বন্ধুরাষ্ট্র
বাংলাদেশের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতবর্ষ সর্বপ্রথম একটি প্রকৃত বন্ধুরাষ্ট্র পেল। এই নতুন রাষ্ট্রকে সঠিক ও স্বাধীন পথে চলতে হলে বহুকাল পর্যন্ত তাকে ভারতের সহানুভূতি ও সমর্থনের উপর নির্ভর করতে হবে। তাই বলে বাংলা দেশ ভারতের তাবেদার কোনও রাষ্ট্রে পরিণত হবে না। তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পদমর্যাদা ভারতকে সতর্কতার সঙ্গে রক্ষা করে চলতে হবে। এই বন্ধুরাষ্ট্রের আবির্ভাবের ফলে ভারতবর্ষের অন্ততঃ একটি স্পর্শকাতর সীমানায় নিরাপত্তামূলক প্রশ্নে আর উদ্বিগ্ন হয়ে থাকতে হবে না। পাকিস্তানের যে জন্মগত ঘৃণ্য ও শত্রুতার জন্য ভারতবর্ষকে নিতান্ত বাধ্য হয়ে সাধ্যাতীতভাবে প্রতিরক্ষা খাতে জ্যামিতিক হারে বছরের পর বছর অর্থ বিনিয়ােগ বর্ধিত করতে হতাে, তার হাত থেকে অন্ততঃ ভারত কিছুটা যে মুক্তি পাবে তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের পথও এবার উন্মুক্ত হবে, এর ফলে উভয়: রাষ্ট্রেই লাভবান হবে। নতুন সম্পর্ক ও বন্ধন গড়ে উঠবে এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অকৃত্রিম ভালােবাসার মধ্য দিয়ে। বাস্তবিকই এই নতুন দিগন্তের সার্থকতা সম্পর্কে অন্ত্যক্তি করা যায় না।
বাংলা দেশের অভ্যুত্থান আবার নেহরু পরিকল্পিত শান্তি ও জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতির সম্প্রসারণ ঘটাবে। ১৭ ই এপ্রিলে নতুন সরকার গঠনের পর বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত যে সকল ইস্তাহার প্রচারিত হয়েছে সেখানে শান্তি ও জোট-নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তাই এদিক থেকেও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির এলাকা সুস্পষ্টভাবে আজ বিস্তার লাভ করলাে এবং এর ফলে যুদ্ধের প্রবণতাও সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। বাংলা দেশ ঔপনিবেশিক ষড়যন্ত্রের ব্যর্থতা নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলা দেশ যেন সকল প্রকার জাতিগত বৈষম্য ও শােষণের প্রতি সূতীব্র এক ঐতিহাসিক ধিক্কার। এর ফলে অন্ততঃ এশিয়ায় মার্কিন সরকারের প্রভুত্ব বেশ কিছুটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ, সিয়েটো বা সেন্টোর গাটছড়া থেকে বাংলা দেশ বিমুক্ত অঞ্চল অনেক পরিমাণে এক স্বাধীন পরিবেশে বাংলা দেশ তার আন্তর্জাতিক জয়যাত্রা শুরু করেছে।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর, ৫ মে ১৯৭১