You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.04 | বিভিন্ন রণাঙ্গনের গেরিলাদের তৎপরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পাক সৈন্যদের মধ্যে বিদ্রোহ গুলিতে মেজর নিহত
বিভিন্ন রণাঙ্গনের গেরিলাদের তৎপরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ৩ জুন বাঙলাদেশের নিরীহ জনসাধারণকে নির্বিচারে হত্যা করতে বহু স্থানে পাকসৈন্যরা অস্বীকার করছেন পাকসৈন্যেদের মধ্যে কোথাও কোথাও বিদ্রোহের সংবাদ পাওয়া গেছে বলে আজ স্বাধীন বাঙলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘােষণা করা হয়েছে।
বেতারে বলা হয়েছে যে দিনাজপুরে জনৈক্য পাকিস্তানী মেজর পাকসৈন্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
প্রকাশ, দিনাজপুর থেকে সৈয়দপুরে জিপে আসার পথে ঐ মেজর জনৈক নিরীহ স্ত্রীলােককে হত্যা করতে তার আদালীকে আদেশ দিলে, আৰ্দালী তা পালন করতে অস্বীকার করেন। মেজর ক্রুদ্ধ হয়ে আদালীকে গুলি করে হত্যা করে। তখন অপর তিনজন পাক সৈন্য জিপ থেকে নেমে আসনে এবং গুলি করে মেজরকেই হত্যা করেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রচারিত সংবাদে বাঙলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গণে গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
রংপুরে গেরিলাদের হাতে ৪০১ জন পাকসৈন্য নিহত হয়েছে। রংপুরের আরাে এক স্থানে গেরিলারা অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৪ জন পাকসৈন্যকে খতম করেছেন এবং ৪টি গাড়ি দখল করেছেন। বরিশাল সেক্টরেও ২ জন পাকসৈন্য নিহত এবং ১৭ জন পাকসৈন্য আহতের সংবাদ পাওয়া গেছে। গেরিলাদের আক্রমণে চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে ১ জন পাকসৈন্য নিহত হয়েছে।
…বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার পাকসৈন্যরা চলাফেরার সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করছে।
সিলেটের অপর একটি সংবাদে প্রকাশ, সেখানকার বিভিন্ন চা বাগানে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। পাকসৈন্যরা আশপাশ থেকে নিরীহ মানুষদের ধরে এনে জোর করে বাগানের কাজে চালানাের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আগরতলা সীমান্ত থেকে
সীমান্তের ওপার থেকে পাওয়া খবরে জান গেল যে গজারিয়া, চাদহাট, রাজনগর ও ফরিদপুর অঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধারা খুবই সক্রিয়।
বগুড়া অঞ্চলে মুক্তিফৌজ গত ১ জুন একটি পাকসৈন্যের ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। একটি গাড়ি, ৩টি রেডিও সেট ও ৬টি স্টেন গান তারা দখল করেছে। একজন কমান্ডারের গাড়িও তারা দখল করেছে। বগুড়ার পশ্চিমে মুক্তিফৌজ বেশ কিছু পাক সৈন্য হত্যা করেছে।
আরেকটি পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানের একটি টহলদারী বাহিনীর ৭ জন সৈন্যকে তারা খতম করেছে এবং ২ জনকে আহত করেছে।
ফুলবাড়ি ইসলামপুর এলাকায় গেরিলা বাহিনী রেলসড়ক ধ্বংস করে পাক সৈন্যদের অগ্রগতিকে প্রতিহত করেছেন। বিবির বাজারে গেরিলা বাহিনীর আক্রমণে ১৭ জন পাকসৈন্য নিহত হয়েছেন। সিলেটের উত্তরাঞ্চলের এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গেরিলাবাহিনীর তৎপরতায় পাকসৈন্যরা খুব বেকায়দায় পড়েছে। তারা তাঁবেদার দালালদের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে এখন ঐ দালালদের উপরেই পাল্টা অত্যাচার শুরু করেছে।
ঢাকায় মুক্তিফৌজের তৎপরতা আসাম সীমান্তের কাছে কালির ঘাট থেকে বেশ বড় রকমের যুদ্ধের খবর পাওয়া গেছে। মুক্তিফৌজের ঘাঁটিকে আক্রমণের জন্য পাকবাহিনীকে ২ ব্যাটোলিয়ান সৈন্য নিয়ােগ করতে হয়েছে।
ব্ৰহ্মপুত্র নদীতে গানবােটে করে পাকসৈন্যরা টহল দিচ্ছে। পাক সৈন্যরা সিন্ধুবাড়ি ও মানিকাচরের ভারতীয় সীমানার দিকে এগােচ্ছে। পাকবাহিনীর কমাণ্ডারগণ অমরখানা অঞ্চলে তাদের অবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করলেও প্রতিরােধ বেড়েই যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরেই সৈন্যবাহিনীর ক্ষতি হচ্ছে। পচাগড়ের হাসপাতাল আহত সৈন্য ভরে গেছে।
মুক্তিফৌজ হাতিবান্দা দখল করে আছে এবং লালমনির হাট যাওয়ার পথে তারা সৈন্যদের বাধা সৃষ্টি করছে।
সর্বশেষ সংবাদে যশােহপুর অঞ্চলেও পাকবাহিনীর ক্ষয়-ক্ষতির সংবাদ পাওয়া গেছে।
সামরিক কর্তৃপক্ষ মুক্তিফৌজের মধ্যে কোনরূপ ফাটল ধরাতে ব্যর্থ হয়ে কমান্ডারগণ পূর্ববঙ্গের বাঙালীদের বেপরােয়াভাবে নিঃশেষ করে চলেছে।
খুলনায় এইভাবে ১০০ লােককে তারা হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করার জন্য ৪০ জন প্রাণ হারিয়েছে।
রংপুর অঞ্চলেও পাকবাহিনী বাঙালীদের নির্মূল করছে।
মুজিবনগর দখলের চেষ্টা ব্যর্থ
মুজিবনগর থেকে ৩ কিলােমিটার দূরে বল্লভপুরে মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাকবাহিনীর সংঘর্ষের ফলে ৩ জন সৈন্য নিহত হয়েছে। পাকবাহিনী দ্বিতীয়বার মুজিবনগর দখলের চেষ্ট করেছে। আজ পাকবাহিনী মুজিবনগর দখল করতে ব্যর্থ হয়ে মেহেরপুরে ফিরে গেছে।
কসবায় মেজর নিহত
আজ আগরতলার সীমান্তের কাছে মুক্তিফৌজ দপ্তরের খবরে জানা গেল যে, বিশ দিন আগে কসবা অঞ্চলের সলদাবাদী অঞ্চলে প্রচণ্ড সংঘর্ষ ঘটে, ফলে মুক্তিফৌজের গেরিলাদের হাতে ৩১ বালুচি রেজিমেন্টের মেজর দুরানি এবং ২৭ জন পাকসৈন্য নিহত হয়েছে।
পাকবাহিনীকে এ অঞ্চলের সদর দপ্তর থেকে চলে যেতে হয়েছে তাদের সমস্ত রসদ ও গুলিগােলা ফেলে দিয়ে।
কুমিল্লার দিকে যে ট্রেন সাঙ্গা নদী থেকে যাচ্ছিল সেটাও ফকিরহাটের কাছে ক্ষগ্রিস্ত হয়ে পড়েছে।
আর একটি অঞ্চলে মুক্তিফৌজ ৫৫ জন পাকসৈন্যকে হত্যা করেছে। কুমিল্লার ভাটপাড়ার কাছে পাকবাহিনীর একটি দল ও ২টি গাড়ী ধ্বংস হয়ে গেছে।
আখাউড়ার পূর্ব অংশে একটি রেলপুল গেরিলারা ধ্বংস করে দিয়েছে।
কসবার আরেকটি অঞ্চলে গেরিলারা একটি সামরিক যানকে চালকসহ ধ্বংস করে দিয়েছে। আখাউড়ার একজন অফিসারসহ ২০ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে। গানগর এলাকায় মুক্তিফৌজ আক্রমণ করে ৩ জন সৈন্যকে নিহত করে ৫১ জনকে আহত করে। অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে এই অঞ্চলেই একজন গেরিলা ৩ জন পাকসৈন্যকে হত্যা করেছে।

সূত্র: কালান্তর, ৪.৬.১৯৭১