বসিরহাটেই ৫ লক্ষের বেশি শরণার্থী খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসার অভাব : রেডক্রশের সাহায্য
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ৩০ মে চব্বিশ পরগণা জেলার একমাত্র বসিরহাট মহকুমার চারটি থানাতেই এ পর্যন্ত ৫ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী এসেছেন ওপার বাঙলা থেকে।
এক দিকে এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীর আগমন, অন্যদিকে তাদের আশ্রয়, চিকিৎসা প্রভৃতির ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থা গুরুতর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
এর মধ্যেই অবশ্য ভারতীয় রেডক্রশ সােসাইটি শরণার্থীদের মধ্যে শিশু ও মায়েদের জন্য দুধ, বিস্কুট, মালটি ভিটামিন ট্যাবলেট ও কাপড় সরবরাহ করছে।
গতকাল রেডক্রশ সােসাইটির তরফ থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। রেড ক্রশের জনৈক কর্মকর্তা জানান, এই মহকুমার হাসনাবাদ স্টেশন, টাকী সৈন্যের বাগান বসিরহাট, গাের পুকুর আমবাগান ক্যাম্পে, সােসাইটি উপরে উল্লিখিত সাহায্য দিচ্ছে।
এই এলাকায় এ পর্যন্ত মােট ১৫টি ক্যাম্প খােলা হয়েছে। এতে আশ্রয়প্রাপ্ত প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারের মধ্যে ৮২৭টি মুসলমান পরিবার রয়েছে। হাসনাবাদ স্টেশনে বেঙ্গল মেডিকেল রিলিফ কমিটির সঙ্গে রেডক্রশ যৌথ ভাবে কাজ করে চলেছে। এছাড়া মাড়ােয়ারী রিলিফ সােসাইটি, এলাকার শরণার্থী শিবিরগুলিতে রেশন সরবরাহ দিচ্ছে। স্বরূপনগর শিবিরে ‘কেয়ার’ দুধ বিতরণ করছে।
স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযােগ বাঙলাদেশ থেকে আগত অন্যান্য সীমান্তের তুলনায় বসিরহাট, হাসনাবাদ সীমান্তের শরণার্থীরা অধিক অবহেলিত। অথচ এখানকার শরণার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে এছাড়াও তারা জানালেন শরণার্থীদের কাছ থেকে অনেকেই রেশন কার্ড করার নামে টাকা নিচ্ছে।
যে সমস্ত শরণার্থী ওখানে এসে উপস্থিত হয়েছে তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও কম লােকের ক্যাম্পে স্থান হয়েছে। বাকী সকলকে খােলা আকাশের নীচে মাঠে, গাছের তলায় বা রাস্তার ধারে আশ্রয় নিতে হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী শিশু ও বৃদ্ধ। পানীয় জলেরও খুব অভাব। এক একটি টিউব ওয়েলের সামনে শত শত মানুষের ভীড়। ক্যাম্পগুলিরও সামগ্রিক অবস্থা খুবই খারাপ, কলেরা ও বসন্তের টীকা ও সবাইকে দেওয়া হয় নি। এর উপর চোখ-ওঠা রােগ ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে।
ক্যাম্পের শরণার্থীদের অনেকে অভিযােগ করলেন যে, তারা তাদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য পুরাে পরিমাণে পাচ্ছেন না।
সূত্র: কালান্তর, ১.৬.১৯৭১