You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.12 | ঝিকরগাছায় পাকফৌজের হামলা | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

ঝিকরগাছায় পাকফৌজের হামলা
(সীমান্ত সফররত স্টাফ রিপাের্টার)

বনগাঁ, ১১ এপ্রিল পাকহানাদাররা গত শুক্রবার ও শনিবার ঝিকরগাছায় প্রবল আক্রমণ চালিয়ে শহরটিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। ঝিকরগাছা থেকে বাস্তুচ্যুত শরণার্থীরা জানালেন হানাদাররা কৃষ্ণগঞ্জ, বারাকপুর, লাউজুনিসহ বহু গ্রামকে সম্পূর্ণভাবে জ্বালিয়ে দিয়েছে। শহরের বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হানাদাররা খাদ্য গুদাম, ব্যাংক, দোকান-পাট ইত্যাদি লুঠ করেছে। শহর ও পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দারা সীমান্তের এপারে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
বেনাপােল বাজারের মধ্যে আওয়ামী লীগের জনৈক কর্মী জানালেন : পাকহানাদাররা আজ দুপুরে সারসা পর্যন্ত এগিয়ে এসেছিল। অবশ্য কিছুক্ষণ পর পিছু হঠে নাভারনে ঘাটি করেছে। সারসা ত্যাগের পূর্বে পাকহানাদাররা স্থানীয় থানা থেকে বাঙলাদেশের পতাকা নামিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে দিয়ে যায়।
অপরদিকে, সম্ভাব্য আক্রমণে ভীত হয়ে দুপুরের পর বেনাপােলের বাসিন্দারা ভারত সীমান্তে পাড়ি জমান। ছেলেমেয়েদের হাটখােলা শরণার্থী শিবিরে পাঠিয়ে পুরুষ ও যুবকরা গ্রাম আগলে থাকেন।
সকালের দিকে বেনাপােল বাজার খােলা ছিল। দুপুরে বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলের দিকে কিছু কিছু খুলতে শুরু করে।
বেনাপােল থেকে ফেরার পথে দেখলাম, কিছু শরনার্থী ভারত সীমান্ত থেকে ফিরে আসছেন। বললেন এক বৃদ্ধ : ফিরলাম, মরতে হয়তাে গেরামেই মরবাে।
ইপিআর বাহিনী বেনাপােলে পাকসৈন্যের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরােধে প্রস্তুত হয়ে আছেন।
বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের সাহায্যার্থে সাহায্য সামগ্রী এতদিন বেনাপােল ইপিআর হেড কোয়াটারে গ্রহণ করা হচ্ছিল। আজ হরিদাসপুর চেক পােস্টের কাছে এপারের মানুষদের আটকে দেওয়া হচ্ছিল। ইছামতীর পারে মতিগঞ্জে আওয়ামী লীগের অস্থায়ী ক্যাম্পে সাহায্য সামগ্রী গ্রহণ করা হচ্ছে।
বনগাঁ হাসপাতালে ঝিকরগাছার যুদ্ধে আহত ১২ জন মুক্তিযােদ্ধাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। বলে জানা যায়।

সূত্র: কালান্তর, ১২.৪.১৯৭১