You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.22 | বাংলাদেশের দিকে দিকে “মাই লাই” | কম্পাস - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশের দিকে দিকে “মাই লাই”

মহাশয়,
আজ ২৪শে মে ১৯৭১। প্রায় দুইমাস পূর্বে সম্পূর্ণ অতর্কিতে ইয়াহিয়ার জঙ্গী বাহিনী রাতের অন্ধকারে ঝাপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের উপর…। নির্বাচনের মাধ্যমে শতকরা ৯৮টিরও অধিক আসন লাভের অধিকারীআওয়ামী লীগ এর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। বিশ্বাসঘাতকদের দ্বারা হঠাৎ আক্রান্ত হয়ে প্রচুর রক্তের বিনিময়ে নামমাত্র অস্ত্র সম্বল করে এখনও তারা কামান-বিমান-ট্যাঙ্ক সজ্জিত হিংস্র জঙ্গী বাহিনীর সহিত লড়ছেন।
কিন্তু ইতােমধ্যে বাংলাদেশের মধ্যে পাকসেনাবাহিনী হাজার হাজার মাইলাই” সৃষ্টি করেছে। ইন্দোচীনে এক “মাইলাই” ঘটনায় যেখানে বিশ্ববিবেক গর্জে উঠেছিল, আজ বৃহৎ শক্তিদের দ্বারা হাজার হাজার মাইলাইতেও বিশ্ববিবেক আশ্চর্য রকমের নীরব। দেড় হাজার মাইল দূরবর্তী ভিন্ন ভাষী, ভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অধিকারী সংখ্যালঘু জঙ্গী শাসকরা “আভ্যন্তরীণ বিষয়ের” নামে এই প্রকার ব্যাপক গণহত্যার সুযােগ বিংশ শতাব্দীতেও পায় আজ তার পরিষ্কার পরিচয় পাওয়া গেল। আরও দেখা গেল :
১. পৃথিবীর বৃহৎ শক্তি বর্গের মানব প্রেমের অভিনয় কত অসার।
২. রাষ্ট্রসংঘ নামক প্রতিষ্ঠানটি ওদের সাজানাে তল্পী বাহক সংস্থা বই কিছুই নয়। উথান্টরা এখানে “হিজ মাস্টার্স ভয়েসে চাকুরীরত।
৩. রেডক্রস ইত্যাদির মতাে সেবা প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী ডিক্টেক্টর তাে দূরের কথা, ইয়াহিয়ার মতাে বৃহৎ শক্তি সৃষ্ট শাসকদের কাছে পর্যন্ত নত।
৪. প. পাকিস্তানের ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা নির্বিশেষে প্রায় সকলেই ইয়াহিয়া নীতি তথা ব্যাপক বাঙালি হত্যাভিযানের সমর্থক।
৫. মধ্যে মধ্যে মানবতার দোহাই দিয়ে শান্তির বাণী উচ্চারণকারী ভ্যাটিকান সিটিও প্রধানত রাজনৈতিক কারণে ফতােয়া দেন মানবতার কারণে নয়।
৬. ভারতে উল্লেখযােগ্য সংখ্যক ইয়াহিয়া সমর্থকের অবস্থিতি। মসজিদে কল্পিত চুরির অভিযােগে এরা তুলকালাম আরম্ভ করেন, আজ মসজিদে প্রার্থনারত অবস্থায় ইয়াহিয়ার বুলেট হত্যালীলায় সমর্থক বা নীরব দর্শক।
৭. গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের বড়াইকারী ভারতীয় শাসককুলের “বড়াই” বহুলাংশে কৃত্রিম। অধিকাংশ বিধানসভা ও লােকসভার সর্বসম্মত প্রস্তাব রূপায়ণে গড়িমসি ও ভীরুতার মধ্যে গণতন্ত্রানুরাগের পরিচয় অনুপস্থিত।
৮. জাতীয়তাবাদী হওয়া বর্তমান যুগে অপরাধ। শেখ মুজিব তথা তাঁর দল আন্তর্জাতিক রাজনীতি ওয়ালাদের আশ্রিত থাকলে এই একতরফা “কার্যক্রম চলতাে না।
৯. বিভিন্ন দেশীয় মৈত্রী সংসদের (বিশেষত এশিয়া আফ্রিকার) কোনাে কার্যকরী মূল্য নাই। প.বাংলা তথা ভারতে এই পর্যায়ে ব্যক্তিগত যারা সুপরিচিত। (যেমন কৃষ্ণমেনন, চাগলা, বিবেকানন্দ মুখখাপাধ্যায়।) এই সঙ্কটে তাঁদের তৎপরতাও শুধু দেশীয় বেতার ও সংবাদপত্রে সীমাবদ্ধ। নিজস্ব উদ্যমে বিদেশ গিয়ে কিছু করার প্রয়াস নাই।
দুর্বল ভারতের সমস্যা সঙ্কুল পঃবঙ্গ, এখানে শরৎকালীন মেঘ গর্জনই সার! অজয় বিজয় বাবুরা নিজেদের আসন বজায় রাখতেই প্রাণান্ত। এদিকে চালের দাম বাড়তে লেগেছে। গ্রামে গ্রামে চাল পাচারকারীদের আনাগােনার পূর্ব চিত্র আবার সমুপস্থিত। এঁরা এসব সাধারণ সমস্যারই যথাযথ মােকাবিলা যেখানে করতে অসমর্থ সেখানে ত্যাগ ও সংকল্পকেন্দ্রীক কঠোর সগ্রামে যােগ্য সাথী হওয়া সম্ভবপর নয়।
“ঘুটে পুড়ে গােবর হাসে”- এই অবস্থা চিরদিন চলবে না। কর্তব্য হীনতার অপরাধে অদূর ভবিষ্যতের মধ্যে ভারত বিশেষত পঃ বঙ্গকে চোখের জলে রক্তের মধ্যে এই নেতিবাচক কর্মধারার প্রায়শ্চিত্ত অবশ্যই করতে হবে।
জয়বাংলা।
কালীপদ রাউৎ
দাশপলসা, বীরভূম।

সূত্র: কম্পাস, ২২শে মে ১৯৭১