই পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান করাচী থেকে এক বেতার ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের সৈন্য বাহিনীকে সমস্ত ক্ষমতা দখল করতে আদেশ জারি করেন। পূর্ব দিন রাত্রে সবার অলক্ষ্যে তিনি ঢাকা থেকে করাচী চলে যান-পাচটি সৈন্য বােঝাই জাহাজ পূর্ব পাকিস্তানে আসার পর।
২৫শে মার্চ থেকেই পাক সৈন্য বাহিনী তাদের দমন নীতি প্রয়ােগ করতে শুরু করে। চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর ও ঢাকার নিকটবর্তী মীরপুরে সৈন্য বাহিনী মেশিন গান থেকে গুলি বর্ষণ করে প্রায় ১১০ জনকে নিহত ও ২০০ জনকে আহত করে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে অস্ত্র সম্ভার খালাস কাজে বাধা দিলে সৈন্যরা গুলি চালায়। শেখ মুজিবর এই বিষয়ে অবিলম্বে তদন্তের দাবী করে প্রেসিডেন্টের কাছে দাবী জানান যে সৈন্যবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে। তিনি এই নরহত্যার প্রতিবাদে ২৭শে মার্চ হরতালের ডাক দেন।
২৬শে মার্চ এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দেশের সমস্ত রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে দেন এবং বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে অবৈধ ঘােষণা করেন। তিনি শেখ মুজিবরের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে (আর একবার) দেশদ্রোহী উপাধি দিয়ে (আবার) বিচারের হুমকি দেন।
পঁচিশ দিন অহিংস ও অসহযােগ আন্দোলনের পর দেখা গেল সেনাপতিদের হৃদয়ের কোনাে পরিবর্তন হলাে না। সমগ্র জনগণের দাবী তারা দাম্ভিকতায় নস্যাৎ করে দিল, রক্তাক্ত বিপ্লবের পর্যায় শুরু হল।
মার্শাল ল জারি
২৬ শে মার্চ ভাের থেকে ঢাকা থেকে মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর লে. জে. টিক্কা খান সামরিক আইন জারি হতে থাকে। ঢাকা বেতার কেন্দ্র সামরিক বাহিনী দখল করে তাদের হুকুমনামা প্রচার করতে থাকে। সমস্ত সরকারি ও আধা সরকারি কর্মচারীকে কাজে যােগ দিতে আদেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় চাকুরী চ্যুতি ও সামরিক আদালতে বিচারে উৰ্দ্ধতম দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের ভয় দেখানাে হয়। ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে বিশ্ববাসীকে জানানাে হয় সমগ্র দেশের অবস্থা সৈন্যবাহিনীর আয়ত্তাধীন।
কিন্তু যে সমস্ত খবর পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় অবস্থা সম্পূর্ণ বিপরীত। দেশের প্রধান রাস্তাগুলােতে অবরােধ তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিমান কেন্দ্রে যাওয়ার পথটিতেও অবরােধ করা হচ্ছে, বহু সেতু ধ্বংস হয়েছে, রেলের লাইন তুলে ফেলা হয়েছে। সর্বত্র সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় পুলিশ ও আধা সামরিক বাঙালি সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। ত্রিপুরায় প্রায় ৩০০ পূর্ব বাংলার নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে এসেছে। তারা বলছে যেখানে যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী আছে সেখানেই লড়াই চলছে। একটি পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা তাড়া খেয়ে ত্রিপুরায় ঢুকে পড়ে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
২৭শে মার্চ : করাচী থেকে ঘােষণা করা হয় যে মুজিবর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছু পরেই এক গােপন বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবর ঘােষণা করেন যে তিনি মুক্ত আছেন এবং এই সগ্রাম পরিচালনা করছেন।
সংগ্রামের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। পাক সেনাবাহিনী ছটি শহরে ট্যাঙ্ক বাহিনী নিয়ােগ করেছে। ঢাকা, কুমিল্লা ও খুলনায় বিমান থেকে বােমা বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এই বােমা বর্ষণে ঢাকার একটি হাসপাতাল ধ্বংস হয়েছে ও অভ্যন্তরস্থ সমস্ত রােগীই মারা গেছে। আগরতলা থেকে পাওয়া এক খবরে জানা গেছে যে ট্যাঙ্ক বাহিনীর কামানের গােলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। ঢাকায় অধিকার রক্ষায় উভয় পক্ষের তুমুল সগ্রাম চলছে। রাস্তায় রাস্তায় পােড়া গাড়ি, ভাঙ্গা কাচ, খালি কার্তুজের খােল প্রভৃতিতে বােঝাই।
টিক্কা খান নিহত
আগরতলায় খবর পাওয়া গেছে যে ঢাকাস্থ সামরিক অধিনায়ক টিক্কা খান আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক সামসুদ্দীনের হাতে নিহত হয়েছে। তিনি যখন সৈন্য বাহিনী পরিদর্শনে বেরিয়ে ছিলেন সেই সময় সামসুদ্দীন ও আরও কয়েকটি যুবক তাকে আক্রমণ করে। সামসুদ্দীনের গুলিতে আহত অবস্থায় তাঁকে নার্সিং হােমে নিয়ে যাওয়া হয় ও সেখানে তিনি মারা যান। অবশ্য পাক বেতারে এ সংবাদ অস্বীকার করা হয়েছে। মুক্তি সেনাবাহিনী তরফ থেকে জানা গেছে যে তারা আশঙ্কা করছেন, এই কদিনেই প্রায় এক লক্ষ লােক নিহত হয়েছে।
শেখ মুজিবর রহমান এক বেতার ঘােষণায় পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে তারা যদি মুক্তিফৌজের কাছে আত্মসমর্পণ করে তাহলে তাদের নিরাপদে তাদের অস্ত্র সহ স্বদেশে ফিরে যেতে দেবেন। যদি তারা তা না করে তাহলে স্বাধীনতা সগ্রামীরা বাঙালির রক্তপাতের বদূলা নেবে।
এর মধ্যেই পশ্চিম পাঞ্জাবী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ শুরু করেছে। একটি বালুচি রেজিমেন্ট তাদের পাঞ্জাবী অফিসারের হুকুম মানতে অস্বীকার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মুক্ত বেতার কেন্দ্র ঘােষণা করেছে যে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, দিনাজপুর, শ্রীহট্ট এখনও পর্যন্ত মুক্তিফৌজের অধিকারে আছে। পাক সেনাবাহিনী চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমান বন্দরটি দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এখানকার মুক্তিফৌজ পরিচালনা করেছেন করিম নামক একজন ব্রিগেডিয়ার।
খুলনার মঙ্গলা নৌবন্দরটিও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা দখল করে নিয়েছে। খুলনায় অবস্থিত ইস্টপাকিস্ত নি রাইফেলসের অধিনায়ক তার সমগ্র বাহিনী নিয়ে এই দখল কার্য সম্পন্ন করেছেন।
ঢাকার বেতার কেন্দ্রটি দখল করার জন্য মুক্তিফৌজ সগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিদেশী সাংবাদিকদের বহিষ্কার
৩৭ জন বিদেশী সাংবাদিককে ঢাকা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিমানে করে করাচী নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সমস্ত কাগজপত্র ও ফিল্ম কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পাক সরকারের অভিযােগ এরা মিথ্যা সংবাদ সরবরাহ করে সরকারকে হেয় করার চেষ্টা করছে। এই সাংবাদিকদের একজন বলেছেন যে মার্শাল ল জারি হবার পর তাদেরকে হােটেলের ঘরে আটকে রাখা হয়। বেরুতে দেয়নি। সেই ঘর থেকে তারা দেখেছেন নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর পাক সৈন্যরা জিপ গাড়িতে বসানাে সাব মেশিনগান থেকে গুলি বর্ষণ করেছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন জ্বলতে দেখেছেন।
২৮শে মার্চ : স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার কেন্দ্র ঘােষণা করেছে নিহত টিক্কা খানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন লে. জেনারেল ইমজাদ খান।
ঢাকাস্থ পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনীর মূল ঘাঁটি থেকে করাচী এস, ও, এস, বিপদ জ্ঞাপক বার্তা পাঠিয়ে আরও সৈন্য বাহিনী চেয়ে পাঠিয়েছে। এবং এই সংবাদবার্তা ভারতেও ধরা পড়েছে এই বার্তা পাঠিয়েছেন আজম খান। তিনি ব্যাকুল হয়ে বলেছেন চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিফৌজ ঢাকার দিকে আসছে সৈন্য না পাঠালে ঢাকার পতন অনিবার্য। এর কিছু পরেই স্বাধীন বাংলাদেশের বেতার ঘােষণা করে যে মুক্তিফৌজ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা দখল অভিযানে অগ্রসর হয়েছে।
ঢাকা অভিযান
কুষ্টিয়া মহকুমা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের দখলে। সেখান থেকে একদল মুক্তিফৌজ ঢাকার দিকে রওনা হয়েছে। তাদের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করার জন্য পাক বিমান বহর বােমা ফেলে পদ্মার উপর সারা বিজের একাংশ উড়িয়ে দিয়েছে।
কুমিল্লা থেকেও একদল মুক্তিফৌজ ঢাকার দিকে রওনা হয়েছে। এই সব দলগুলাে যত ঢাকার দিকে এগােচ্ছে, আশেপাশের বহু স্বেচ্ছাসেবক তাতে যােগ দিয়ে তাদের কলেবর বৃদ্ধি করছে।
পাক সেনাবাহিনী আকাশ থেকে বিমান ও হেলিকপ্টার যােগে সমানে নিরস্ত্র জনসাধারণের ওপর বােমা ও গুলি বর্ষণ করে চলেছে। জনসাধারণকে ভয় দেখিয়ে ঠাণ্ডা করাই তাদের উদ্দেশ্য। খুলনায় বন্দর অঞ্চলগুলােতে লড়াই লেগেই আছে। খুলনার পাক মার্শাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মুক্তিফৌজীদের হাতে গুরুতরভাবে জখম হয়েছেন। ২৪ নং ফিল্ড ফ্রন্টিয়ার কোর্সের মেজর মেইজও দৌলতপুর লড়াইয়ে আহত হয়েছেন।
খুলনা, যশােহর ও কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকা মুক্তিফৌজের দখলে। রংপুর ও সৈয়দপুর শহর দুটিও মুক্তিবাহিনীর দখলে এসেছে। কুমিল্লায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমাটি আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ দখলে গেছে।
ঢাকার নিকটবর্তী শিল্প সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ মুক্তিফৌজের কবজায়। স্বাধীন বাংলা বেতার অনুযায়ী ঢাকাস্থ নবাবপুর ও জনসন রােড এলাকায় লড়াই চলছে। ঢাকা বেতার কেন্দ্র দখলের লড়াই আবার শুরু হয়েছে।
পাকিস্তানি পশ্চিমা সৈনিকরা ব্যাপক হারে আত্মসমর্পণ করছে। তারা একটি জনপ্রাণীর কাছ থেকেও সহায়তা পাচ্ছে না। খাবার ও জল কেউ তাদের দিচ্ছে না। সৈন্য বাহিনীর ঔষধপত্রেও টান পড়েছে। এবং এ সবের জন্য তারা কেড়ে নিতেও দ্বিধা করছে না।
ভারত সীমান্ত অঞ্চল
ত্রিপুরা সীমান্ত সংলগ্ন আখাউড়ায় পাঠান সেনারা পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করার চেষ্টা করে কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী এসে ঘিরে ধরলে তারা পালিয়ে যায়। আখাউড়ার স্বেচ্ছাবাহিনী আশংকা করছে—পাঠান সেনারা আবার ফিরে আসবে এবং তার মােকাবিলার জন্য তারা তৈরি হচ্ছে।
আরেকটি সীমান্ত শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়াও মুক্তিফৌজের দখলে। এখানকার লড়াইয়ে সৈন্যবাহিনীর দুটি কর্নেল সমেত চারটি অফিসার মারা গেছে। তাদের খবর অনুযায়ী শ্রীহট্ট সম্পূর্ণ ছাত্রদের দখলে। আরও যা খবর আসছে তা থেকে জানা যায় যে এখানে অবস্থিত পাকসৈন্যরা ওখান থেকে সরে যাচ্ছে।
জালালপুর পীরনগরের (প, বঙ্গ) অপর দিকে আটগাঁওতে কোনাে সৈন্য নজরে আসছে না, শূন্য তাঁবুগুলাে পড়ে আছে। কিছুদিন আগেও এখানে এক ইউনিট সৈন্য ছিল।
সরকারি বেতার থেকে
পাক অধিকৃত ঢাকা বেতার থেকে অনবরত ঘােষণা করা হয়েছে যে সামরিক বাহিনী সমগ্র বাংলাদেশকে কব্জায় নিয়ে এসেছে এবং দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ২৮শে মার্চ ঐ বেতারে এক ঘােষণায় আদেশ জারি করা হয় যে পুলিশ সমূহকে পরদিন তাদের কাজে যােগ দিতে বলা হয়েছে। মিউনিসিপ্যালিটির কর্মীদেরও কাজে যােগ দিতে বলা হয়েছে। ব্যাঙ্কের কর্মীদের স্বাভাবিক কাজে যােগ দিতে বলা হয়েছে এবং এর অন্যথায় সামরিক আদালতের বিচারে দশ বছর পর্যন্ত কারাবাসের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই আদেশের গূঢ় অর্থ করলেই বুঝতে পারা যায় নগরগুলােতে কী অবস্থা বিরাজ করছে। এমন কি পুলিশও অসহযােগী শুধু নয়, বিরােধীও। পাক সরকার দাবি করেছে যে বেতার ও টেলিভিশনের কর্মীরা কাজে যােগ দিয়েছে। টেলিভিশন এখানে দেখা যায় না, কিন্তু ঢাকা বেতার এখান থেকে শােনা যায়। কজন সেখানে কাজ করছে তা আমরা শুনতেই পাচ্ছি। হঁ্যা একটি অনুগত লােক তারা পেয়েছে বটে তবে সে বাঙালি কিনা সন্দেহ।
যশােহরে বাঘা যতীন বাহিনী চট্টগ্রামে সূর্য সেন বাহিনী গঠিত হয়েছে।
পশ্চিম পাকিস্তানে বাঙালি নির্যাতন
পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত বাঙালিদের ওপর ভূট্টোর দলের লােকেরা হামলা শুরু করে দিয়েছে। বহু পরিবারের বাড়িঘর লুট হয়েছে, অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। তারা সব সিন্ধু এলাকায় নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য পালিয়ে গিয়েছে।
ঢাকা বেতার কেন্দ্র দখল
২৯শে মার্চ রাত্রে খবর পাওয়া গেছে যে ঢাকা বেতার কেন্দ্র মুক্তিফৌজ দখল করেছে। এর আগে ঢাকার বেতার কেন্দ্র তার ২য় অধিবেশন হঠাৎ বন্ধ করে দেয়।
সূত্র: কম্পাস, ০৩.০৪.১৯৭১