You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.12 | পাক হানাদারদের উপর মুক্তিফৌজের পাল্টা আক্রমণ | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পাক হানাদারদের উপর মুক্তিফৌজের পাল্টা আক্রমণ
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ১১ জুন মুক্তিফৌজের গেরিলা তৎপরতার চট্টগ্রাম শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পাকসেনারা প্রতিদিনই নাজেহাল হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচারিত সংবাদে বলা হয়েছে যে, সম্প্রতি গেরিলা বাহিনী চট্টগ্রাম শহরের নিউ মার্কেট খাতুমগঞ্জ, চট্টেশ্বী রােড, চকবাজার, লালদিঘীর মাঠ প্রভৃতি স্থানে গ্রেনেড ও হাত বােমাসহ আক্রমণ চালায়। চকবাজারে ২ জন পাকহানাদার নিহত হয়েছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম এখন পরিত্যক্ত নগরী। দোকানপাট বন্ধ। শতকরা মাত্র ১৫ জন লোেক দৈনন্দিন কাজে যােগ দেওয়ার জন্য পথে বেরুচ্ছেন। বেলা ৩ টার পর রাস্তায় কাউকে খুব কম দেখা যায়। বন্দর এলাকায় মাত্র ৫০ জন কাজ করছে। চট্টগ্রামের হাজী এলাকায় দ্বিতীয় ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
বাগানবাজার ও আধার মানিক অঞ্চলে ২টি পৃথক পৃথক আক্রমণে গেরিলারা ৪০ জন পাকসৈন্যকে খতম করেছে।
শ্যামপুর ৮ জন, দৌলতপুর চাদিরহাটি ৪০ জন, কুমিল্লার হর্যপুর, হৃদয়পুরে ১৩ জন এবং যশাের রণাঙ্গনে ১৫ জন পাক হানাদার গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে। রামগড় থেকে গড়ের হাটের পথে ৩ জন পাক সামরিক অফিসার নিহত হয়েছে।
গেরিলা বাহিনী মুসলিম লীগের দালালসহ পাক দালালদেরও বিভিন্ন স্থানে খতম করে চলেছেন।
জাকিগঞ্জে ৪ জন দালাল নিহত এবং ১ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। মুক্তিসেনারা জাকিগঞ্জের পুলিশ স্টেশন দখল করেছেন এবং জাকিগঞ্জে পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করেছেন। কালিগঞ্জের মুসলীম লীগ চেয়ারম্যান আল মন্ডলকে মুক্তিসেনারা খতম করে দিয়েছেন। ছালগগঞ্জ বাজারে ৯ জন দালালকে বন্দী করা হয়েছে এবং বহু যুবতীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
সিলেট সেক্টরে মুক্তিফৌজের হাতে একটি রেলসেতু ধ্বংস হওয়ার সংবাদও পাওয়া গেছে।
আগরতলা থেকে ইউএনআই জানাচ্ছে : সম্প্রীতি একদল সাংবাদিক বাঙলাদেশের দক্ষিণ রণাঙ্গনে সফরে গিয়েছিলেন। মুক্তিফৌজের জনৈক মেজর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, মুক্তিফৌজ বর্তমান পাকহানাদারদের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে এবং সর্বত্র পাকসেনাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
উক্ত মেজর সাংবাদিকদের আরাে জানিয়েছেন যে, দক্ষিন রণাঙ্গনে পাঠান ও বালুচ সেনারা নিরস্ত্র বাঙলাদেশ নাগরিকদের উপর গুলি করতে অস্বীকার করায় তাদের… করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় ৪০০ জন বালুচ সেনাকে জাহাজে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত পাঠানাে হয়েছে।
চট্টগ্রাম এলাকায় পাকফৌজের পাশবিক অত্যাচার সত্ত্বেও জনসাধারণের মনােবল অটুট রয়েছে। স্ত্রীলােক ও বালিকাসহ বহু নাগরিক মুক্তিফৌজ যােগ দিচ্ছেন।
কুমিল্লার আথাড়িয়াতে গেরিলাদের আক্রমণে গত সােমবার ১০ জন পাক সেনা নিহত হয়েছে। লিয়াপাড়া ও মােরতারিদে ৩০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা দৌলতপুরে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে।
অপর একটি সংবাদে প্রকাশ, মুক্তিসেনাদের গেরিলা তৎপরতায় গত চারদিনে কুমিল্লা ও সিলেট সেক্টরে প্রায় ২০০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। কসবার সড়ক যােগাযােগ ব্যবস্থা মুক্তিফৌজের তৎপরতা ধ্বংস হয়েছে এবং সেখানকার বেশ কিছু সিনেমা হলের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। গত ৮ জুন সিলেটের কালিসামার একটি সিনেমা হলের উপর থেকে পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে মুক্তিসেনারা পুড়িয়ে দিয়েছেন।
বসিরহাট থেকে ইউএনআই প্রতিনিধি জানিয়েছেন যে, শ্রীপুরে মুক্তিফৌজের সঙ্গে মুখােমুখি সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। অবশ্য ৫ জন মুক্তিসেনাও আহত হয়েছেন।
পাঞ্জাবী ও পাঠান সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ
গত ৪ জন কুমিল্লা সেক্টরে পাকসেনাবাহিনীর পাঞ্জাবী ও পাঠানদের মধ্যে এক সংঘর্ষে ৩৫ জন নিহত হয়েছে।

সূত্র: কালান্তর, ১২.৬.১৯৭১