You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.03 | সেপ্টেম্বরের শেষে বাঙলাদেশ মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক অভিযান : বহু পাকসেনা নিহত | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

সেপ্টেম্বরের শেষে বাঙলাদেশ মুক্তিবাহিনীর ব্যাপক অভিযান : বহু পাকসেনা নিহত
(স্টাফ রিপাের্টার)

মুজিবনগর, ২ অক্টোবর বাঙলাদেশ সৈন্য বাহিনীর সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত সংবাদে জানা যায় যে, মুক্তিবাহিনী সেপ্টেম্বরের শেষে এক ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে এবং বহু পাকসেনা খতম করে দেয়।
গত সপ্তাহে খুলনা জেলার সাতক্ষিরা মহকুমার কাকডাঙ্গা, মাদরা এবং বােয়াশিয়া এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাক হানাদারদের বিভিন্ন ঘাটিতে আক্রমণ চালায় এবং দু’শর উপর পাকসেনা খতম করে।
মুক্তিবাহিনী উখসা অঞ্চলে ৭ জন পাকসেনা হত্যা করে এবং ২টি চীনা রাইফেল তাদের হস্তগত হয়। যশাের জেলার রঘুনাথপুর, সারহা এলাকায় একজন অফিসার সহ ১১ জন পাক হানাদার নিহত হয়।
রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী সেক্টরে মুক্তিবাহিনী শত্রু ঘাঁটির উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। ফলে বােয়ালিয়া ঘাঁটি থেকে পাকহানাদাররা পেছনে হটে যায়।
২৭ সেপ্টেম্বরই মুক্তিবাহিনী পার্বতীপুর-বদরগঞ্জ রেলপথ উড়িয়ে দেয় এবং ফলে এলাকার যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এর আগে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা সলিপুকার, পাকুরিয়াঘাট, বালানুর এবং আনঠোষা এলাকায় পাকসেনাদের ঘাঁটিগুলােতে ইতস্ততঃ অভিযান চালাতে থাকে। ফলে ২১ জন রাজাকার সহ ৩২ জন পাকসেনা নিহত হয়।
২৪ সেপ্টেম্বর চিলাহাটিতে পাকহানাদার ঘাটির উপর মুক্তিবাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এই অতর্কিত আক্রমণের মুখে ৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৫২ জন আহত হয়।
জাবাইয়ের কাছে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে এক সংঘর্ষে ৭ পাকহানাদার খতম হয়। বগুব জেলার হিলি পাচবিবি অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ২ জন রাজাকার ও ৬ জন পাক হানাদারকে হত্যা করে। এই একই দিনে কারিয়ার কাছে গেরিলাদের আক্রমণে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
ময়মনসিংহ-শ্রীহট্ট
২৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও অঞ্চলে পাকিস্তানী হানাদারদের উপর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যােদ্ধারা অতর্কিতে হামলা চালায় এবং ২ জন পাকসেনাকে খতম করে দেয়।
পরদিন গেরিলারা গফরগাঁও থানা আক্রমণ করে। এই আক্রমণের ফলে ২ জন থানা পুলিশ নিহত হয়। রহিমপর সেতুর কাছে প্রহরারত একজন পাকসেনা গেরিলাদের হাতে মারা যায়।
মােহনগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা পাকসেনা ও রাজাকারদের কে যুক্ত টহলদারী দলের উপর আক্রমণ পরিচালনা করে এবং ৩ জন পাকসেনা ও ৪ জন রাজাকারকে খতম করে।
দাসগ্রাম এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ১০ জন শতু বাংটিয়াতেও ৪ জন পাকসেনাকে খতম করা হয়। মুক্তিবাহিনী মােহাব্বতপুর এবং বক্সিগঞ্জ কামালপুর অঞ্চলে পাকসেনাদের অপেক্ষায় গােপনে অবস্থান করতে থাকে এবং অতর্কিতে হামলা চালায়। ফলে ৯ জন পাকহানাদার নিহত হয়।
২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর সাগবনল ও কামারলে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী হানাদারদের ঘাটিতে প্রচণ্ডভাবে আক্রমণ চালায় এবং ১৫ জন পাকসেনা হত্যা করে। ২৫ সেপ্টেম্বর ধাওতলিতে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর কাঠালপুরের কাছে মুক্তিবাহিনী ২টি পাকসামরিক গাড়ি এবং ২টি ফেরী নৌকা ধ্বংস করে দেয়।
২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বর শ্রীহট্ট জেলার করিমপুর, হাণ্ডাটিয়া, চাতলাপুর এবং ময়মনসিংহ জেলার কেন্দুয়া থানা এলাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ব্যাপকভাবে আক্রমণ পরিচালনা করে। এই আক্রমণের ফলে ১৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। এর আগেই মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ময়মনসিংহ শহরের কাছে ৫ জন শত্রু সৈন্য মারা পড়ে।
ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরে গত ২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কাইমপুরে পাকসেনাদের ঘাঁটির উপর আক্রমণ চালায়। ফলে ৮ জন পাকসেনা নিহত ও ৭ জন আহত হয়।
এই দিনই এখানে ২টি শত্রু কবলিত নৌকা বিধ্বস্ত করে দেওয়া হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর ও অঞ্জলপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ১১ জন পাকসেনা মারা যায়। মনােহরপুর এবং কোটেশ্বর-এর কাছে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা তাদের গােপন অবস্থান থেকে ৪ জন পাকসেনা খতম করে।
এর আগের দিন গেরিলাদের আক্রমণে ফেনী বেলনিয়াম মধ্যবর্তী রেলসেতু বিধ্বস্থ হয়।
২৫ সেপ্টেম্বর আধারমানিক-এর কাছে মুক্তিবাহিনী তাদের গােপন অবস্থান থেকে পাকসেনাদের ঘাটিতে গােলাবর্ষণ করতে থাকে। এই গােলাগুলিতে ৭ জন পাকসেনা খতম হয়।
বিলম্বে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানা যায় যে, মুক্তিবাহিনী ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেলপথে মাইন বিস্ফোরণ ঘটায়। এই বিস্ফোরণের ফলে ৩টি বগীসহ একটি ইঞ্জিন বিধ্বস্ত হয় এবং ৪ জন পাকসেনা মারা পড়ে।

সূত্র: কালান্তর, ৩.১০.১৯৭১