You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.05 | ক্ষমতা হস্তান্তর- পুনর্বিচার (৩) | কম্পাস - সংগ্রামের নোটবুক

ক্ষমতা হস্তান্তর__ পুনর্বিচার (৩)
অনিল চট্টোপাধ্যায়

পূর্ব বাংলায় যে দখলদার বাহিনী আছে, সম্ভবত তারা নিজেদের কোনাে কোনাে শহরাঞ্চলে প্রতিরােধ ব্যবস্থা গড়ে শক্ত ঘাঁটির মধ্যে থাকবে। ইতিমধ্যে আর কেউ হস্তক্ষেপ না করলে তাদের ঐ ঘাঁটি থেকে উৎ করতে গেলে দু বছরের মতাে সময় লাগবে। পূর্ব বাংলার অভ্যন্তর ভাগে গেরিলা কৌশলের মাধ্যমে জনগণের প্রতিরােধ আন্দোলন এবং পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার সীমান্ত এলাকা থেকে কমাণ্ডো আক্রমণ, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তিসাধন করবে। এ ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ততার কোনােই অবসর নেই।
এ অবস্থায়, উভয় বাংলার জনসাধারণেই যেখানে এক সঙ্গে রাজনৈতিক দাবার চাল চেলে দিয়েছে, সেক্ষেত্রে ভারত সরকার কী করবেন? ভারতের বাইরে অনুষ্ঠিত এক প্রতিরােধ আন্দোলনকে সাহায্য দানের উদ্দেশ্যে নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন দিতে গিয়ে পশ্চিম বাংলার বাঙালি জনসাধারণ যখন জড়িয়ে পড়বে, তখন তার গুরুত্ব আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতেই বিবেচিত হবে। অবশ্য বড় শক্তির মধ্যেকার ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রশ্নটিকে নিশ্চয়ই আরও জটিল করে তুলবে। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই কথাটা সত্যই যে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এক শক্রতার মনােভাব বিদ্যমান। তবে যত শক্রতাই থাক না কেন, এটা ঠিক যে ভারত ও পাকিস্তান, কেউ কারুর অপরিচিত নয়। ১৯৪৭ সালের ৩রা জুন তারিখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এক বিবৃতির ভিত্তিতে নেতারা এই বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হন যে এক ও অখণ্ড ভারতকে বিভক্ত করতে হবে। যখন দেখা যাচ্ছে যে, সমগ্র চুক্তিটাই বাকপথে ভারত ও পাকিস্তান- উভয়েই যুদ্ধ ও সংঘর্ষের পথে চালিত করেছে, তখন দেশকে দুটো অংশে বিভক্ত করার ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আবার নির্ধারণ করার সময় উপস্থিত হয়েছে। ভারত একতরফাভাবে এই অশেষ সংঘর্ষময় অবস্থার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য শর্তাদির উপস্থাপন করতে পারে। জনসাধারণের ইচ্ছানুসারে সব সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতকে প্রস্তুত থাকতে হবে আর এই শর্ত করতে হবে যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক সীমানা আছে, সেই সীমানা বরাবর কোনাে দেশই কোনাে রকম প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না। একে অপরকে আক্রমণের জন্য উভয় দেশের মধ্যে কাউকেই স্থায়ী বাহিনী গড়তে দেওয়া হবে না। সামরিক সংঘর্ষের পরিবর্তে উভয় দেশের মধ্যে যৌথ প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা সংগঠন করা উচিত হবে। স্বায়ত্তশাসনশীল, সমাজতান্ত্রিক ও গণতন্ত্রসম্মত রাজ্যগুলাের কমনওয়েলথ’ সংগঠনের জন্য ভারতকে সচেষ্ট হতে হবে। এ বিষয়ে কোনাে নীতি ঘােষণা করার সময় যেন কোনাে চালাকির মনােভাব না থাকে, উদাত্ত জাতীয় নীতিই যেন ঘােষিত হয়। তা হলেই দুটি দেশ গঠনের স্রষ্টারা যে পাপ করে গেছেন তার কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত হবে। পাকিস্তানের বর্তমান প্রভুরা স্থায়ী মীমাংসার ব্যাপারে সহযােগিতা নাও করতে পারে, তবুও আশা করা যায় যে, অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের জনগণ উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সংঘর্ষের অবসান ঘটাবার গুরুত্ব উপলব্ধি করবে।
উপরােক্ত ব্যবস্থা পেশাদার কুটনীতিবিদদের কাছে কেমন কেমন ঠেকতে পারে। তবুও বলা যায় যে এযাবত্তাল ঐ বিশেষজ্ঞরা তাদের বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু একটি বিষয়েই সাফল্য অর্জন করেছেন এবং তা হলো সারা দেশকে পারস্পরিক ধ্বংসের বদ্ধজলা জমিতে তাঁরা ঠেলে দিতে পেরেছেন। যদি সত্যিই আমরা পাকিস্তানের জনগণের মঙ্গল বিধানে আগ্রহী হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের পরিষ্কার মন নিয়ে কাজ করার জন্য এগিয়ে যেতে হবে।

সূত্র: কম্পাস, ৫ই জুন ১৯৭১