You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.10 | আমরা কী করতে পারি | কম্পাস - সংগ্রামের নোটবুক

আমরা কী করতে পারি

মহাশয়,
কাল সভায় আপনার বিবেচক, শান্ত কথাগুলাে শােনার আগে পর্যন্ত মনে খুব একটা উত্তেজনা জমেছিল যে কোনােমতে একবার ওদিকে গিয়ে মাটি ছুঁয়ে আসবই। তারপরে শুরু হবে কাজ। এখন বুঝতে পারছি কাজ শুরু না করে ওপারে পর্যটক হয়ে গিয়ে তীর্থ ছুঁয়ে আসার কোনও মানে নেই।
কিন্তু কী কাজ আমি বা আমরা শুরু করতে পারি যা বাংলাদেশের কাজে লাগবে? ওখানে যুদ্ধ যদি দীর্ঘকাল চলে (চলবারই কথা আর বাংলাবাহিনীর পক্ষে চলার হয়তাে প্রয়ােজনও) তাহলে বাংলাদেশে যে খাদ্য প্রয়ােজন হবে তা জুগিয়ে যাবার দায়িত্ব কি এই নিরন্নপ্রায়, পরনির্ভর পশ্চিমবাংলায় বসে আমরা পালন করতে পারব? আমরা কি আপকালীন খাদ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে পারব যাতে প্রতিটি নাগরিক মুখের গ্রাসের ভাগ দেবেন? তাতে কি কাজ হবে? বন্ধ ও বন্ধ-এ হয়রান পশ্চিম বাংলায় কী উদ্বৃত্ত আমরা উৎপন্ন করতে পেরেছি যে শ্রদ্ধার সঙ্গে তার ভাগ কাউকে দেব?
মনে পড়ে একদা মায়েরা বলতেন, কিছু না দিতে পার গতরে তাে খেটে দিতে পার। সাধারণ অর্থে বন্ধ রাজনীতির আওতায় আরাে গতর খাটানাের অভ্যাসও প্রায় ভুলে এসেছি। আমাদের কর্মোদ্যমে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে আর স্লোগান বাজীতে সীমাবদ্ধ। সেখানে শ্রম দিয়ে কাউকে সাহায্য করা সম্ভব হবে কি না জানিনে। তবু যদি কিছু সম্ভব হয়, সম্ভবত শ্রম কিংবা সেবা দিয়েই হবে, আমাদের মেয়েদের-কথা ধরুন। যারা যুদ্ধ জানেন না, রাজনীতিও জানেন না, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বজনতুল্য অধ্যাপকদের মৃত্যুতে শােক অনুভব করেন, কিছু করতে না পেরে গ্লানি অনুভব করেন তাদের পক্ষে হয়তাে সেবা দিয়ে পূর্ব কুরুক্ষেত্রের আর্ত, আহতদের কিছু সাহায্য করা সম্ভব। বিশ্বসংসারকে ধন্যবাদ, ঘরসংসার নিয়ে কোনাে বন্ধবাদী ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে ওঠেনি, আপনজনকে রােগেতাপে দুর্ঘটনায় সেবা করবার অভ্যাস ও অধিকার মেয়েদের অনেকেরই এখনাে ছেড়ে যায়নি। সামনেই গ্রীষ্মকাল। আমি পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি না। পাহাড়েও গ্রীষ্মযাপন করতে যাচ্ছি না। আমি এই সময়টুকু সীমান্তের ওপারে সেবার কাজে দিতে চাই। আমি শুনেছি ভারতীয় চিকিৎসক সংস্থা এ ব্যাপারে আমাদের মতাে স্বেচ্ছাসেবীদের কাজে লাগাতে পারেন যদি ঠিক কোথায় সেবাকেন্দ্র স্থাপন করলে যােগাযােগ সহজ হবে এবং আহত ও পীড়িত ব্যক্তিদের বহন করে আনা যাবে, এটি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত সেবাসংস্থা এঁদের জানান। আপনি যদি এ সংবাদ সংগ্রহের ভার নেন এবং কীভাবে কোথায় সেবার কাজ শুরু করা আশু প্রয়ােজন এ বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশ দেন, খুব ভালাে হয়। এর জন্য শুশ্রষার কাজ যেটুকু আরাে শিখে নেওয়া দরকার, তাও অবিলম্বে চিকিৎসা সংস্থার সাহায্যে আরম্ভ করে দেওয়া যাবে।
মানসী দাসগুপ্ত
কলি—১১

আবেদন
বাংলাদেশের (পূর্ববাংলা) স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে। পরাক্রান্ত পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় নিরস্ত্র জনগণের এ এক অসম সংগ্রাম। সামরিক দস্যু সরকার এক নিধন যজ্ঞে মেতেছে। উন্মত্ত আঘাতে সে বাঙালির নবচেতনাবােধকে ধ্বংস করে দিতে চায়।
সম যুদ্ধে আমাদের প্রতিবেশী পূর্ববাংলা, আমাদের ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। আমরা সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাদের ন্যায় সঙ্গত সগ্রামে যথাসাধ্য সাহায্য করব। ওষুধপত্র, প্যাক করা খাদ্যদ্রব্য ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন।
পান্নালাল দাশগুপ্ত
[সাহায্য প্রেরণের ঠিকানা : কম্পাস, ১৪, ক্ষুদিরাম বসু রােড, কলিকাতা-৬]

সূত্র: কম্পাস, ১০ই এপ্রিল ১৯৭১