মুক্তিযােদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে বাঙলাদেশের মুক্তাঞ্চল ক্রমশই বিস্তৃত হচ্ছে
মুজিবনগর, ২২ জুলাই (ইউএনআই)- মুক্তিযােদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে বাঙলাদেশে মুক্ত অঞ্চলের সীমা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং এখন ঐ সমস্ত মুক্তাঞ্চলের বাড়ির ছাদে ছাদে বাঙলাদেশের পতাকা উড়ছে।
এখানে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেল যে বিভিন্ন অঞ্চরে গেরিলাযােদ্ধারা ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছেন এবং যােগাযােগ ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছেন।
গত ১৫ জুলাই খালিসপুরে পাকসেনাদের অবস্থানের উপর এক আচমকা আঘাত হেনে গেরিলারা প্রচুর অস্ত্র ও গােলাবারুদ সংগ্রহ করেছে। এই আক্রমণের সামনে পাকসেনারা দাঁড়াতে না পেরে দ্রুত পালিয়ে যায়।
রংপুর রণাঙ্গনে স্বাধীনতা যােদ্ধারা তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলিতে নিজেদের অবস্থানকে আরাে সংহত করে তুলছেন এবং মুক্তাঞ্চলকে প্রসারিত করে চলছেন। গত ১৮ এবং ১৯ জুলাই রাতে বারাখাতা এবং চৌইনদী অঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে দুটি তীব্র সংঘর্ষ হয়। চৌইনদী অঞ্চল থেকে পাকসেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
কুমিল্লার কাছে গেরিলারা গত ১৮ জুলাই পাকসেনাদের একটি গাড়িকে আটক করে অস্ত্র ও গােলাবারুদ দখল করে নেন।
ময়মনসিং অঞ্চলে গেরিলারা ১৭ ও ১৮ জুলাই টেলিফোন যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেন।
করিমগঞ্জের কাছে গেরিলারা ১২ জন পাক সেনাকে খতম করেন এবং ১৬ জুলাই ওয়াহাগপুর অঞ্চলে তারা কয়েকজন পাকসেনাকে নিহত ও ৬ জনকে আহত করেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ রণাঙ্গনে গেরিলাদের হাতে একজন জুনিয়র কমিশনড অফিসার ও একজন পুলিশ সেপাইসহ ১২ জনের বেশী পাকসৈন্য নিহত হয়েছে।
আর একটি সংবাদে জানা গেল, আরাে ১৩ জন ইপিআর মুক্তি যােদ্ধাদের সঙ্গে যােগ দিয়েছেন। ৫ জন পাক গুপ্তচরও জুলাই-এর প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযােদ্ধাদের সঙ্গে যােগদান করেছেন।
গত ১৩ জুলাই মুক্তিযােদ্ধারা সাতক্ষিরার দক্ষিণ পূর্বে পাকসেনাদের একটি ফাঁড়ি আক্রমণ করেন। মেহেরপুর এবং মহেশকান্দায়ও আক্রমণ চলে।
লুনিগ্রাম অঞ্চলে একজন আওয়ামী লীগ সমর্থকের বাড়িতে পাকসেনারা অগ্নিসংযােগ করায় পরের দিন মুক্তি যােদ্ধারা আচমকা এক আক্রমণে গয়ানের পুলিশ থানার ৩ জন পুলিশ সিপাহকে নিহত করেন ও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেন। এখানে তারা প্রচুর অস্ত্র দখল করেন।
সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িতে পাকসেনারা অগ্নিসংযােগ করায় কয়েকজন পাক দালালকে নিহত করে মুক্তিযােদ্ধারা প্রতিশােধ নিয়েছেন।
সূত্র: কালান্তর, ২৩.৭.১৯৭১