আমাদের মিত্র কে
মহাশয়,
প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বসফর শেষে অনেকের ধারণা হয়েছিল যে, যেসব রাষ্ট্রে তিনি সফর করে এলেন সেই সব রাষ্ট্র আর যাই করুক অন্তত এমন কিছু করবে না যার ফলে ভারত বিপদে পড়তে পারে। কিন্তু দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী প্রথমে যে রাষ্ট্রে গিয়েছিলেন সেই বেলজিয়াম রাষ্ট্রই উদ্যোগী হয়ে নিরাপত্তা পরিষদে এমন প্রস্তাব এনেছিল যে প্রস্তাবে ভারতকেই অপরাধী সাব্যস্ত করা হলাে।
বহু আগে থেকেই পাক প্রেসিডেন্ট হুমকি দিচ্ছিলেন তিনি ভারতের সঙ্গে লড়াই করবেন। তিনিই প্রথম পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারত সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ করেছেন। মাত্র দশদিন আগে তিনি ঘােষণা করেছেন দশ দিনের মধ্যে তিনি লড়াই শুরু করবেন। তারপর তিনিই প্রথম হামলা শুরু করে দিলেন। এখন রাষ্ট্রসঙ্ েপ্রস্তাব উঠেছে উভয়পক্ষের লড়াই বন্ধ করতে। অথচ যে লড়াই শুরু করবে বলে বরাবর হুমকি দিয়ে আসছিল তাকে তারা নিয়ন্ত্রিত করতে পারেনি।
আজকে দেখা যাচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের মিত্র বলতে মাত্র দুটি দেশ। আর শেষ অবধি রুশ ভেটোই ভরসা। অবশ্য ফ্রান্স ও ব্রিটেন কোনাে অজ্ঞাত কারণ-বশত ভােটদানে বিরত ছিল। মনে হয় পৃথিবীর কোনাে রাষ্ট্রই চায় না যে ভারতের কোনাে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে থাকে। যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের বড়াই করেও কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রগুলােকে ডিকটেটরসিপ বলে অবহেলা করে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গণতন্ত্র হত্যাকারী সামরিক গােষ্ঠীগুলােকেই পছন্দ করে ও মদদ দেয়।
নিরাপত্তা পরিষদে রুশ ভেটোর ফলে হয়ত ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সম্ভব হলাে না, কিন্তু জাতি পরিষদের সাধারণ অধিবেশন ডাকা হয়েছে। সেখানে কোনাে ভেটো চলে না। অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে তাতে জাতিপরিষদে ভারত নিশ্চয়ই হারবে। অবশ্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে যদি বাংলাদেশে কোনাে রাজনৈতিক মীমাংসার কথা কোনাে প্রস্তাবে না থাকে তা হলে ভারত সে প্রস্তাব মানবে না। কিন্তু ভারত কি বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বাবার গৃহীত প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করে চলতে পারবে? সে কি রাজনৈতিক দিক দিয়ে একঘরে হয়ে যাবে না? রাশিয়াই বা কতদিন একক ভাবে সহায়তা দিয়ে যেতে পারবে?
চীন কি চুপ করে থাকবে? চীন এখনও বলে চলেছে সে পাকিস্তানকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে যাবে। সামরিক দ্রব্য সম্ভার সহায়তা ছাড়া সে কি তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসবে পাকিস্তানের সাহায্যে? তখনও কি আমরা রুশ সহযােগিতা পাব? রাশিয়াও কি সংগ্রামে নামবে? তাহলে ত প্রায় বিশ্ব সগ্রাম লেগে যাবে?
মনে হচ্ছে হয়ত অতখানি গড়াবে না। কিন্তু বাংলাদেশের যুদ্ধটা যদি সত্বর শেষ না হয় তাহলে হয়ত আবার একটা জগাখিচুড়ী অবস্থায় থেকে যেতে পারে। অবশ্য আগের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভারত এবার খুবই সচেতন। চূড়ান্ত নিষ্পত্তির কমে এবার কিছুতেই রাজী হওয়া ভারতের উচিত হবে না—তাতে যত ঝুঁকি নিতে হয় তােক। এ সুযােগ আর মিলবে না।
প্রদীপ দাশগুপ্ত
কলি-৬
সূত্র: কম্পাস, ১১ই ডিসেম্বর ১৯৭১