সম্পাদকীয়
দৈনিক ইত্তেফাক
১ মার্চ ১৯৬৯
এই মুহূর্তের কর্তব্য
দেশে গণ-অধিকার প্রতিষ্ঠার সাম্প্রতিক সংগ্রামে যাঁহারা শহীদ হইয়াছেন তাঁহাদের শোকার্ত ও অসহায় পরিবার পরিজনকে সাহায্য দানের প্রয়োজনীয়তা সরকার ও দেশবাসীকে আবারো স্মরণ করাইয়া দেওয়া আমরা আমাদের কর্তব্য মনে করিতেছি। গণ-আন্দোলনে যাহারা শহীদ হইয়াছেন, শুধু তাঁহাদের পরিবার-পরিজনই নয়, গোলাগুলীতে যে-সব ব্যক্তি আহত হইয়াছেন বা যে সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে তাঁহাদিগকেও অবিলম্বে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া আবশ্যক। এই ব্যাপারে আমরাও বহুবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছি। সুতরাং এইরূপ একটি জরুরী বিষয় আর অধিককাল ঝুলাইয়া না রাখিয়া সরকারের উচিত এই সম্পর্কে অবিলম্বে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা। সম্প্রতি শেখ মুজিবর রহমান এই ক্ষতিপূরণদানের ব্যাপারে সরকারকে যেমন তাগিদ দিয়াছেন, তেমনি সরকারী কার্যক্রমের উপর একান্তভাবে নির্ভর করিয়া না থাকিয়া শহীদদের পরিবারবর্গ ও আহতদের সাহায্য দানের জন্য একটি নয় সদস্যবিশিষ্ট বেসরকারী কমিটি গঠন করিয়াছেন। এই কমিটিতে প্রদেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকদের মধ্য হইতে প্রতিনিধিত্বশীল ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের গ্রহণ করা হইয়াছে। ফলে জনসাধারণের আস্থাভাজন এই সাহায্য কমিটি শুধু নিহত ও আহতদের পরিবার-পরিজনবর্গকে সাহায্যদানের ব্যাপারেই নয়, বিপর্যস্ত পরিবার সমূহের পুনর্বাসনের ব্যাপারেও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হইবেন বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি। সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলনে যে-সব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন, কেবল তাঁহারাই নন, ১৯৬৬ সালের ৭ই জুনের ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে যাঁহারা শহীদ হইয়াছেন, তাঁহাদের পরিবারবর্গকেও কমিটি সাহায্য দানের ব্যবস্থা করিবেন, জানিতে পারিয়া আমরা আশ্বস্ত হইয়াছি। আমরা আশা করি দেশের প্রতিটি সক্ষম নাগরিকই এই সাহায্য ও কমিটির উদ্যোগকে সাফল্যমণ্ডিত করিয়া তুলিবার জন্য আর্থিক সাহায্যসহ সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করিবেন। ১৯৬৬ সালের ৭ই জুনের আন্দোলনে ও সাম্প্রতিক আন্দোলনে যাঁহারা শহীদ হইয়াছেন বা আহত হইয়াছেন, তাঁহাদের সকলের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা কমিটির পক্ষে সহজ না-ও হইতে পারে। এই অবস্থায় সকলের জানামতে কমিটিকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করাও একটি বড় রকমের দায়িত্ব পালন বলিয়া গণ্য হইবে।
প্রসঙ্গক্রমে আমরা একটি সতর্কবাণী উচ্চারণ করিতে চাই। কোন কোন স্থান হইতে আমরা অননুমোদিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্ন কারণ দর্শাইয়া অর্থ সংগ্রহ করার খবর ও অভিযোগ পাইয়াছি। এই ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট সকল মহলকেই অনুরোধ জানাইব, তাঁহারা যেন উপরোক্ত সাহায্য কমিটি বা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া এবং বিনা রসিদে কোন প্রকার সাহায্য প্রদান না করেন। ভুয়া সাহায্য প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে সময়মত নিরুৎসাহ না করা হইলে দেশবাসীর সাহায্যের অর্থ যথাস্থানে গিয়া না পৌঁছিবার আশঙ্কাই বেশী। মানবতার সেবা বা কল্যাণমূলক কাজে কোন প্রকার দলীয় বা আত্মস্বার্থসিদ্ধির প্রবণতা যেন প্রশ্রয় না পায়, গণ-আন্দোলনের ত্যাগী ও নির্যাতিত কর্মীদের স্বার্থেই সেদিকে আজ সকলের সতর্ক দৃষ্টি রাখিতে হইবে।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯