বিপুল শরণার্থী
মহাশয়,
পাকসৈন্যের বর্বরতার ফলে প্রচুর শরণার্থী ভারতে এসেছে। তার মধ্যে পশ্চিমবাংলায় আগত শরণার্থীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। দুমাসের মধ্যেই এই সংখ্যা ৩০ লক্ষ পৌছেছে। এবং মনে হচ্ছে এই নির্যাতন পর্ব সমানে চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই এ সংখ্যা কোটিতে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। পাক সামরিক সরকার তার আর্থিক বিপর্যয়ের বােঝার কিছু অংশ ভারতের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে, যদিও নিজে সে ডুবতে বসেছে।
পশ্চিমবাংলায় ২৪ পরগণা জেলা সবচেয়ে জনবহুল জেলা। এবং এই জেলাতেই বিপুল শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। এর ফলে এ অঞ্চলে বহুবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও অন্যান্য বিপদ আসতে পারে। এই উদ্বাস্তরা সীমান্ত এলাকার ৩/৪ মাইলের মধ্যেই বাস করছেন। বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে পাক-সৈন্য শরণার্থীর পিছু ধাওয়া করে পশ্চিম বাংলার সীমান্তের মধ্যে ঢুকে পড়ছে ও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। যদি উভয় দেশের মধ্যে কোনাে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় তাহলে এঁরাই হবেন তার প্রাথমিক বলি।
আমার মনে হয় নিকট ভবিষ্যতে পাক সৈন্যের এই বর্বর অত্যাচার বন্ধ হবার সম্ভাবনা খুবই কম এবং মুক্তিফৌজ ২/৪ মাসের মধ্যে কোনাে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করতে পারবে না- যার ফলে এই শরণার্থীরা তাদের নিজেদের ঘরে ফিরে যেতে পারবে। সীমান্ত অঞ্চল থেকে এই সব শরণার্থীদের অন্যত্র দূরবর্তী অঞ্চলে স্থানান্তরিত করা হােক। এবং যদি সম্ভব হয় তাে তাদের কিছু কিছু কাজের (হস্তশিল্প গােছের) বন্দোবস্ত করা হােক যাতে তাদের নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে না থাকতে হয়।
ননী গােপাল নাথ
কলি-৭
বিচিত্র সহাবস্থান
মহাশয়,
এটা সুবিদিত যে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও রসদ সিংহলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে। সংবাদে প্রকাশ ভারতীয় সেনাবাহিনী উক্ত বিমানবন্দর পাহারা দিচ্ছে তার ফলশ্রুতি হচ্ছে যে পাকিস্তানি বাহিনী নিরাপদে পাড়ি জমাচ্ছে। সিংহলে যারা বিদ্রোহ দমন করতে গেছেন তারা পরােক্ষে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করছেন কিনা ভাববার সময় এসেছে। ধর্মাধর্ম দুই তরী পরে পা দিয়ে বাঁচে না কেউ।
চন্দন রায় চৌধুরী
কলি-১৩
সূত্র: কম্পাস, ২২শে মে ১৯৭১