১৯৭১, ৬ই মার্চ
অলীক, আশার অবসান
যারা আশা করেছিলেন যে পাকিস্তানে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দ্বারা পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রশ্নগুলাের সহজ মীমাংসা মুঠোর মধ্যে এসে যাবে আজ তারা দেখতে পারছেন যে, সমস্যা অতাে সহজ নয়। বরং সংখ্যা অল্প হলেও যেসব পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছিলেন যে, সাধারণ নির্বাচনের ফলে পাকিস্তানের চেপে রাখা সমস্যাগুলাে কেবল মাত্র বেরিয়ে আসার সুযােগ পাবে, আজ তারাই উত্তরােত্তর সঠিক প্রমাণিত হচ্ছেন। যেসব পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছিলেন যে পাকিস্তানের সত্যিকার সমস্যার রূপ দেখা দেবে নির্বাচনের পরে নির্বাচনের আগে নয়। আজ আর তাঁদের উক্তির সত্যতা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।
মনে হয় পরিস্থিতি ক্রমশ সেই দিকেই চলেছে। ভােট দিয়ে পূর্ব বাংলার স্বাধিকার সমস্যার সমাধান হয়নি শেষ পর্যন্ত এর জন্যে সংগ্রামের প্রয়ােজন হবে বলেই মনে হয়। সেই সংগ্রাম তখন কেবল স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতার জন্যেই পরিচালিত হবে। সংগ্রামের রূপ আজ অজানা কিন্তু তার আসন্নতা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যেই মৌলানা ভাসানী থেকে আতাউর রহমান পর্যন্ত বিভিন্ন কোটির নেতা প্রকাশ্য জনসভা থেকে প্রকাশ্যে স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়েছেন। যদি ইয়াহিয়া ও ভূট্টো গােষ্ঠীর সংকীর্ণ স্বার্থদুষ্ট নীতি শেখ মুজিবকেও সেই একই দাবী উত্থাপনে বাধ্য করে তাহলে, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্র যাই করুক পূর্ব পাকিস্তানিরা তাদের স্বাধিকার অর্জন করবে-ই। এর মধ্যে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হবে, তার গতি প্রস্তুতি অনুধাবনের জন্যে সীমান্তের এ পারে আমাদেরও সজাগ থাকা উচিত। যদিও আমাদের নিজেদের সমস্যায় আমরা আজ দিশেহারা’ তবু পূর্ব বাংলায় ইতিহাসের গতি সম্পর্কে অচেতন থাকা কোনক্রমেই আমাদের পক্ষে ঠিক হবে না।
অসিত ভট্টাচার্য
২৫.২.৭১
সূত্র: কম্পাস