You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.26 | ২৫ হাজার শত্রুসেনা খতম : মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা লড়াই তীব্রতর | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ছ’মাস অতিক্রান্ত
২৫ হাজার শত্রুসেনা খতম : মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলা লড়াই তীব্রতর
(স্টাফ রিপোের্টার)

কলকাতা, ২৫, সেপ্টেম্বর বাঙলাদেশের সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের আজ ছয় মাস অতিক্রান্ত হল। এই কয়মাসে মুক্তিযােদ্ধারা ২৫ হাজার শত্রুসেনাকে খতম করেছেন। উড়িয়ে দিছেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের জাহাজ। পুড়িয়ে দিয়েছেন শত্রু ব্যারাক। জল-জঙ্গলে খালে বিলে, মাঠে প্রান্তরে, শহর-গ্রামে বীর মুক্তিযােদ্ধারা তীব্র গেরিলা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে রয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, আওয়ামী লীগ প্রভৃতি দলের বীর কর্মীরা। অনেক কর্মীই শহীদ হয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের ছয়মাস পূর্তি উপলক্ষ্যে বাঙলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং সৈন্যবাহিনীর সর্বাধিনায়ক কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানী আজ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এক ভাষণ দেন। ২৬ মার্চ থেকে ইয়াহিয়া সরকার যে ধ্বংসলীলা শুরু করেছে শ্রী ওসমানী তার বিবরণ দেন। শ্রী ইসলাম বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনাে প্রশ্নই বিবেচিত হবে না।
বাঙলাদেশের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মােজাফফর) যে ইস্তাহার বাংলাদেশ থেকে বিলি করেছেন, তাতে বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার জন্য সংগ্রামী পার্টিগুলাের উপদেষ্টা কমিটির কথা বিবৃত করে বলেছেন, বাঙলাদেশের সমগ্র জনতা আজ জীবন পণ করে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত। তাই উপদেষ্টা কমিটির বিশ্বাস ও দৃঢ় অভিমত এই যে বাঙলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনই হচ্ছে বাঙলাদেশ সমস্যার একমাত্র সমাধান; পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম বাঙলাদেশ গঠন ছাড়া বাঙলাদেশ সমস্যার বিকল্প কোন সমাধান নাই।”
শ্রী ওসমান তাঁর ভাষণে দেশবাসীর উদ্দেশ্য বলেছেন, “আমাদের এই যুদ্ধ ভারতীয় যুদ্ধ, এই যুদ্ধে আমরা জাতিধর্ম ও রাজনৈতিক মতভেদ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ।”
তিনি বলেছেন, “আপনাদের দলমত নির্বিশেষে সকল পার্থক্য ভুলে প্রাণপন চেষ্টা করতে হবে, পরিকল্পনা প্রস্তুতি নিতে হবে, শত্রুর উপর আঘাত হানতে হবে এবং শত্রুকে ধ্বংস না করা পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হব না। মনে রাখবেন, শত্রু আমাদের মধ্যে অনৈক্য ও গৃহবিবাদ সৃষ্টি করবে। তারা আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিরােধ এবং আমাদের মধ্যে অথবা আমাদের মিত্র রাষ্ট্রের সঙ্গে ভুল বােঝাবুঝি সৃষ্টির চেষ্টা করবে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।” তিনি বলেছেন, “আমাদের প্রাণপ্রিয় এবং প্রেরণা সৃষ্টিকারী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে বিনা শর্তে মুক্তি, সাড়ে সাত কোটি মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং বাঙলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার সৈন্য অপসারণ ছাড়া কোনাে মীমাংসাই হতে পারে না।”

সূত্র: কালান্তর, ২৬.৯.১৯৭১