ভাষা আন্দোলনে পাবনা
ভাষা আন্দোলনের তাপে উত্তপ্ত জেলা
পাবনা রাজনীতিসচেতন জেলা; শহরের রাজনৈতিক অবস্থানও ভিন্ন নয়। তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত পাবনায় আন্দোলনের নানা ধারায় শ্রমজীবীদের ভূমিকাও উল্লেখযােগ্য। তা ছাড়া পাবনার ঐতিহাসিক খ্যাতি কৃষক আন্দোলন ও কৃষক বিদ্রোহে, সেই উনিশ শতক থেকেই। এসব ঘটনা সমাজে নিঃশব্দ রাজনৈতিক প্রভাব ও সচেতনতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। হয়তাে এসব কারণে পাবনায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সর্বাত্মক চরিত্র অর্জন করে, সূচনা ১৯৪৮ থেকে। যেমন দেখা গেছে রাজশাহী বা যশােরের মতাে একাধিক জেলা শহরে।
পাবনা শুধু রাজনীতিসচেতন শহরই নয়, একই সঙ্গে সাহিত্য- সংস্কৃতিমনস্ক শহরও বটে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর অন্যান্য অঞ্চলের মতােই পাবনাতেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের দাপট সত্ত্বেও রাজনৈতিক অঙ্গনে কমিউনিস্ট পার্টি, রেডিকেল ডেমােক্রেটিক পার্টি, জাতীয় কংগ্রেস, আওয়ামী মুসলিম লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, তমদ্দুন মজলিস, পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ, জনকৃষ্টি পরিষদ, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রলীগ প্রভৃতি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও ছাত্র যুবসংগঠন বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় ছিল, কম আর বেশি।
স্বভাবতই ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলা ভাষাবিষয়ক প্রস্তাব নাকচ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় ছাত্রদের মধ্যে যে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু হয় তার সক্রিয় প্রভাব লক্ষ করা যায় পাবনায়। এর একটি বড় উৎস স্থানীয় এডওয়ার্ড কলেজের রাজনীতিসচেতন ছাত্র এবং জেলা স্কুলসহ অন্যান্য শিক্ষায়তন।
ভাষাবিষয়ক প্রতিবাদী অৎপরতায় উল্লিখিত বিভিন্ন মতাদর্শের সংগঠনগুলো অংশগ্রহণ করে এবং তার শুরু ফেব্রুয়ারির শেষ দিকেই। গঠিত হয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদ। সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুসের প্রতিবেদন মতে, ( ভোরের কাগজ ) ‘উক্ত সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক জেলা যুবলীগের সম্পাদক (সম্ভবত উদারপন্থী) দেওয়ান লুৎফর রহমান এবং ২ যুগ্ন আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান ও আমিনুল ইসলাম বাদশা। একই বিবরণ পেশ করেছেন গবেষক ড. এম আবদুল আলীমও।’ (পাবনায় ভাষা আন্দোলন)।
সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শুরু হয় ভাষাবিষয়ক তৎপরতার উদ্দেশ্য নিয়ে বৈঠক, আলাপ-আলােচনা। সিদ্ধান্ত হয় ২৯ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালনের। এ উপলক্ষে ২৭ ফেব্রুয়ারি বৈঠক বিস্তারিত কর্মসূচি নির্ধারণের জন। হরতাল, সমাবেশ, মিছিলের কর্মসূচি সফল করতে নামাত্রিক তৎপরতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যেমন পােস্টার, ইশতেহার, বিভিন্ন সূত্রে প্রচার, খণ্ড মিছিল ইত্যাদি। এ পর্যায়ে গণতান্ত্রিক যুবলীগের অন্যতম প্রধান নেতা রাজশাহীর আতাউর রহমান পাবনায় আসেন আন্দোলনে প্রেরণা জোগাতে। আন্দোলন সংগঠনে স্কুল-কলেজের ছাত্রসমাজ থেকে বিপুল সাড়া মেলে। এ সাভ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।
শুরু হয় কর্মতৎপরতা। শহরের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটা, ব্যাপক হারে ইশতেহার বিলি, ছােট শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যােগাযােগ (যেমন বিড়ি শ্রমিক, সুতা শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক ইত্যাদি)। হরতলের জন্য সূচিত সাংগঠনিক কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে চলতে থাকে। অবস্থাদৃষ্টে জেলা প্রশাসক মূল নেতাদের সঙ্গে তার বাসভবনে আলােচনায় বসেন। কিন্তু নেতারা হরতাল বন্ধ করতে রাজি না হওয়ায় প্রশাসন শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। সেই সঙ্গে সরকার ও মুসলিম লীগ নেতাদের পক্ষে চলে হরতালবিরােধী ও বাংলা ভাষাবিরােধী কার্যক্রম।
উদ্যম হারায়নি ছাত্র-যুবারা। ২৯ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে শুরু হয় এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ছাত্রদের চারজনার মিছিল, কিছুটা দূরত্ব রেখে। কিন্ত এই কৌশল টেকেনি ছাত্র মিছিলে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণে। মিছিল আদালতপাড়ার দিকে এগােতে থাকে। এ পর্যায়ে পুলিশের বাধা এবং গ্রেপ্তার সত্ত্বেও মিছিলের যাত্রা অব্যাহত থাকে। বিভিন্ন দিক থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে মূল মিছিলের সঙ্গে যােগ দেয়। পাবনা সেদিন মিছিলের শহর। অনেকটা শহর ঢাকার ২২ ফেব্রুয়ারির (১৯৫২) মতােই। দিনভর মিছিল আর স্লোগান- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবি হরফে লেখা চলবে না’, ‘পুলিশি জুলুম বন্ধ করাে’ ইত্যাদি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নেতৃস্থানীয়দের গ্রেপ্তার করা হয়। ইতিমধ্যে বিশালকায় বিক্ষুব্ধ মিছিল মহকুমা প্রশাসকের অফিস ঘেরাও করে ইতিপূর্বে আটক বন্দীদের মুক্ত করে। মুকুল ফৌজের সদস্যরাও মিছিলে যােগ দেয়।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ১-৩ মার্চ হরতাল আহ্বান করা হয়। চলে ছাত্র-জনতার মিছিল এবং হরতাল। প্রতিবাদে অংশ নেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে। মিছিলে-স্লোগানে বন্দিমুক্তি একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এবার আঘাত আসে মূল নেতাদের ওপর। আটক হন আমিনুল ইসলাম বাদশা, মাহবুবুর রহমান খান, লুৎফর রহমান ও প্রণতিকুমার রায়।
মার্চের প্রথম সপ্তাহের হরতাল ও মিছিল একই ধারায় চলেছে। দিনভর স্লোগান আর শহরের রাস্তাগুলােতে মিছিলের দৃপ্ত পদচারণ। যানবাহন, দোকানপাট বন্ধ। ছাত্রদের অভিভাবকেরাও আন্দোলনের পক্ষে তাদের সমর্থন জানান। এককথায় সর্বাত্মক হরতাল ও মিছিল-স্লোগানের আন্দোলনে শহর কার্যত অচল। ইতিমধ্যে ১০ মার্চ গ্রেপ্তার হন আমজাদ হােসেন, রওশন জান চৌধুত্রী, মােখলেস উদ্দিন মােক্তার ও প্রদীপ রায়।
প্রশাসনের দমননীতি উপেক্ষা করে রাজনৈতিক অঙ্গনের যারা এ আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় সমর্থন জুগিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য সৈয়দ ওয়ারেছ আলী, আনছার আলী, আবুল ফজল, ইদ্রিছ আলী, শামসুল ইসলাম, মতিয়ার রহমান, সুনীল চৌধুরী, সেলিনা বানু প্রমুখ।
ঢাকার ১১ মার্চের আন্দোলনের সঙ্গে পাবনার একই সময়ের আন্দোলন মূলত রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি সত্ত্বেও ব্যতিক্রমী এ অর্থে যে এখানে আন্দোলন চলেছে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে। ঢাকার স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি তেমন কোনাে প্রভাব ফেলেনি। এবং ঢাকায় আন্দোলন স্থগিত করা সত্ত্বেও আন্দোলন অব্যাহত থেকেইে মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে বন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে। প্রসঙ্গত ড. আলীম উল্লেখ করেছেন আবদুল মতিনের পাবনা সফরের কথা।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য পাবনায় ১৯৪৮-এর ভাষা আন্দোলন ওই সময় পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এর ধারাবাহিকতা বিচ্ছিন্নভাবে হলেও অব্যাহত থেকেছে ১৯৪১ সালেও। আর সে তৎপরতার কারণে এ সময় গ্রেপ্তার হন কমিউনিস্ট নেতা প্রসাদ রায় ও লিলি চক্রবর্তী। এ সময় কমিউনিস্ট নেতা-কর্মীদের ওপর তরতর স্টিমরােলার চলে বিশেষ প্রশাসনিক নির্দেশে। বাদ পড়ে না প্রগতিবাদী সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠন। উদাহরণ সাংস্কৃতিক সংগঠন জনকৃষ্টি পরিষদ। পরিবর্তে ১৯৫০-এ গড়ে ওঠে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান শিখা সংঘ, প্রধানত রণেশ মৈত্র ও আবদুল মতীনের (ভাষামতিন নন) প্রচেষ্টায়।
১৯৪৮ এবং পরবর্তী সময়ে সংঘটিত ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এবং ঐতিহ্যবাহী রাজনীতির প্রভাবে ১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন তথা একুশের আন্দোলন স্বতঃস্ফুর্ত প্রেরণায় আত্মপ্রকাশ করে। এবারও আন্দোলনের মূল সংগঠক ছাত্র-যুবসমাজ। আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র এডওয়ার্ড কলেজ।
১৯৪৮-এর ভাষা আন্দোলনে পাবনায় প্রাধান্য ছিল প্রগতিবাদী ছাত্র- যুব নেতৃত্বের। সঙ্গে শ্রমজীবী সংগঠনের সমর্থন। তখন এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রদের মধ্যেও বাম নেতৃত্বের প্রাধান্য। ১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারিতে একুশের আন্দোলনে এডওয়ার্ড কলেজে নেতৃত্ব ছিল প্রধানত পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের (আওয়ামী লীগ) হাতে। অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা ছিলেন আবদুল মমিন তালুকদার।
স্থানীয় প্রশাসন, সম্ভবত ঢাকার অনুসরণে আন্দোলন বন্ধ করতে ২০ ফেব্রুয়ারি অনির্দিষ্টকালের জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। এ পরিস্থিতিতে সে রাতেই ছাত্রনেতাদের জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় চারজন করে মিছিল করার। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে এডওয়ার্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন শিক্ষায়তন থেকে কয়েক হাজার ছাত্র সমবেত হয়। এখান থেকেই মিছিলের যাত্রা শুরু।
নেতৃত্বে এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্রনেতা আবদুল মােমিন তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন নঈমুল ইসলাম, রণেশ মৈত্র, আবদুল মতীন প্রমুখ। পুলিশও প্রস্তুত। তারা যথারীতি একপর্যায়ে মিছিলের গতিরােধ ও বাধার সৃষ্টি করে। এ পর্যায়ে মিছিল বিভক্ত হলেও শেষ পর্যন্ত ছাত্ররা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আবার সচল হয়। কালেক্টরেট ভবনের দিকে তাদের যাত্রা। কিন্তু বাণী সিনেমা হলের সামনে মিছিলটি আবার পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। কিন্তু মিছিলের চলা বন্ধ হয়নি।
সেদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহতের খবর পাবনায় এসে পৌছায় ছাত্রসমাজসহ সারা শহরে এ ঘটনায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ছাত্রনেতৃত্বের সিদ্ধান্তে পূর্ণ দিবস হরতাল ঘােষণা করা হয় এবং তা যথাযথভাবে পালিত হয়। বিকেলে কলেজ প্রাঙ্গণে জনসভা অনুষ্ঠিত হয় এবং যথারীতি রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে ও পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাব আরবি হরফে বাংলা লেখার নীতির বিরুদ্ধেও।
পাবনার ভাষা আন্দোলন শুধু পাবনা শহরে সীমাবদ্ধ ছিল না। মূলত ঢাকায় গুলিবর্ষণের প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলন জেলার বিভিন্ন এলাকায়, এমনকি থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। যেমন ভাঙ্গুড়া, ফুলবাড়ী, চাটমােহর, শাহজাদপুর প্রভূতি অঞ্চলে। এসব ঘটনার কিছু কিছু প্রতিবেদন দৈনিক আজাদ-এ প্রকাশিত, যদিও কিছুটা দেরিতে।
একুশের আন্দোলন গােটা প্রদেশে কতটা ব্যাপকতায় বিস্তার লাভ করেছিল তার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন জেলার গ্রাম-গ্রামান্তরে ছাত্রদের তৎপরতার ঘটনায়। ব্যতিক্রম নয় পাবনা জেলা। ছােট একটি উদাহরণে তা স্পষ্ট হবে। সৈনিক পত্রিকার ৯ মার্চের প্রকাশিত একটি খবর :
‘২২শে ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জ মহকুমার অন্তর্গত ফুলবাড়ী গ্রামে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে গ্রামবাসীদের এক মহতী সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাহাতে অন্যান্য পার্শ্ববর্তী গ্রামের লােকও উপস্থিত ছিলেন। এ সভার একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কেবলমাত্র শহরে শহরে সীমাবদ্ধ না রাখিয়া পূর্ব পাকিস্তানের গ্রামে গ্রামে ছড়াইয়া দেওয়া উচিত।’ এম আবদুল আলীম বিশেষ সূত্রে উল্লেখ করেছেন ভাসানীর পাবনা সফর ছাত্রদের কীভাবে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছিল (পাবনায় ভাষা আন্দোলন)।
১৯৫৩ সালে পাবনা শহরে পরিপূর্ণ আবেগ নিয়ে ভাষাশহীদ দিবস পালিত হয়। মূলত ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে। তাতে যােগ দেন শহরবাসী মানুষ। সে বছর একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার ব্যতিক্রমী তৎপরতায় মুসলিম লীগের প্রাদেশিক সম্মেলন বিপর্যয়ের মুখে পড়ে (১৫ ফেব্রুয়ারি)। স্লোগান ওঠে, ‘নুরুল আমিন ফিরে যাও’। এ কার্যক্রমের পরিকল্পনায় ছিলেন ছাত্রনেতা আবদুল মতিন, কামাল লােহানী, রণেশ মৈত্র, হাবীবুর রহমান, আমজাদ হােসেন, আলতাফ হােসেন, শামসুজ্জোহা, মশিউর রহমান প্রমুখ।
একদিকে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদী মিছিল, অন্যদিকে পুলিশ ও সরকারি মদদপুষ্ট গুন্ডা বাহিনী, পরস্পরের মধ্যকার সংঘাত পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছিল। সার্কিট হাউসে নুরুল আমিনসহ শীর্ষ মুসলিম লীগ নেতাদের আতঙ্কিত প্রহর গােনা। মফস্বল শহরে এসে প্রবল বিরােধিতার মুখােমুখি হয়ে। সে এক অভাবিত ঘটনা।
অবস্থা ভিন্ন ছিল না ২৪ ফেব্রুয়ারির দিনটিতেও। দৈনিক আজাদ-এর ২৮ ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, এদিন ছাত্র-জনতার দুই মাইল দীর্ঘ একটি মিছিল শহরের প্রধান সড়কগুলাে প্রদক্ষিণ করে। সেদিন শহরে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। ছাত্র-জনতার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় মুসলিম লীগ ও বণিক সমিতির নেতাদের যােগ দিতে দেখা যায়। স্বভাবতই আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হয়।
পাবনা শহরে শহীদদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনার তৈরি হয় ১৯৫৪ সালে সর্বদলীয় ছাত্রদের উদ্যোগে। এই মহতী কর্মের নেতৃত্বে ছিলেন সৈয়দ রেজা কাদের, আমজাদ হােসেন, আলতাফ হােসেন, আজাহার আলী, আলাউদ্দীন আহমেদ, রণেশ মৈত্র, আবদুল মতিন, কামাল লােহানী, খালিদ হাসান, ক্যাপ্টেন আজিজুল হক, বজলুর রহমান, শামসুদ্দোহা প্রমুখ।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী এডওয়ার্ড কলেজ প্রাঙ্গণের শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলে। ১৯৭৪ সালে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মিত হয় পাবনায়।
সূত্র: ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া – আহমদ রফিক