বাঙলাদেশ-মেঘালয় সীমান্তের পাক ঘাঁটিগুলি মুক্তিবাহিনী বিধ্বস্ত করেছে
শিলং ৩ জুলাই (ইউএনআই) বাঙলাদেশ মেঘালয় সীমান্তে পাকসেনাদের সব ঘাঁটিগুলিই মুক্তিফৌজ ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা রাস্তা ও রেলপথ উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যদের রক্ষণাত্মক ভূমি বাধা করে।
হতাশ পাকসেনাদের সঙ্গে গত তিন মাসবাপী মুখখামুখি লড়াইয়ে এখন বাঙলাদেশ মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইলসহ ঐ সীমান্ত অঞ্চলের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন সম্পূর্ণ করেছে। দখলদারী পাকসেনারা বারবার পাল্টা আক্রমণ করেও গেরিলাদের হঠাতে অক্ষম হয়েছে।
মুক্তিযােদ্ধার এই আক্রমণে সর্বাধিক সহায়তা পেয়েছেন বৃষ্টি ও অতিপরিচিত জলাভূমিগুলাের। এদের আক্রমণে দখলদারী পশ্চিম পাকিস্তানী সেনার এতাে বৃহৎ সংখ্যায় আহত হয় যে শ্রীহট্ট অসামরিক হাসপাতালটিকে সামরিক হাসপাতালে পরিণত করতে হয়। ঐ হাসপাতালেই ৪০০ আহত পাকসৈন্যকে ভর্তি করা হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর ঘাটতি পূরণে শেষ পর্যন্ত ইয়াহিয়াকে আধাসামরিক এক বাহিনীকে যুদ্ধে নিয়ােগ করতে হয় তাতেও কোনাে সফলতা তারা পায় নি। ইয়াহিয়া চক্রের মনােবল আরও বেশি করে ভেঙে পড়ার কারণ ঐ এলাকায় তাদের দাড়াবার জায়গা নেই, সৈন্যরা ছুটি পাচ্ছে না- এমন কি আমােদ প্রমােদেরও একান্ত অভাব’।
মুক্তিযােদ্ধাদের উপর প্রতিশােধ নিতে না পেরে পাকসেনারা শেষ পর্যন্ত প্রতিহিংসা মেটাতে গ্রামবাসীদেরই বেছে নেয়। অসামরিক লােকজনের উপর কাফু কড়া প্রয়ােগ করছে এবং বেয়নেট উচিয়ে তাদের বাধ্য করছে পাকসেনাদের জন্য ট্রেঞ্চ কাটতে।
ঐ অঞ্চলের মূল শিল্প চা বাগানগুলিতে এখন অচলাবস্থা। মাত্র তিনটি বাগানে কাজ হচ্ছে। কারণ চট ও কাঠ শিল্প সম্পূর্ণ অচল।
বাঙলাদেশের দিনাজপুরেও মুক্তিফৌজ পাকিস্তানী সৈন্য ঘাটি গুলােতে আক্রমণ চালিয়ে দুটি হালকা মেশিনগান ও কিছু বুলেট হস্তগত করে। জলপাইগুড়ির অমরখানা ও অপরদিকে পাকাছাগড়ে মুক্তিবাহিনী প্রহরারত পাকসেনাদের একটি দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। অমর খানা ভজনপুর রােডের একটি সেতুও তারা উড়িয়ে দেয়।
ভারতীয় গ্রামে পাকগুলি
কলকাতায় প্রাপ্ত অপর এক সংবাদে বলা হয়, পাকিস্তানী সেনারা পশ্চিম দিনাজপুরের রায়গঞ্জের কাছে কুকরীধর গ্রামে গতকাল মেশিনগানের গুলি চালায়। অবশ্য ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী পাল্টা জবাব দিয়ে পাকিস্তানীদের হঠাতে বাধ্য করে।
সূত্র: কালান্তর, ৪.৭.১৯৭১