You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.14 | সমস্ত রণাঙ্গনে গেরিলা তৎপরতা সম্প্রসারিত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

নাজেহাল পাকসেনাদের উপর সামরিক কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস রাখতে পারছে না
সমস্ত রণাঙ্গনে গেরিলা তৎপরতা সম্প্রসারিত

মুজিবনগর, ১৩ জুলাই (ইউএনআই)- বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতা সমস্ত রণাঙ্গনেই বিস্তৃতি লাভ করেছে। বরিশাল জেলার মাধবপুরে গেরিলা তৎপরতা সবিশেষ উল্লেখযােগ্য। গত ৯ জুলাই সেখানে একাধিক সংঘর্ষে বহু পাকসেনা নিহত হয়েছে। কুষ্টিয়া এলাকায় এবং যশাের রণাঙ্গনের সারসা এলাকায় গেরিলাদের দুটি উল্লেখযােগ্য অভিযানের সংবাদ পাওয়া গেছে। বগুড়া জেলার একটি পাক-ঘাঁটির সমস্ত হানাদার সেনা গেরিলা আক্রমণে পালিয়ে গেছে। মুক্তিফৌজ এখানে গত ১০ জুলাই একটি ওয়ারলেস সেট দখল করেছেন। দিনাজপুর জেলার কয়েকটি এলাকায় গেরিলা তৎপরতার সংবাদ পাওয়া গেছে।
চিলাহটী এলাকায় জনৈক পাকচরকে মুক্তিসেনা গ্রেপ্তার করেছেন।
পাক সামরিক জুন্টার প্রত্যক্ষ মদতে গঠিত তথাকথিত শান্তি কমিটি বাঙলাদেশের হানাদার দখলিকৃত স্থানগুলিতে বে-সামরিক শাসন কায়েম করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গত কয়েকদিন রাধানগরে ২ জন, বর গ্রামে ২ জন ও লাটুতে ৫ জন পাক হানাদার গেরিলাদের হাতে নিহত হয়েছে।
লাটুতে ২ জন পাক দালাল নিহত হয়েছে। পাক সেনাদের দুধকুমার নদীর পূর্বদিককার হৃত ঘাঁটি পূর্ণদখলে চেষ্টা মুক্তিফৌজ গত ১০ জুলাই বানচাল করে দিয়েছে।
ঐ দিনে ঢাকা রণাঙ্গণের দুর্গাপুরের নিকট পানাগলি এলাকায় মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাক হানাদারদের এক উল্লেখযােগ্য সংঘর্ষ হয়ে গেছে। দক্ষিণ দুর্গাপুরের একটি রেল সেতু মুক্তিফৌজের গেরিলারা উড়িয়ে দিয়েছেন।
পাক-সামরিক সরকারের পুরস্কার ঘােষণা ক্রমাগত গেরিলা তৎপরতা নাজেহাল পাকসেনাদের উপর সামরিক কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘােষণা করেছেন যে, যারা গেরিলাদের অবস্থানের সংবাদ এবং অস্ত্রশস্ত্রাদির সংবাদ দিতে পারবে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
আগরতলা থেকে ইউএনআই জানাচ্ছে যে, গত দুদিনে মুক্তিফৌজের আক্রমণে একমাত্র পূর্ব রণাঙ্গণেই ৬০ জন পাক-হানাদার নিহত হয়েছে। গতকাল কসবা সেক্টরে শারদণ্ডিতে মুক্তিফৌজের আক্রমণে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। ফেনী ও গুণবর্তীতে দুটি রেল সেতু মুক্তিফৌজ ধ্বংস করে দিয়েছে। গত ৯ জুলাই সিলেট সেক্টরের ২ জন পাকহানাদার নিহত এবং ৯ জন আহত হয়েছে। কুমিল্লা জেলার চৌধধায়া গ্রামে মুক্তিফৌজের সঙ্গে পাক-হানাদারদের এক সংঘর্ষে ৩০ জন পাক-হানাদার নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে। বালুছারে অপর এক আক্রমণে। ১১ জন পাক-হানাদার নিহত হয়েছে। দেবীপুরে ৭ জন ও কোটেশ্বর ৬ জন পাক-হানাদার নিহত হয়েছে।
চট্টগ্রামের শােভাপুরে গত ১১ জুলাই পাকসৈন্যবাহী একটি ট্রাক মুক্তিফৌজরা ধ্বংস করে দিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ব বিবরণ এখনাে জানা যায় নি।

সূত্র: কালান্তর, ১৪.৭.১৯৭১